শামসুল আলম:
তরুণ বয়সে নৌকার টিকিটে এমপি হয়েই আলোচনায় আসনে পাবনা-৫ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্স। পরের বছরেই অর্থাৎ ২০১০ সালে পাবনার তৎকালীন ডিসি-এসপি-এডিসিদের লাঞ্ছিত করে পাবনা থেকে বিতারিত করেই দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি করেন। এরপর থেকে আর পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি, বনে যান পাবনার অঘোষিত আওয়ামী গডফাদার। মুক্তিযুদ্ধের উপ-সর্বাধিনায়ক এ কে খন্দকারের একটি বই লেখাকে কেন্দ্র করে তাকে বেইমান অ্যাখ্যা করে তার নামের ‘খন্দকার’ পদবী পরিত্যাগ করেন। ২০১৮ সালে পাবনায় এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পাবনার আর কোনো উন্নয়ন না করতে বলায়- পাবনাবাসীর সমালোচনার শিকার হোন। দারুন আমান স্ট্রাস্টসহ একাধিক জায়গায় তার হুকুমে ইসলামী মাহফিল বন্ধ হয়েছে। বিতর্কিত নির্বাচনের টানা ৪ বারের সাংসদ প্রিন্স পুরো জেলার একক রাজনৈতিক আধিপত্য ও নিয়ন্ত্রণে গড়েন তোলেন ‘কেষ্টপুর আ.লীগ’ নামের সাম্রাজ্য। নামে-বেনামে দেশে-বিদেশে গড়ে তুলেছেন হাজারো কোটি টাকার অঢেল সম্পদ! গত ৪ আগস্ট ছাত্র-জনতার ওপর প্রকাশ্যে গুলিবর্ষণ করে শেষবারের মতো আলোচনায় আসেন। এরপর সরকার পতনের পর এবং গুলিবষর্ণের মামলার আসামি হওয়ায় গা ঢাকা দিয়েছেন। গা ঢাকা দিলেও হোয়াটসআপসহ নানা মাধ্যমে সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করছেন তিনি। ফলে আওয়ামী গডফাদার প্রিন্স এখনও পাবনাবাসীর আতঙ্ক হয়ে উঠেছে। ইতোমধ্যেই তার বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধ্যান শুরু হয়েছে এবং দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞাও দিয়েছেন আদালত।
শূন্য থেকে হাজার কোটি টাকার সম্পদ:
২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় ৩১ লাখ ৮ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদ ছিল কিন্তু অস্থাবর কোনো সম্পদ ছিল না প্রিন্সের, আর মাত্র ৬ লাখ ৯৪ হাজার টাকার ব্যবসা ছিল। কিন্তু দশম, একাদশ ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় উল্লেখ করেন শত কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের পাহাড়। ব্যাংক ও শেয়ারবাজারে কয়েক কোটি টাকার বিনিয়োগ, জমি দেখানো হয় প্রায় ৫০ বিঘা, ঢাকার ধানমন্ডিতে ফ্লাট, দানসুত্রে পাওয়া ২টি বাড়িসহ কয়েক কোটি টাকার সম্পদ।
তবে দেশের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র বলছে- হলফানামায় সম্পদের পরিমাণ কম দেখানো হয়েছে। বেনামে সেই সম্পদ ছাড়িয়েছে হাজার কোটি টাকা! পাবনা শহরসহ সদর উপজেলার সাদুল্লাহপুর, দাপুনিয়া, হেমায়েতপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে প্রিন্সের শতাধিক বিঘা জমি রয়েছে। হেমায়াতেপুরের চর ভবানিপুরের ৫ হাজার বিঘা জমির ওপর প্যারামাউন্ট ও ডায়নামিক সোলার প্রজেক্ট নির্মাণের সময় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। পাবনা বিসিকে বেশ কয়েকটি মিল-কারখানা রয়েছে। ঢাকায় একাধিক ফ্ল্যাট বাড়ি রয়েছে। বিভিন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগ রয়েছে। এছাড়াও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সদস্য হওয়ার সুবাদে নিউইয়র্কসহ বিদেশেও সম্পদ গড়েছেন বলে গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রগুলো জানিয়েছে।
ছাত্র-জনতার ওপর হামলার পরিকল্পনা ও গুলিবর্ষণ:
আওয়ামী ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখন পাবনার রাজপথ কাঁপাচ্ছিলেন ছাত্র-জনতা। গত ৪ আগস্ট হাজার হাজার ছাত্র-জনতা পাবনার ট্রাফিক মোড়ে অবস্থান নেন। হঠাৎ করেই সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ভাঁড়ারার সাবেক চেয়ারম্যান আবু সাঈদ খান গুলি চালান ছাত্র-জনতার ওপর। ঘটনাস্থলেই দুই শিক্ষার্থী নিহত হোন এবং বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হোন। এরপরই ছাত্র-জনতার প্রতিরোধ গড়ে তুললে এমপি প্রিন্সের নেতৃত্বে দ্বিতীয় দফায় গুলিবর্ষণ করা হয়। সরাসরি এমপি প্রিন্সের গুলিবর্ষণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়।
সরকার পতনের পর আবু সাঈদ খানের সহযোগি সোহেল খান গ্রেফতার হলে তিনি স্বীকার করেন- এমপি গোলাম ফারুক প্রিন্সের নির্দেশেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার গণঅবস্থান কর্মসূচিতে গুলিবর্ষণ করেছিলেন আবু সাঈদ খান ও তার সহযোগীরা। আগেরদিন ৩ আগস্ট রাতেই জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে পরিকল্পনা করা হয় এই হামলার, তাতে নির্দেশনা দেন প্রিন্স।
এবিষয়ে পাবনার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক বরকতুল্লাহ ফাহাদ বলেন, ‘এমপি নিজে অস্ত্র হাতে নিয়ে গুলি করেছে। সে একজন জনপ্রতিনিধি (এমপি) হিসেবে ছাত্রদের সঙ্গে এমন নিকৃষ্ট আচরণ করতে পারবে তা পাবনাবাসী কল্পনাও করেনি, সে জনপ্রতিনিধির নামের কলঙ্ক। প্রিন্সসহ দোষীদের আমরা বিচার চাই।’
লাঞ্চিত করে ডিসি-এসপি-এডিসিকে পাবনা থেকে বিতারিত:
২০১০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর পাবনা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অফিস সহকারী পদে নিয়োগ পরীক্ষাচলাকালে হামলা চালায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা। তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিজয় ভূষন পাল, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আব্দুল মামুনসহ ১৫ জনকে পিটিয়ে আহত করা হয়। এসময় বিভাগীয় কমিশনার অফিসের ১টি গাড়ি ও জেলা প্রশাসনের ৪টি গাড়িসহ পরীক্ষা কেন্দ্রে ভাংচুর করা হয়। পরীক্ষার খাতা ছিঁড়ে ফেলে এবং অগ্নিসংযোগ করা হয়।
প্রশাসনে আওয়ামী লীগের নগ্ন হস্তক্ষেপের ঘটনা দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠে। এই ঘটনার নেপথ্যে উঠে আসেন গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্স ও কেষ্টপুর বাহিনীর নাম। প্রিন্স নিজেই ডিসিকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। ডিসি অফিস ঘেরাও, সড়ক অবরোধ, কর্মবিরতিসহ ঘটনায় দুই সপ্তাহ ধরে চলে প্রশাসন ও ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে টানাপোড়ানে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর প্রশাসনিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম পাবনায় এসে ঘটনার রেশ টানলেও শেষ পর্যন্ত পাবনা ছাড়তে বাধ্য হোন তৎকালীন জেলা প্রশাসক ড. এএফএম মঞ্জুর কাদির ও পুলিশ সুপার জামিল আহমেদসহ প্রশাসনের শীর্ষ প্রায় সব কর্মকর্তা। যাওয়ার আগে এক মতবিনিময় কান্নায় ভেঙে পড়েন জেলা প্রশাসক ড. এএফএম মঞ্জুর কাদির, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সাইদুর রহমান ও ম্যাজিষ্ট্রেট ইসরাত জাহান।
তৎকালীন জেলা প্রশাসক ও বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব ড. এএফএম মঞ্জুর কাদির বলেন, ‘তখনকার পরিবেশ ও এখনকার পরিবেশ অনেক পাল্টেছে, তাই এসব নিয়ে আর কি বলার আছে, সবাই সব জানে। কিন্তু আমি চাই দেশে এমন ঘটনা যেন আর ঘটুক। আমি বলতে পারি সেসময় আমি কোনো অন্যায় করিনি, অন্যায়ের সঙ্গে আপোসও করেনি।’
মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি দখল:
২০১৯ সালে তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পদোন্নতিপ্রাপ্ত এসপি) গৌতম কুমার বিশ্বাসকে ব্যবহার করে ‘কেষ্টপুর বাহিনী’ দিয়ে ফিল্মি স্টাইলে প্রয়াত এক মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীর তিনতলা বাড়ি দখল করেন এমপি প্রিন্স। এবিষয়ে অভিযোগ দেয়ার পর সেই মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে মাদক দিয়ে পুলিশে ধরিয়া দেয়া হয় এবং পরিবারকে পাবনা থেকে বিতারিত করা হয়। দখলে বাধা না দিতে এসপি রফিকুল ইসলামকে ব্যবহার করেন স্বয়ং সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্স। দখলের সময় মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী ও ছেলেকে হাতুড়িপেটা করে অস্ত্রের মুখে অন্যত্র জিম্মি করা হয়। দখল করতে গিয়ে দুর্বৃত্তরা পুরো বাড়িতে ভয়াবহ তাণ্ডব চালায়।
এবিষয়ে ‘এমপি-এসপির সহযোগিতায় মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি দখল’ শিরোনামে একটি জাতীয় শীর্ষ গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে আবারও সমালোচনার ঝড় ওঠে প্রিন্সের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগীরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর অভিযোগ দিলে তার পিএস মাসুদ (ভিপি মাসুদ), তার বিশেষ ক্যাডার হিসেবে পরিচিত হাজী ফারুক, জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি (সদ্য সাবেক মেয়র) শরীফ উদ্দিন প্রধানসহ ২শ জনের নামে মামলা নিতে বাধ্য হয় পুলিশ। বেশকিছুদিন অসুস্থ থাকার পর সম্প্রতি মুক্তিযোদ্ধার সেই স্ত্রী ও সন্তান মারা গেছেন।
এবিষয়ে প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধার আরেক সন্তান বিপ্লব বলেন, ‘সেই ঘটনার মামলা এখনো নি¤œ আদালতে চলছে। ওই ঘটনার পর আমার মা ও ভাই স্ট্রোক করে মারা যান। এই ঘটনার আমি ন্যায় বিচার এখনো পাইনি।’
কেষ্টপুর সাম্রাজ্যের অধিপতি:
শহরের কৃষ্ণপুর ও গোবিন্দ এলাকা নিয়ে গঠিত পাবনার পৌর এলাকার ১ নং ওয়ার্ড। সদরের সংসদ সদস্য, সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র, জেলা সাধারণ সম্পাদক, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ আওয়ামী লীগসহ অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ পদধারীরাই এই ওয়ার্ডের বাসিন্দা। নামে কৃষ্ণপুর-গোবিন্দা হলেও ‘কেষ্টপুর আওয়ামী লীগ’ নামেই পুরো জেলায় পরিচিত ছিল। ‘কেষ্টপুর আওয়ামী লীগ’ এর আশির্বাদ ছাড়া কেউ কোনো পদ-পদবি পেতেন না। জেলার অন্যান্য অঞ্চলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ছিলেন কোনঠাসা। যদিও গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ঘিরে কেষ্টপুর আওয়ামী লীগে ভাঙন দেখা দেয়। এই সাম্রাজ্যের মুল অধিপতি ছিলেন গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্স। এতোই একক অধিপতি ছিলেন যে স্বয়ং রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন চুপ্পু এবং সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুকেও পাত্তা দিতেন না!
গত সংসদ নির্বাচনে সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর ছেলে আরশাদ আদনান রনি সদরে আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী হওয়ার পর থেকেই গোলাম ফারুক প্রিন্স রাষ্ট্রপতিকেও তোয়াক্কা করতে না। রাষ্ট্রপতির সর্বশেষ পাবনার দুটি সফরে তিনি কোনো অনুষ্ঠানেই যোগ না দিয়ে শিষ্টাচারবহির্ভূত কাজ করে দলের ভেতরে চরম বিতর্কের সৃষ্টি করেন। রাষ্ট্রপতির প্রথম সফরে ঢাকা-পাবনার ট্রেন চলাচলের ঘোষণা দিলেও প্রিন্সের বাধায় সফল হতে পারেননি। আর শামসুল হক টুকুকে জেলায় কোনঠাসা করে রেখেছিলেন। টুকুর জেলে বেড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়ায় সেই কাউন্সিলে যোগ এবং অনুমোদন দেয়নি জেলা আওয়ামী লীগ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেষ্টপুর আওয়ামী লীগের কোনঠাসা এক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘তাদের (কেষ্টপুর আওয়ামী লীগ) কথাই শেষ সব। শহরে বসে তারা জেলার রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতে চাইতেন। তৃণমূলের ত্যাগী নেতাদের মুল্যায়ন ছিল না বলেই তো আজকে এই পরিস্থিতি দেখতে হচ্ছে।’
টেন্ডার ও কমিশন বাণিজ্য:
গণপূর্ত বিভাগ, এলজিইডি, সড়ক বিভাগসহ জেলার সরকারি অফিসগুলোতে টেন্ডার বাণিজ্যেও অঘোষিত গডফাদার ছিলেন গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্স। আলোচিত ঠিকাদারের সাজিন এন্টারপ্রাইজ, সাইফুল আলম স্বপন চৌধুরীর ব্রুব কনস্ট্রাকশন, সাবেক মেয়র শরিফ উদ্দিন প্রধানের ঐশী কনস্ট্রাকশন, আওয়ামী লীগ নেতা আনিসুজ্জামান দোলনের আইয়াজ কনস্ট্রাকশন, সোহেল হাসান শাহীনের প্রগতি এন্টারপ্রাইজ, ফারুক হোসেনের মা-বাবা কনস্ট্রাকশনসহ নানা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে গড়ে তুলেছিলেন টেন্ডার বাণিজ্যের রাজত্ব। প্রতিটি টেন্ডারে তাকে দিতে হতো ১০ শতাংশ কমিশন।
বিভিন্ন কাজের দরপত্র নিজের আয়ত্তে নিতে সেই কেষ্টপুর বাহিনীকে ব্যবহার করতেন তিনি। পছন্দ মতো ঠিকাদার কাজ না পাওয়ায় ২০২১ সালে ৬ জুন পাবনা গণপূর্ত বিভাগে বেশকিছু আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয় প্রিন্সের সেই কেষ্টপুর বাহিনী! সেই ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে আবারও সমালোচনার ঝড় ওঠে। এছাড়াও তার পছন্দ মতো কাজ না করায় অনেক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থা গুটিয়ে চলে যেতে হয়েছে।
প্রিন্সের কমিশন বাণিজ্যের শিকার ভুক্তভোগী জিনাত আলী জিন্নাহ ঠিকাদার বলেন, ‘এমপি (প্রিন্স) সাহেবের কাছ থেকে আমি তিনটা কাজ নিয়েছিলাম। এমপি সাহেব কারো পক্ষে বলে দিলে অন্য কেউ সেই টেন্ডারে টেন্ডার দিতো না। পরে কাজ নেয়ার পরে এমপি সাহেবকে একটা অনারিয়াম দিত সবাই। এমপি সাহেব বেশিভাগ কাজ ছিল গণপূর্ত বিভাগে। এমপি সাহেবে সাথে থাকলে অন্য কারোর চান্স থাকতো না।’
দুদকের অনুসন্ধান এবং দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা:
ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাৎপূর্বক তার নিজ নামে ও পরিবারের সদস্যদের নামে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে প্রিন্সের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে গত ১৫ সেপ্টেম্বর গণমাধ্যমকে জানান দুদকের উপপরিচালক মো. আকতারুল ইসলাম। গত ২২ অক্টোবর দুদকের আবেদনে গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্সের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ ভারপ্রাপ্ত বিচারক মোহাম্মদ ইব্রাহিম মিয়া।
এখনো আতঙ্ক:
ছাত্র-জনতার হামলা এবং সরকার পতনের পরও গোলাম ফারুক প্রিন্স নিজ বাড়িতেই ছিলেন। কিন্তু শিক্ষার্থী হত্যার মামলা দায়েরের পর গা ঢাকা দিয়েছেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে- প্রিন্স তার কয়েকজন সহযোগি নিয়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে এখন ভারতে অবস্থান করছেন। অবৈধভাবে ভারতে পালিয়ে যেতে পাবনার তখনকার প্রশাসনের একাধিক ব্যক্তি এবং প্রভাবশালী এক রাজনৈতিক নেতা সার্বিক সহযোগিতা করেন। পালিয়ে গেলেও হোয়াটসআপসহ নানা মাধ্যমে এখনো সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ করছেন প্রিন্স, ফলে পাবনাবাসীর মধ্যে এখনো আতঙ্ক বিরাজ করছে।
প্রিন্সসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের গ্রেফতারের বিষয়ে পাবনা জেলা বিএনপির আহবায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, ‘যা (ছাত্র-জনতার গণঅভুত্থান) ঘটে গেছে তা পৃথিবীর ইতিহাসে একটা নৃশংসতম ঘটনা, হাজার হাজার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এই অপরাধের সঙ্গে জড়িত, কিন্তু দুই-একছাড়া তারা গ্রেফতার হচ্ছেন না কেন? এর কারণ হলো প্রশাসনের রয়ে গেছে আগের লোকই। তারা আওয়ামী লীগের সময় চাকরি পেয়েছে, প্রমোশন পেয়েছে, বাস্তবতা হলো তারা আওয়ামী লীগের লোক। পুলিশ পারে না এমন কথা ইতিহাসে নেই।’
গত ৪ আগস্ট থেকেই তার মুঠোফোনসহ সকল যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ রয়েছে। তার অবস্থানও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ফলে এবিষয়ে তার মন্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।