বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে স্বাধীনতাবিরোধী অ্যাখ্যা দিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংসদ মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, ‘এই মির্জা ফখরুল সাহেব একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। তার বাবা ছিলেন একজন স্বাধীনতাবিরোধী, উনি নিজেও একজন স্বাধীনতাবিরোধী। এজন্য উনার পক্ষে স্বাধীনতার প্রতি, মুক্তিযুদ্ধের প্রতি আবেগ বা সহানূভূতি আসবে কিভাবে? আসার কথা নয়।’
তিনি বলেন, ‘এই দলের (বিএনপি) মধ্যে দুই-একজন মুক্তিযোদ্ধা আছেন, কিন্তু বহু আগে তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে বিচ্যুতি হয়ে রাজাকার-আলবদরদের সাথে হাত মিলিয়ে রাজাকার-স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে।’
মঙ্গলবার (৩০ মার্চ) দুপুরে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ম্যুরাল ‘জনক জ্যোতির্ময়’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হানিফ এসব কথা বলেন।
নরেন্দ্র মোদির সফরের বিরোধিতা নিয়ে হানিফ বলেন, দেশে কোনও অযুহাত নেই, কিন্তু তারা অযুহাত খারা করলেন যে ভারতে নাকি মুসলমানদের নির্যাতিত করা হয়, সেজন্য প্রতিবাদ করবেন। এই বিএনপি-জামায়াত এই হেফাজতের নাম দিয়ে তাদের কাঁধে ভর করে ২৬শে মার্চকে কলঙ্কিত করার জন্য তাণ্ডব চালাল। সরকারি সম্পত্তিতে তারা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিল। কাদের স্বার্থে কাদের ইন্ধনে? কার ইশারায়?
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘ধর্মকে ব্যবহার করে তাণ্ডব চালিয়ে বহু কিছু করে ফেলেছেন, এটা কেউ ভাববেন না। জামায়াত-বিএনপিও তাণ্ডব চালিয়েছিল। তাদের পরিণতি ভালো হয়নি। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে ফায়দা নিতে চাইলে পরিণতি ভালো হবে না।’
আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘শেখ হাসিনা ইসলামের জন্য কাজ করছেন। তিনি দারুল হাসিদের ছাত্রদের সার্টিফিকেটের ব্যবস্থা করেছেন, স্বীকৃতি দিয়েছেন। আর অন্যরা ধর্মের দোহাই দিয়ে অধর্ম করছেন। ইসলাম সন্ত্রাসের ধর্ম নয়, মানবতার ধর্ম। আল্লাহ সর্বশক্তিমান, তিনি চাইলে সব ধর্ম বিলুপ্ত করে দিতে পারতেন। তিনি তা করেননি। আমরা তাহলে কেন ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করছি? মাদ্রাসার কোমলমতি ছাত্রদের রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন।’
মাহবুব উল আলম হানিফ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা পোলাও মাংস খাচ্ছেন। হেলিকপ্টারে চড়ে ওয়াজ করতে যাচ্ছেন। ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করছেন। আর ছাত্রদের ব্যবহার করে তাণ্ডব চালাচ্ছেন। এটা হতে পারে না। রাষ্ট্রক্ষমতা সম্পর্কে আপনাদের অভিজ্ঞতা নেই। এমন চললে রাষ্ট্র আপনাদের ছাড়বে না।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম রোস্তম আলীর সভাপতিত্বে ও ইতিহাস ও বাংলাদেশ স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ’র সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ্যাড. শামসুল হক টুকু এমপি, পাবনা ৫ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স, পাবনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য মোঃ নুরুজ্জামান বিশ্বাস, পাবনা-২ আসনের সংসদ সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবির, কুষ্টিয়া ১ আসনের সংসদ সদস্য আ.কা.ম. সরওয়ার জাহান, কুষ্টিয়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ, পাবনা-সিরাজগঞ্জ সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য নাদিরা ইয়াসমিন জলি এবং পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মোঃ আনোয়ার খসরু পারভেজ। স্বাগত বক্তব্য দেন পাবিপ্রবির রেজিস্ট্রার (চলতি দায়িত্ব) বিজন কুমার ব্রহ্ম।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আগে প্রধান অতিথি ও অতিথিরা বঙ্গবন্ধুর স্মারক ম্যুরাল ‘জনক জ্যোতির্ময়’-এর ফলক উন্মোচন করেন। ম্যুরালের প্ল্যাটফর্মের দৈর্ঘ্য ৬০ ফুট ও প্রস্থ ৩৮ ফুট। ম্যুরালের বেদিতে উঠতে ৬টি সিঁড়ি অতিক্রম করতে হবে। ৬টি সিঁড়ি বঙ্গবন্ধুর ৬ দফার প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যা বাঙালির মুক্তির সনদ। মূল বেদিতে উঠতে আরও একটি ধাপ অতিক্রম করতে হবে। মূল ম্যুরালটির প্রতিকৃতির উচ্চতা ২১ ফুট ও প্রস্থ ১৫ ফুট। ছবির চারপাশে গ্রানাইট স্টোনের চিহ্ন। শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য ফুল দেওয়ার বেদিটি মার্বেল পাথরের। ম্যুরালের ডান পাশের স্তম্ভটির উচ্চতা ১৮ ফুট ও প্রস্থ ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি। এখানে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মনীষীদের গুরুত্বপূর্ণ উদ্ধৃতি রয়েছে।