২৪ ঘণ্টায় পাবনার ৭ থানার মামলায় বিএনপির ৬ শতাধিক নেতাকর্মী আসামি

পাবনার সাতটি উপজেলা ও থানা এলাকার বিভিন্ন স্থানে একরাতে ১৮টি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। সেইসাথে ঘটনাস্থল থেকে অন্তত ২০টি ককটেল জব্দ করেছে পুলিশ। আর এসব ঘটনায় জেলা ও উপজেলা বিএনপির প্রায় ৬শ’ নেতাকর্মীকে আসামী করে ৭টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) রাতে ও বুধবার (২৩ নভেম্বর) দুপুরে মামলাগুলো দায়ের করা হয়। কোনো মামলায় পুলিশ আবার কোনো মামলায় আওয়ামীলীগ নেতা বাদী হয়েছেন। তবে এসব মামলায় এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। আর ককটেল বিস্ফোরণ, ককটেল উদ্ধার ও মামলাগুলোকে ‘সাজানো ও গায়েবী মামলা’ হিসেবে দাবি করেছে বিএনপি। তারা বলছে, আগামী ৩ ডিসেম্বর বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশ বানচাল করার ষড়যন্ত্র এইসব মামলা।

ভাঙ্গুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার রাত সোয়া নয়টার দিকে ভাঙ্গুড়া পৌর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা বিশ^কাপ ফুটবলের খেলা দেখার সময় হঠাৎ করে চারটি ককটেল বিস্ফোরণ হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে চারটি অবিস্ফোরিত ককটেল জব্দ করে। এ ঘটনায় উপজেলা আওয়ামীলীগ সদস্য আব্দুল জব্বার বাদি হয়ে মামলা করেছেন। মামলায় উপজেলা বিএনপির আহবায়ক রফিকুল ইসলাম, যুগ্ম আহবায়ক শহীদুল ইসলাম, পৌর বিএনপির সদস্য সাইদুল ইসলাম বুরুজসহ নয়জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৬০/৭০ জনকে আসামী করা হয়েছে।

ঈশ্বরদী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হাদিউল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে আটটার দিকে আলহাজ্ব টেক্সাইল মিলস হাইস্কুলে নাশকতার উদ্দেশ্যে বিএনপির নেতাকর্মীরা বৈঠক করছিলেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে বিএনপির নেতাকর্মীরা দু’টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায়। এ সময় ছয়টি অবিস্ফোরিত ককটেল জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় থানার এসআই শীতল কুমার বাদি হয়ে উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আজমল হোসেন সুজন সহ নয়জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১৫০/১৬০ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেছেন।

চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জালাল উদ্দিন জানান, পৌর সদরের আফ্রাতপাড়ায় উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ডায়মন্ড ফুড এন্ড বেভারেজের মালিক হাসাদুল ইসলাম হীরার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ভেতরে মঙ্গলবার রাতে বিএনপি নেতাকর্মীরা গোপন বৈঠক করছিলেন। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে অভিযান চালালে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা দু’টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে অবিস্ফোরিত অবস্থায় চারটি ককটেল জব্দ করে। এ ঘটনায় নাশকতার অভিযোগ এনে পুলিশ বিএনপি নেতা হাসাদুল ইসলাম হীরাসহ ৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৯০ জন বিএনপি নেতা কর্মীকে আসামী করে মামলা দায়ের করেছে।

আটঘরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, মঙ্গলবার রাত সোয়া ১১টার দিকে পৌর সদরের কড়ইতলা মোড়ে দলীয় অফিসে বসে খেলা দেখছিলেন আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা। এ সময় হঠাৎ করে অফিসের পাশে একটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি অবিস্ফোরিত ককটেল জব্দ করে। এ ঘটনায় পৌর আওয়ামীলীগের যুগ্ম আহবায়ক জাহিদুল ইসলাম মুকুল বাদি হয়ে বুধবার দুপুরে একটি মামলা করেছেন। মামলায় বিএনপির দশজন নেতার নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৪০/৫০ জনকে আসামী করা হয়েছে।

সুজানগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হান্নান বলেন, নতুন কমিটি গঠন নিয়ে স্থানীয় বিএনপির দুই গ্রæপের মধ্যে বিরোধ ও শক্তি প্রদর্শণের মহড়া চলছে কয়েকদিন ধরে। পৌর সদরের ভবানীপুর মোড়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে বিএনপির নেতাকর্মীরা গোপন বৈঠক করছিল। সেখানে ৩টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি অবিস্ফোরিত ককটেল জব্দ করে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

সাঁথিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম জানান, উপজেলার ধোপাদহ ইউনিয়নের হাপানিয়া গ্রামে মঙ্গলবার রাত আটটার দিকে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা বৈঠক করার সময় ৩টি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি অবিস্ফোরিত ককটেল জব্দ করে। এ ঘটনায় আওয়ামীলীগ নেতা মনছুর আলী বাদি হয়ে বিএনপির ছয়জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৬০/৭০ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেছেন।

আতাইকুলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান বলেন, মঙ্গলবার রাতে আতাইকুলায় একটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটেছে। এ সময় একটি অবিস্ফোরিত ককটেল জব্দ করেছে পুলিশ। মামলার প্রস্তুতি চলছে।

এর আগে গত ২১ নভেম্বর পাবনা শহরের খেয়াঘাট সড়ক এলাকায় দু’টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে জনমনে আতঙ্ক ও নাশকতা সৃষ্টির অপচেষ্টার অভিযোগে জেলা বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের সাতজনের নাম উল্লেখসহ ১৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে সদর থানা পুলিশ। এ ঘটনায় দু’টি ককটেল জব্দ করে পুলিশ।

এ বিষয়ে পাবনা জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মাসুদ খন্দকার বলেন, এসব ঘটনা স্থানীয় আওয়ামীলীগ ও পুলিশের সাজানো নাটক। মিথ্যা মামলা দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের হয়রানি করার ষড়যন্ত্রের অংশ। আগামী ৩ ডিসেম্বর বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশে যাতে বিএনপির নেতাকর্মীরা অংশ নিতে না পারে, সেজন্যই এসব ঘটনা সাজানো হয়েছে আর নাশকতার মামলা দেয়া হচ্ছে। তারপরও মনে করি বিএনপির সমাবেশ সফল হবে। মিথ্যা গায়েবী মামলা দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের আর দমানো যাবে না।

বিএনপির অভিযোগ সম্পূর্ন মিথ্যা দাবি করে পাবনা জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি রেজাউল রহিম লাল বলেন, নিজেদের বাঁচাতে বিএনপি আবোল তাবোল কথা বলছেন। তারা নিজেরাই ককটেল বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে। তারা দেশব্যাপী আবারও নাশকতার চেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা করছে। কোনো কুল কিনারা না পেয়ে আওয়ামীলীগের ওপরে দায় চাপানোর চেষ্টা করছে।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) মাসুদ আলম বলেন, ঘটনা যা ঘটছে, তার আলোকে পুলিশ ব্যবস্থা গ্রহণ করছে, মামলা নিচ্ছে। এখন এটা নিয়ে কে কি বলছে তা দেখার বিষয় নয়। পুলিশ জনগণের জানমাল রক্ষা আর নিরাপত্তায় তাদের দায়িত্ব পালন করছে। সকল ধরনের নাশকতা প্রতিরোধে পুলিশ তৎপর রয়েছে।

error: কাজ হবি নানে ভাই। কপি-টপি বন্ধ