পাবনায় রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দিয়ে বিনা টিকেটে রেল ভ্রমণ এবং তাদেরকে জরিমানা করায় ট্রেনের টিটিইকে বরখাস্তের ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি বরখাস্তকৃত ট্রেনের ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরীক্ষককে (টিটিই) শফিকুল ইসলাম, রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দেয়া তিন যাত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ করবে।
বিনাটিকিটে রেলভ্রমণ ও টিটিই বরখাস্ত নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর দেশব্যাপী ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। ঘটনার প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করতে শনিবার (৭ মে) তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এতে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে সহকারী পরিবহণ কর্মকর্তা (এটিও) সাজেদুল ইসলামকে প্রধান এবং সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী (এইএন) শিপন আলী ও রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সহকারী কমান্ডেন্ট (এসিআরএনবি) আবু হেনা মোস্তফা কামালকে সদস্য করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চল রাজশাহীর মহাপরিচালক (জিএম) অসীম কুমার তালুকদার জানান, বিনা টিকিটের ট্রেন যাত্রীর জরিমানাসহ ভাড়া আদায় ও কর্তব্যরত টিটিইকে কেন চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো তা নিয়ে আজ (শনিবার) এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। দুই কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে টিটিই শফিকুল ইসলাম, গার্ড ও বিনা টিকিটধারী তিন ট্রেনযাত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের তলব করা হয়েছে। রবিবার পাকশীর বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তার (ডিসিও) কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
এদিকে এঘটনা নিয়ে গণমাধ্যমের কাছে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘বিনা টিকিটে ট্রেনে ভ্রমণ করা যাত্রীরা আমার আত্মীয় নয়; ওদের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। মন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে কেউ হয়তো সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করেছে। ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। ঘটনাটি শনিবার সকালেই শুনেছি। রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে শুনেছি ওই টিটিই বিনা টিকিটের যাত্রীদের সঙ্গে অত্যন্ত খারাপ আচরণ করেছেন। ফলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এর আগে শুক্রবার রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দিয়ে বিনা টিকেটে রেল ভ্রমণ করায় তিন যাত্রীকে জরিমানা করায় সাময়িক বরখাস্ত করা হয় খুলনা থেকে ঢাকাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেসের ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরীক্ষককে (টিটিই) শফিকুল ইসলামকে।
রেলের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে খুলনা থেকে ঢাকাগামী আন্তঃনগর সুন্দরবন এক্সপ্রেসে ঈশ্বরদী রেল জংশন থেকে তিন যাত্রী বিনা টিকিটে এসি কেবিনে চেপে বসেন। ট্রেনে কর্তব্যরত টিটিই শফিকুল ইসলাম তাদের টিকিট দেখতে চাইলে তারা রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দেন। টিটিই বিষয়টি পাকশী বিভাগীয় রেলের সহকারী বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (এসিও) মো. নুরুল আলমের সঙ্গে আলাপ করলে তিনি সর্বনিম্ন ভাড়া নিয়ে টিকিট কাটার পরামর্শ দেন। এসিও’র পরামর্শ অনুযায়ী টিটিই শফিকুল ইসলাম ওই তিন যাত্রীকে এসি টিকিটের পরিবর্তে মোট ১ হাজার ৫০ টাকা নিয়ে জরিমানাসহ সুলভ শ্রেণির নন এসি কোচে সাধারণ আসনের টিকিট করে দেন। এ সময় ট্রেনে কর্তব্যরত অ্যাটেনডেন্টসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র জানায়, ওই তিন যাত্রী তাৎক্ষণিকভাবে ট্রেনে লিখিত কোনো অভিযোগ না করলেও তারা ঢাকায় পৌঁছে রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে টিটিই শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ‘অসদাচরণের’ অভিযোগ করেন। সেই অভিযোগ পেয়েই পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) নাসির উদ্দিন সংশ্লিষ্ট টিটিইকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ দেন। বরখাস্তের আদেশের বিষয়টি ঈশ্বরদীর টিটিই হেডকোয়ার্টারের ভারপ্রাপ্ত সিনিয়র টিটিই ইন্সপেক্টর মো. বরতুল্লাহ আলামিন ফোনে শফিকুল ইসলামকে জানান। সেসময় তিনি সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনে ডিউটিতে ছিলেন।