মিথ্যা মাদক মামলা দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগে রূপপুর পুলিশ ফাঁড়ির এসআই ও এএসআইয়ের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন



পাবনার ঈশ্বরদীতে নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের (আরএনপিপি) সাব-ঠিকাদারী কোম্পানি রইনওয়ার্ল্ডের সুপার ভাইজার পদ থেকে সরানোর জন্য কোম্পানিটির অপর এক কর্মচারী ও দোভাষী মোঃ মোসরিক তাসবিন এবং গাড়ি চালক মোঃ মুকুল মন্ডল মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে রূপপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই কান্তি কুমার মোদক ও এএসআই জিয়াউর হকের যোগসাজসে মাদক মামলায় ফাঁসানো হয়েছে বলে অভিযোগ করে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভুক্তভোগী মোঃ কামরুল হাসান (৩২)।

সোমবার ১৬ জুলাই বিকালে ঈশ্বরদী স্টেশন রোডস্থ দৈনিক স্বতঃকণ্ঠ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী।

এর আগে গত ১৪ জুলাই/২৪ তারিখে রূপপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই কান্তি কুমার মোদক ও এএসআই জিয়াউর হকের যোগসাজসে তাকে মিথ্যা মাদক মামলায় ফাঁসানো হয়েছে দাবী করে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তি দাবী করে পাবনা পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ভুক্তভোগী।

ভুক্তভোগী মোঃ কামরুল হাসান পাবনা সদর থানার দাপুনিয়া ইউনিয়নের মাধপুরের (গুলনাহার শিশু হাসপাতাল সংলগ্ন) কুমুদপুর গ্রামের নুর মোহাম্মাদের ছেলে।


সংবাদ সম্মেলনে কামরুল হাসান বলেন, তিনি আরএনপিপি'র রইনওয়ার্ল্ড কোম্পানিতে সুপার ভাইজার পদে চাকরি করতেন। গত ২০ এপ্রিল/২৪ দুপুরে ঈশ্বরদীর দাশুড়িয়া নতুন গোলচত্তরের সুজন মেকারের দোকানে মেরামতের জন্য রাখা কোম্পানির দুটি গাড়ির নিকট নিজের মোটরসাইকেল রেখে অফিসের গাড়িতে করে অফিসের কাজে চলে যান। বেশ কিছুক্ষণ পর কোম্পানির গাড়িচালক রাহাত আলীর মোবাইল ফোন থেকে রূপপুর পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই জিয়াউর হক তার রেখে যাওয়া মোটরসাইকেলটিতে তল্লাশি করা হবে জানিয়ে তাকে দাশুড়িয়াতে আসতে বলেন। এরপর তিনি ঘটনাস্থলে গেলে গাড়ি পরিষ্কারের টুকরো কাপড় রাখার স্থান থেকে পুটলিতে জড়ানো অবস্থায় দুই পাতা হেরোইন ও ৬ পিচ ইয়াবা পাওয়া গেছে জানিয়ে তাকে গ্রেফতার করে রূপপুর পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যান। 


এরপর মামলা না দেওয়ার জন্য রূপপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ কান্তি কুমার মোদক এক লাখ টাকা দাবী করেন। তখন তার বড় ভাই মাসুদ রানা গরু বিক্রয়ের ৭০ হাজার টাকা নিয়ে রইনওয়ার্ল্ডের সাবপ্লাইয়ার অর্ক কোম্পানির ম্যানেজার মিলন মালিথার মাধ্যমে এসআই কান্তি কুমার মোদককে ৭০হাজার টাকা প্রদান করেন। এরপরও গাড়ির সাইড কভারে পাওয়া ইয়াবা ও হেরোইন তার শরীর থেকে উদ্ধার হয়েছে উল্লেখ করে মাদক মামলা দিয়ে জেল হাজতে প্রেরণ করেন।


কামরুলের দাবী পরিকল্পিতভাবে কেউ মেকারের দোকানে রেখে যাওয়া মোটরসাইকেলে হেরোইন ও ইয়াবা রেখে চক্রান্ত করে তাকে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।


এসআই কান্তি কুমার মোদকের চাহিদা মোতাবেক ৭০ হাজার টাকা দিয়েও মিথ্যা মাদক মামলা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়নি অভিযোগ করে ভুক্তভোগী বলেন, এই মিথ্যা মামলা দিয়ে তার কর্মময়, সামাজিক ও পারিবারিক জীবনকে ধ্বংস করা হয়েছে। ঘটনার সুষ্টু তদন্ত করে ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তি দাবী করছি। সত্য উৎঘাটনের মাধ্যমে মাদকের মিথ্যা মামলা থেকে মুক্তি ও হারানো চাকরী ফিরে পেতে পাবনা পুলিশ সুপারের নিকট লিখিত অভিযোগ জানিয়েছি।


ঘটনার সময়ে উপস্থিত মামলার প্রধান স্বাক্ষী রইন ওয়ার্ল্ড কোম্পানির গাড়ি চালক মোঃ রাহাত আলী জানান, দুই পুরিয়া হেরোইন ও ৬ পিচ ইয়াবা রূপপুর পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই জিয়াউর হক পার্কিং করে রাখা মোটরসাইকেলের সাইড কভার থেকে উদ্ধার করলো। আর মামলায় দেখিয়েছে সেগুলো তার শরীর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। 


রইন ওয়ার্ল্ড কোম্পানির গাড়ি চালক মোঃ মুকুল মন্ডল জানান, তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। মাদক দিয়ে কামরুল হাসানকে ফাঁসানোর বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। 


রইনওয়ার্ল্ড কোম্পানির কর্মচারী মোঃ মোসরিক তাসবিন জানান,  মাদকসহ কামরুলের আটক হওয়ার ঘটনা কোম্পানির সবাই জানে। তাকে তিনিই চাকরি দিয়েছিলেন। তাই মাদকসহ তার আটক ও মামলার পেছনে তার কোন হাত নেই বলে দাবী করেন তিনি।


ভুক্তভোগি কামরুল হাসানের বড় ভাই মাসুদ রানা জানান, ৭০ হাজার টাকা নিয়ে রইনওয়ার্ল্ডের সাবপ্লাইয়ার অর্ক কোম্পানির ম্যানেজার মিলন মালিথার মাধ্যমে এসআই কান্তি কুমার মোদককে ৭০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে।


অর্ক কোম্পানির ম্যানেজার মিলন মালিথা জানান, পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ কান্তি কুমার মোদকের সঙ্গে কামরুলের ভাই মাসুদ রানা টাকা পয়সা নিয়ে কথা বলতে দেখে তিনি ঘটনাস্থল থেকে চলে যান। কান্তি কুমারের সঙ্গে কোন টাকা লেনদেন করেননি বলে জানান তিনি।


রূপপুর পুলিশ ফাঁড়ি থেকে পাবনা ঢালারচর পুলিশ ক্যাম্পে বদলী হওয়া এএসআই জিয়াউর হক জানান,  এ বিষয়ে মোবাইলে কোন তথ্য দেওয়া যাবে না। 


রূপপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই কান্তি কুমার মোদক জানান, রইনওয়ার্ল্ড কোম্পানির সুপারভাইজার কামরুল হাসানকে মাদক দিয়ে ফাঁসানো হয়নি। তার বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসার প্রমাণ রয়েছে। মাদক মামলা না দেওয়ার জন্য কামরুলের ভাই মাসুদ রানার নিকট থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।


পাবনা পুলিশ সুপার মোঃ আঃ আহাদ জানান, ভুক্তভোগী কামরুল হাসান লিখিতভাবে রূপপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই কান্তি কুমার মোদক ও এএসআই জিয়াউর হকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগটি তদন্তের জন্য ঈশ্বরদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার গোস্বামীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্তে প্রমাণিত হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 


এদিকে স্থানীয় প্রতিবেশী শিক্ষক, মেম্বার ও চেয়ারম্যান ঘটনার বিষয়ে জানান, কামরুলের তিন ভাই রূপপুর প্রকল্পে চাকরি করে। কামরুলের বাবা নূর মোহাম্মাদ বাজারে সবজি বিক্রয় করে ছেলেদের কষ্ট করে বড় করেছেন। পরিবারের সবাই কঠোর পরিশ্রমী। তাদের দ্বারা মাদক সেবন, কিংবা ক্রয়-বিক্রয় সম্ভব বলে মনে হয় না। তাকে কোন কারণে ফাঁসানো হয়ে থাকতে পারে। এলাকায় তাদের পরিবারটি ভাল বলেই সবাই জানে। হঠাৎ করে তার গাড়িতে মাদক পাও

য়ার বিষয়টি সাজানো বলে মনে হচ্ছে।