সাংবাদিকদের আমার সাথে আর কোনও কাজ নেই: পাবিপ্রবি উপাচার্য

নিয়োগ বাণিজ্যসহ শতাধিক দুর্নীতির অভিযোগে অপসারণের দাবিতে চলমান আন্দোলন ও কর্মকর্তাদের অবরোধ-তালা দেয়ার আভাস পেয়ে ক্যাম্পাস ছেড়েছেন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম রোস্তম আলী। শুক্রবার দিবাগত গভীর রাতে তিনি ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক ও কর্মকর্তা জানান, গত ১০ ফেব্রুয়ারি উপাচার্যকে অবরুদ্ধ এবং গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বিক্ষোভের পর ক্যাম্পাসে এক ধরনের চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। এরপর কর্মকর্তারা তালা ঝুলিয়ে কর্মসূচির ঘোষণা দিলে অবস্থার অবনতির কথা ভেবে উপাচার্য গোপনে ক্যাম্পাস ত্যাগ করেছেন। অন্যতম সহযোগী ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন প্রফেসর সাইফুল ইসলামকে সঙ্গে করে উপাচার্য এখন ঢাকাস্থ পাবিপ্রবির গেস্ট হাউজে অবস্থান করছেন বলেও তারা জানান।

এ ব্যাপারে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম রোস্তম আলীর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সাংবাদিক পরিচয় দেয়া হলে বলেন, ‘কি কাজ? আমার সাথে আর কোনও কাজ নেই’। এরপরই ফোন কেটে দেন। পরে একাধিবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

কর্মকর্তাদের আন্দোলনের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বিজন কুমার ব্রহ্ম বলেন, ‘সকালে কর্মকর্তাদের বিভিন্ন দাবি তুলে ধরে আমার অফিসে তালা দিয়েছেন। ফলে আমার অফিসিয়াল কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তবে আমি ক্যাম্পাসে অবস্থান করছি।’

গোপনে উপাচার্যের ক্যাম্পাস ত্যাগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমিও শুনেছি উপাচার্য স্যার ক্যাম্পাস থেকে চলে গেছেন। কিন্তু আমি সঠিকভাবে জানি না। উনি এই মুহুর্তে ক্যাম্পাসে নেই এটা জানি। আমার সাথে স্যারে কোনও যোগাযোগ হয়নি।’

আগামী ৬ মার্চ উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম রোস্তম আলীর মেয়াদ শেষ। ২০১৮ সালের ৭ মার্চ নিয়োগ পাওয়া বিতর্কিত এই উপাচার্যের বিরুদ্ধে শতাধিক অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, অস্বচ্ছতার অভিযোগ উঠেছে। মেয়াদ শেষের দিকে তিনি সেকশন অফিসার পদে নিজের আপন ভাতিজি কানিজ ফাতেমা ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ওলিউল্লাহসহ ১০২টি পদে নানা অনিয়মে নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিদায়ের আগে নিয়োগপ্রাপ্তদের চূড়ান্ত করতে নানাভাবে চেষ্টা করছেন।

আর নিয়োগ বাতিলসহ নানা দাবিতে আন্দোলন করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এর আগে গত ১০ ফেব্রুয়ারি রিজেন্ট বোর্ডের সভাকে কেন্দ্র করে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে শিক্ষক-কর্মকর্তারা। দিনব্যাপী চরম উত্তেজনার পর রিজেন্ট বোর্ডের সভা স্থগিত করে বোর্ডের সদস্য পাবনা-১ আসনের সাংসদ শামসুল হক টুকুর মধ্যস্থতায় পুলিশি পাহারায় ক্যাম্পাস ছাড়েন উপাচার্য। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ড. এম রোস্তম আলীর অপসারণের দাবিতে ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের মুখে নিয়োগপ্রাপ্তদের চূড়ান্ত করতে গত ১০ ফেব্রুয়ারির রিজেন্ট বোর্ডের স্থগিত হওয়া সভা গত বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) হওয়ার কথা ছিল। অজ্ঞাত কারণে সেই সভাও হয়নি। সভা কবে হবে- তার নির্দিষ্ট তারিখ জানিতে পারেননি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ। ফলে বোর্ডের সভা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

৪ বছর আগে নিয়োগের পর থেকেই উপাচার্যের বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতির অভিযোগ উঠে। ইতোপূর্বে পাবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক এম রোস্তম আলীর বিরুদ্ধে ১০১টি দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগের তদন্ত দাবি করে এককভাবে প্রতীকী অনশন করেন বাংলা বিভাগের শিক্ষক ড. এম আবদুল আলীম। ইতোমধ্যে উপাচার্যের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলোর মধ্যে বেশ কিছু অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে ইউজিসি ও তদন্ত কমিটি। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।

error: কাজ হবি নানে ভাই। কপি-টপি বন্ধ