মধ্যরাতে খালেদা জিয়ার বাড়ি ঘিরে ফেলল যৌথ বাহিনী, নিয়ে গেল তারেক রহমানকে

৭ মার্চ (বুধবার), ২০০৭। রাত ১১টার দিকে ফখরুদ্দীন-মঈন উদ্দিনের সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যৌথবাহিনীর বিপুল সদস্যরা রাজধানীর ক্যান্টনমেন্টের ৬ শহীদ মইনুল রোডে সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বাড়ি ঘিরে ফেলেন।

মুহূর্তের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে। যৌথবাহিনীর নেতৃত্ব দেয়া শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা বাসার ভেতরে খবর পাঠালেন যে, তারা তারেক রহমানকে নিয়ে যেতে এসেছেন। যৌথ বাহিনীর পক্ষ থেকে তাকে প্রস্তুত হওয়ার জন্য বলা হয়।

রাত ১২টা ২৭ মিনিটে তিনি নিজেই বাসা থেকে বেরিয়ে যৌথ বাহিনীর সঙ্গে কথা বলেন। পরে যৌথ বাহিনী তাকে গাড়িতে তুলে ক্যান্টনমেন্ট থানায় নিয়ে যায় সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে গ্রেফতারের পর তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মোট ১২টি মামলা হয়।

গ্রেফতারের পর ১২ দফায় রিমান্ডে নেয়া হয় সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের এই জ্যেষ্ঠ সন্তানকে। কিছুদিন পর তারেক রহমানকে আদালতে হাজির করা হলে তার শারীরিক অবস্থার অবনতির জন্য তাঁর আইনজীবীরা আদালতে অভিযোগ করেন যে জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে তারেক রহমানের উপর চরম শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। আদালতের নির্দেশে চিকিৎসকদের একটি দল পরীক্ষা-নীরিক্ষার পর আদালতকে জানায় যে তারেক রহমানের ওপর শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ যুক্তিযুক্ত এবং প্রমাণিত হয়। এই পর্যায়ে আদালত রিমান্ডে নেয়ার আদেশ শিথিল করে তা কমিয়ে ১ দিন ধার্য করেন ও জিজ্ঞাসাবাদকারীদের সাবধানতা অবলম্বনের আদেশ দেন।

রিমান্ডে নির্যাতনে তারেক রহমানের শারীরিক অবনতি দেখা দেয়। অবস্থার এতটাই অবনতি হয় যে, তাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের পরিবর্তে শাহবাগস্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। ২৫ আগস্ট, ২০০৭ তারিখে খবর ছড়িয়ে পড়ে যে তারেক রহমানের অবস্থা গুরুত্বর, তার পা ভেঙে গেছে। এতে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ দেখা দেয়, বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

২০০৮ এর আগস্টে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলাগুলো আদালতে গতি লাভ করে। টানা ৫৫৪ দিন কারাবাসের পর ৩ সেপ্টেম্বর, ২০০৮ তারিখে সবগুলো মামলায় তারেক রহমানের জামিন লাভ করেন ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মুক্তি লাভ করেন। কোন কোন রাজনৈতিক বিশ্লেষক সন্দেহ পোষণ করেছেন তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগের সবগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য-প্রণোদিত।

১১ সেপ্টেম্বর, ২০০৮ সালে বিশেষ কারাগার থেকে বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পাওয়ার পর তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পুত্র তারেক রহমানকে দেখতে যান। সেদিন রাতেই তারেক রহমান উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যের উদ্দেশ্যে রওনা হন। সেদিন থেকেই তিনি সপরিবারে লন্ডনে বসবাস করছেন।

error: কাজ হবি নানে ভাই। কপি-টপি বন্ধ