‘টিপ দিছি। আঁর কার্ড ইয়্যান মেশিনর ভিতর দিইয়ে।আঁরে হয়দে তোমার ভোট হয়ে গেছে তুমি চলে যাও। মার্কাও মার্কা ন দেহি, ভোট ক্যানে অইলো।’
সোমবার (১৩ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনের উপ-নির্বাচনে এভাবেই ভোট দেয়ার কথা জানালেন এক বৃদ্ধ ভোটার। নগরীর চান্দগাঁওয়ের টেকবাজার হাজী কালা মিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের তিনি ভোট দিতে গেলে এ ঘটনা ঘটে।
৬০ ঊর্ধ্ব মোহাম্মদ রফিক সাংবাদিকদের জানান, ‘যখন আমার থেকে একজন টিপ নিছে, আবার আরেকজন নিচে। তারপর কই ওইদিকে যাও। আবার আরেক দিকে নিচে। হেইখানে দেখি একটা ছোট ইয়া আছে— মেশিন। একটা ছেলে ওখানে গেছে আমার সাথে। ভোট দেওয়ার একটা সিস্টেম আছে আমার ভোট আমি দেবো আর কেউ দেখবে না। উনি বলে যে, এইখানে নৌকায় মারো। আমি বললাম, আমি নৌকায় কেন মারবো। আমি যেখানে খুশি সেখানে মারবো। এটা তো মনের ব্যাপার। আমি ভোট দেবো, আমিই দেখবো।’
তিনি জানান, ভোট দিতে কেন্দ্রে যাওয়ার পর সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার তার স্মার্ট কার্ড চেয়ে নেন। কার্ড ইভিএমএ প্রবেশ করাতেই রফিকের ভোটার সম্পর্কিত সব তথ্য স্ক্রিনে ভেসে উঠে৷ এরপর রফিকের ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়ে ভোটার সনাক্তকরণ নিশ্চিত করতেই একজন গোপন বুথে প্রবেশ করে ভোটটি দিয়ে দেয়। তাকে জানানো হয় তার ভোট হয়ে গেছে।
কেন্দ্র দখল, ধানের শীষের এজেন্টদের বের করে দেয়া, ককটেল বিস্ফোরণ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়াসহ নানা অভিযোগের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে চট্টগ্রাম-৮ আসনে উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ। প্রথমবারের মতো ইভিএমে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ চলে বিরতিহীনভাবে বিকাল ৫টা পর্যন্ত।
বিকেল ৫টায় ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও দুপুরেই ভোটগ্রহণ স্থগিত চেয়েছেন ধানের শীষের প্রার্থী আবু সুফিয়ান। তার অভিযোগ, ‘১৭০টি কেন্দ্রের মধ্যে অলমোস্ট সব কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে। ভোটারদের যেতে দেয়া হচ্ছে না। গোপন বুথে ছাত্রলীগ-যুবলীগের কর্মীরা ভোট দিচ্ছে।’
নগরীর চাঁন্দগাঁও এলাকার এনএমসি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে পুলিশ-বিএনপির সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এছাড়া নগরীরর রাবেয়া বশর ইনস্টিটিউট ও আল হুমায়রা মহিলা মাদরাসায় বিএনপি প্রার্থীর এজেন্টদের ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়।
সকাল ১০টায় বিএনপির প্রার্থী আবু সুফিয়ান চান্দগাঁও আবাসিক এলাকায় সিডিএ পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্রে ভোট দিতে আসেন। ভোট কেন্দ্র থেকে বের হওয়ার মুখে কয়েকশ বহিরাগত অবস্থান নেওয়ায় আবু সুফিয়ান কেন্দ্র থেকে বের হতে না পেরে দাবি করেন, ‘আমি তো অবরুদ্ধ।’ পরে সোয়া ১২টায় পুলিশের পাঁচলাইশ জোনের সিনিয়র সহকারি কমিশনার দেবদূত মজুমদার এসে সুফিয়ানকে নিরাপদে তার গাড়িতে তুলে দেন।
তবে বিএনপি প্রার্থীর এ অভিযোগকে নাকচ করে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোছলেম উদ্দিন আহমেদ। নৌকার এই প্রার্থীর দাবি, নির্বাচন থেকে বেরিয়ে যেতে বাহানা খুঁজছে বিএনপি।
তিনি বলেন, ‘আসলে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। তারা বলছে আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। তাদের এজেন্ট এসে বসলে, রিটার্নিং অফিসার নিশ্চয়ই তাদের বসাবে। তারা নিজেরাই নির্বাচনের জন্য নেই। এজন্য একটা বাহানা খুঁজছে। তারা জানে, লোকজন যেভাবে নৌকার পক্ষে মাঠে নেমেছে, তাতে তাদের ভরাডুবি হবে। সেই আশঙ্কা থেকেই এসব কথা বলছে।’