কাজী বাবলা: মৌসুমী ফল লিচুর রাজধানী খ্যাত পাবনার ঈশ্বরদীতে এবার প্রচন্ড খরায় ফলন বিপর্যয় হয়েছে। এতে লিচু চাষি ও ব্যবসায়ীরা হতাশ হলেও দাম ভাল পাওয়ায় আশাবাদী তারা। এদিকে লিচু ভাঙ্গা শুরু হয়ে গেছে। তবে বোম্বে লিচু ভাঙ্গা শুরু হবে জুনের প্রথম সপ্তাহ থেকে।
পাবনা কৃষি সম্প্রসারন বিভাগের একটি সুত্র জানান, এ বছর পাবনার ঈশ্বরদীর পাশাপাশি চাটমোহর, আটঘরিয়া, সুজানগর উপজেলায় ৩,৪০০ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে সব চেয়ে বেশী আবাদ হয়েছে ঈশ্বরদী উপজেলায়।
উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৪১ হাজার মেট্রিক টন। প্রচন্ড খরার কারনে প্রায় ৫০ শতাংশ লিচু নষ্ট হয়ে গেছে। ফলন বিপর্যয় হয়েছে বলে স্বিকার করলেও দাম ভাল পাওয়ায় কৃষকদের আতংকিত হওয়ার কোন কারন নেই বলে দাবী করেছে কৃষি বিভাগ।
লিচু ব্যবসায়ীরা জানান, পাবনার ঈশ্বরদীসহ বিভিন্ন এলাকার লিচু ভাঙার কাজ শুরু হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে আটি লিচু গুলো বাজারজাত করা হচ্ছে। আরও সপ্তাহ খানেক এই লিচু ভাঙ্গা হবে। এরপর জুনের প্রথম সপ্তাহ থেকে বাজারে আসবে উচ্চ ফলনশিল বোম্বে লিচু।
লিচু ব্যবসায়ী আব্দুল মান্নান শামিম জানান, প্রথম থেকেই এবার লিচুর ভাল দাম পাচ্ছে কৃষকরা। বাগান থেকে প্রায় ১৬০ থেকে ২০০ টাকা শ আটি লিচু বিক্রি হচ্ছে। এরকম বাজার চরা থাকলে বোম্বে লিচু বাজারজাত করে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে লিচু চাষি ও ব্যবসায়ীরা।
তিনি আরো জানান, এখনও ২৫ শতাংশ লিচু ভাঙ্গা হয়নি, প্রতিদিন ঈশ্বরদী থেকে ২০ থেক ৩০ ট্রাক লিচ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বাজারজাত করার জন্য পাঠানো হচ্ছে। পুরোপুরি লিচু ভাঙ্গা শুরু হলে প্রতিদিন শতাধিক ট্রাক লিচু দেশের বিভিন্ন এলাকায় বাজারজাত করার জন্য পাঠানো যাবে।
তবে ফলন বিপর্যয় হওয়ায় এক থেকে দুই সপ্তাহের বেশি লিচুর ফলন পাওয়া যাবে না বলে জানান তিনি। এদিকে সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গাছ থেকে লিচু পারা, বাছাই, প্যাকেট করা ও ট্রাকে লিচু লোড করাসহ পুরো এলাকা জুড়ে এখন লিচ ুনিয়ে ব্যস্ততা চলছে। আগামি দুই থেকে তিন সপ্তাহ এ ব্যস্ততা থাকবে বলে জানান বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা।
পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার চর সিলিমপুর গ্রামের লিচু বাগান মালিক মোঃ দুলাল হোসেন জানান, এ বছর খরার কারনে বেশীর ভাগ লিচু গাছে মুকুল শুকিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। অতিরিক্ত খরার কারনে লিচু গুলো বড় হওয়ার সময় পর্যাপ্ত পানি না পাওয়ায় অনেক লিচু গাছেই ফেটে নষ্ট হয়ে যায়। লিচু ফলনের সময়ে ঝরের কারনে ক্ষতি না হলেও খরার কারনে এ বছর গাছেই নষ্ট হয়ে গেছে বেশীর ভাগ লিচু।
অধিকাংশ এলাকায় লিচু বাগানে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ লিচুর ফলন হয়েছে আর বাকিটা নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষকরা সার বিষ দিয়ে ক্ষতি কমানোর চেষ্টা করলেও প্রকৃতি অনুকুলে না থাকায় এ বছর লিচুর ফলন বিপর্যয় হয়েছে। তিনি আরো বলেন, এলাকার প্রধান অর্থকরী ফসল লিচুর সাথে জড়িত চাষি, ব্যবসায়ী আর সাধারন শ্রমিকরা কাক্সিক্ষত ফলন না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছে ।
একই গ্রামের লিচু চাষি আব্দুস সালাম জানান, তিনি এ বছর তিনটি বাগানে লিচুর আবাদ করেছেন। প্রায় আড়াই লাখ টাকা দিয়ে তিনটি লিচু বাগান কিনে ৩.৫ থেকে ৪ লাখ টাকার লিচু বিক্রির টার্গেট থাকলেও ফলন বিপর্যয়ের কারনে এখন খরচ তুলতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তার তিনটি বাগানে প্রায় দেড় শতাধিক লিচু গাছ রয়েছে, যার বেশির ভাগই হাইব্রিড বোম্বে ভ্যারাইটির লিচু। এছারাও রয়েছে দেশি প্রজাতির আটি লিচুর গাছ।
প্রতি বছর একটি বড় গাছ থেকে প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার লিচু পাওয়া গেলেও ফলন বিপর্যয়ের কারনে এ বছর বড় গাছ থেকে ১০ থেকে ১২ হাজারের বেশি লিচু পাচ্ছেন না। ফলন বিপর্যয় হয়েছে ছোট গাছ গুলোতেও। ১ থেকে ১.৫ হাজারের বেশি লিচু এ বছর পাওয়া যাচ্ছে না। বোম্বে লিচু এখনও পুরোপুরি না পাকলেও আটি লিচু বাজারজাত করা শুরু হয়েছে। ভাল দাম পেয়ে তিনি খুশি হলেও লিচুর ফলন বিপর্যয়ে আশানুরুপ লাভ হবে না বলে তিনি দাবী করেছেন।
লিচু ব্যবসায়ী সালামের মত একই অবস্থা লিচুর রাজধানী বলে পরিচিত ঈশ্বরদী উপজেলার প্রতিটি লিচু চাষি ও মৌসুমি লিচু ব্যবসায়ির। ফলন বিপর্যয়ের কারনে কাক্সিক্ষত ফলন না পাওয়ায় দেশের অন্যতম প্রধান লিচু উৎপাদনকারী এলাকা পাবনার লিচু চাষি ও ব্যবসায়ীরা এখন দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পরেছে।
এব্যাপারে পাবনা কৃষি সম্প্রসারন বিভাগের উপ-পরিচালক আব্দুল কাদের বলেন, এ বছর পাবনায় ৩,৪০০ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে, যা থেকে লিচ ুউৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৪১ হাজার মেট্রিক টন। তবে অতিরিক্ত খরার কারনে এ বছর কিছুটা ফলন বিপর্যয় হয়েছে বলে স্বিকার করলেও দাম ভাল পাওয়ায় কৃষকদের আতংকিত হওয়ার কোন কারন নেই বলে জানান তিনি। খরার কারনে প্রায় ৫০ শতাংশ লিচু নষ্ট হয়ে গেছে বলে কৃষকরা দাবি করলেও কৃষি সম্প্রসারন বিভাগের উপ-পরিচালক আব্দুল কাদের ২০ থেকে ২৫ শতাংশ লিচুর ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেন।