মোবাইলফোন অপারেটরগুলোর ডাটা ও ডাটা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্যাকেজের নতুন নির্দেশিকার উদ্বোধন করেছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) প্রধান সম্মেলন কক্ষে এ সেবার উদ্বোধন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল সংযুক্তির মাধ্যমে এমন এক মহাসড়ক তৈরি করা হচ্ছে যাতে বাংলাদেশ পঞ্চম শিল্পবিপ্লবের নেতৃত্ব দিতে পারে।
আগামীতে ফোর-জি ও ফাইভ-জি সেবা পাশাপাশি চলবে জানিয়ে তিনি বলেন, সারাদেশে ফোর-জি নেটওয়ার্ক শক্তিশালীকরণে জোর দিতে হবে। ডাটা প্যাকেজের মেয়াদ আনলিমিটেড রাখতে হবে। এছাড়া কলড্রপ ও কোয়ালিটি অব সার্ভিস নিশ্চিতের পাশাপাশি অপারেটরদের ওয়েবসাইটে ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা ভার্সন রাখতে হবে।
সভার শুরুতে বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র বলেন, ইন্টারনেট এখন মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অংশ। সব স্তরের সব বয়সের মানুষের জীবনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে দিয়েছে ইন্টারনেট ও তথ্যপ্রযুক্তি। নতুন ডাটা প্যাকেজ নির্দেশিকা চালুর ফলে গ্রাহক সহজেই প্যাকেজ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবে।
কমিশনের মহাপরিচালক (সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাসিম পারভেজ নতুন প্যাকেজ নির্দেশিকার বিষয়ে বিশদভাবে উপস্থাপন করেন। তিনি জানান, প্রতিটি অপারেটর সর্বমোট ৯৫টি প্যাকেজ চালু করতে পারবে। এর মধ্যে নিয়মিত প্যাকেজ এবং গ্রাহককেন্দ্রিক বিশেষ প্যাকেজ মিলে সর্বোচ্চ ৮৫টি এবং রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের জন্য সর্বোচ্চ ১০টি প্যাকেজ থাকবে। এছাড়া সকল প্যাকেজের সময়সীমা হবে ০৩/০৭/১৫/২০ দিন।
তিনি আরও বলেন, পূর্বে চারটি অপারেটর মিলে মোট প্যাকেজ সংখ্যা ছিল ৬২৯টি আর বর্তমানে চার অপারেটর মিলে মোট প্যাকেজ সংখ্যা ৩১২টি। ফলে পূর্বের চেয়ে প্যাকেজ সংখ্যা কমেছে ৫০.৪ শতাংশ।
নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী ডাটা ক্যারি ফরওয়ার্ডের ক্ষেত্রে কোনো গ্রাহক যদি তিনদিন মেয়াদে ৪ জিবি ডাটা প্যাক ক্রয় করেন এবং তৃতীয় দিনে যদি তার ২ জিবি বা ১ জিবি ডাটা অব্যবহৃত থাকে, তাহলে তৃতীয় দিনের মধ্যে গ্রাহক ৪ জিবি ৩০ দিন মেয়াদে একই প্যাক কিনলে তার অব্যহৃত ডাটা নতুন প্যাকের সাথে যোগ হবে এবং তিনদিন প্যাকের অব্যবহৃত ডাটা পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে ব্যবহার করার সুযোগ পাবেন। এছাড়া একজন গ্রাহক একই পরিমাণ ডাটা ক্রয় করে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে বিভিন্ন মেয়াদে ডাটা প্যাক ক্রয় করলেও তা ক্যারি ফরওয়ার্ড করার সুযোগ পাবেন।
নতুন নির্দেশিকায় প্যাকেজের নির্দিষ্ট ধরন, সর্বোচ্চ সংখ্যা, প্যাকেজের কোডভিত্তিক নামকরণ, প্যাকেজের নির্দিষ্ট সময়সীমাসহ সব প্যাকেজ অপারেটরদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে। এছাড়া যে কোনো অপারেটর একজন গ্রাহককে দিনে সর্বোচ্চ চারটি কমার্সিয়াল প্যাকেজের এসএমএস পাঠাতে পারবে এবং গ্রাহককে অবশ্যই প্রতি মাসের খরচ হিসাব সম্বলিত বাংলা এসএমএস প্রতিমাসের ১৫ তারিখের মধ্যে দিতে হবে। ইতোমধ্যে মোবাইল অপারেটরগুলো বর্তমান নিয়মে সব ডাটা প্যাকেজ তাদের ওয়েবসাইটে হালনাগাদ করেছে, যা মোবাইল অপারেটর প্রতিনিধিরা একটি ডেমো প্রদর্শনীর মাধ্যমে মন্ত্রী মহোদয়ের সামনে উপস্থাপন করেন।
অনুষ্ঠানে গ্রামীণফোনের হেড অব রেগুলেটরি সাদাত হোসেন বলেন, নতুন ডাটা প্যাকেজ একটি গ্রাহকবান্ধব নির্দেশিকা। দীর্ঘদিন ধরে বিটিআরসি ও মোবাইল অপারেটরগুলো সমন্বয় করে এ খাতে উদ্ভূত সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি প্রতিনিয়িত গ্রাহকবান্ধব নানা উদ্যোগ নিয়েছে।
১৭ মার্চ টেলিটক একটি আনলিমিটেড ডাটা প্যাকেজ চালু করবে জানিয়ে টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাহাব উদ্দিন বলেন, নতুন প্যাকেজ নীতিমালা একটি মাইলফলক। এর মাধ্যমে গ্রাহক রিচার্জ অ্যামাউন্ট ও ডাটার ব্যবহারের চিত্র পেয়ে যাবে। অপারেটরদের জন্য একটি বাড়তি চাপ হলেও নতুন নির্দেশিকা হবে গ্রাহকবান্ধব।
রবির চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার শাহেদ আলম বলেন, টেলিকম খাতে শৃঙ্খলা আনয়নে অপারেটর ও বিটিআরসি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। টেলিকম খাতে প্রবৃদ্ধি আনতে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে এ খাতকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে হবে। প্রতিযোগিতামূলক টেলিকম খাতে বিদ্যমান যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে তার ওপর বিটিআরসিকে গুরুত্ব দিতে হবে।
বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রশীদ বলেন, আমাদের এখন প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে হচ্ছে, তারপরও গ্রাহকদের স্বার্থে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নতুন নির্দেশিকার ফলে গ্রাহক অভিযোগ কমে আসবে।
অ্যামটবের মহাসচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম ফরহাদ (অব.) বলেন, বর্তমানে টেলিকম খাত গ্রাহককে ভালোভাবে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে নতুন নির্দেশিকা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ডিজিটাল বাংলাদেশের গড়ার ক্ষেত্রে স্মার্টফৈানের ব্যবহার বাড়াতে মোবাইলের মূল্য আরও কমিয়ে আনতে হবে।
অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো. খলিলুর রহমান বলেন, তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সমাজে ইন্টারনেট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। নতুন নির্দেশিকার ফলে টেলিকম খাতে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। তবে শিক্ষিত মানুষের পাশাপাশি যাতে সাধারণ মানুষ প্যাকেজ সম্পর্কে অবহিত হতে পারে সে বিষয়ে উদ্যোগ নিতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার জানান, বিটিআরসি সবসময় গ্রাহক স্বার্থ এবং গ্রাহক আত্মতুষ্টির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। আগামীতে ভয়েসকলের চেয়ে ডাটার ওপর নির্ভরতা বেশি হবে জানিয়ে তিনি বলেন, অপারেটরদের এখন থেকে ডাটার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। বিটিআরসি ডাটার ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করতে উদ্যোগ নেবে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, কলড্রপ নিয়ে জনমনে তীব্র অসন্তুষ্টি আছে, তাই অপারেটরদের ফাইবার অপটিক ও তরঙ্গে ব্যবহার বাড়াতে হবে।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে কমিশনার (ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশনস) প্রকৈাশলী মো. মহিউদ্দিন আহমেদ, কমিশনার (লিগ্যাল অ্যান্ড লাইসেন্সিং) আবু সৈয়দ দিলজার হোসেন, মহাপরিচালক (প্রশাসন) মো. দেলোয়ার হোসেন, মহাপরিচালক (স্পেকক্ট্রাম) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জুয়েল, মহাপরিচালক (লিগ্যাল অ্যান্ড লাইসেন্সিং) আশিস কুমার কুন্ডু, মহাপরিচালক (অর্থ, হিসাব ও রাজস্ব) প্রকৌশলী মো. মেসবাহুজ্জামানসহ বিটিআরসি ও মোবাইল অপারেটরদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।