পাবনা পৌর এলাকার হাসপাতাল সড়কের শালগাড়িয়া মহল্লার পিডিসি হাসপাতালের সত্বাধিকারী শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ অব. প্রাপ্ত চিকিৎসক ক্যাপ্টেন ডা. আনিসুর রহমানের বসত বাড়ি ও তার প্রতিষ্ঠান লকডাউন করেছে পৌরসভা ও উপজেলা প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার বিকালে এলাকোবাসীর বিক্ষোভ মুখে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশে পিডিসি হাসপাতাল ও বাড়ি লকডাউন করা হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, তিন থেকে চার দিন আগে ক্লিনিক সূত্রে খবর ছড়িয়ে পড়ে যে ডাঃ আনিসুর রহমান করোনা পজেটিভ হয়েছেন। কিন্তু তিনি নিজ বাড়িতে পজেটিভ রেজাল্ট আসার আগে এবং পরে নিয়োমিত চেম্বারে রোগী দেখেছেন। এই খবরের পরে স্থানীয়রা বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই ক্লিনিক ও চেম্বার বন্ধের জন্য বিক্ষোভ করে। পরে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশে উপজেলা প্রশাসন ও পৌরসভা তার বাড়ি ও প্রতিষ্ঠান লকডাউন করে লাল পতাকা টানিয়ে দিয়ে যায়।
তবে শুক্রবার (২৬ জুন) সকালে ওই প্রতিষ্ঠানের সামনে অবস্থা নিলে দেখা যায়, গেটে থাকা কর্তব্যরত সিকিউরিট গার্ড বাড়ি মূল ফটক খুলে ভেতর থেকে মানুষ বাহিরে বের হচ্ছে আবার ভেতরে প্রবেশ করাচ্ছেন।
লকডাউন বিষয়ে গেটের সিকিউরিটি গার্ড বলেন, গতকাল বিকেল থেকে প্রতিষ্ঠান আর বাড়ি লকডাউন হয়েছে। আমার তখন ডিউটি ছিলো না। রাতে জানতে পারি সকালে এসে দায়িত্ব পালন করছি। বর্তমানে তিনজন রোগী ভর্তি আছে। তারা সকালে চলে যাচ্ছে নিজেদের বাড়িতে। আর রাতে ক্লিনিকে রোগীর সেবায় দায়িত্বে ছিলো তারা সকালে চলে গেছে। আগামী শনিবার পর্যন্ত প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে বলে জানান তিনি।
করোনা পজেটিভ জানার পরেও চেম্বারে রোগীর ব্যবস্থাপত্র দেয়ার বিষয়ে ডাঃ আনিসুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চলতি মাসের ২০ তারিখ শনিবার আমিসহ আমার স্ত্রী ও অফিস সহকারী তিনজনের করোনা পরীক্ষা করতে দেয়া হয়। মঙ্গলবার রাতে সিভিল সার্জন ফোনে আমাকে রেজাল্ট জানায় তিনজনের মধ্যে আমার করোনা পজেটিভ এসেছে। আমার কোন শারীরিক সমস্যা নাই। আমি এই পরীক্ষার আগ থেকে রুগী দেখা বন্ধ করেছি। যারা বলছে আমি করোনা নিয়ে রোগী দেখেছি তারা মিথ্যা বলছে। আমার প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক ইর্ষান্বিত হয়ে ষড়যন্ত্র করছে। আমি ওই সংবাদ শোনার পর থেকে আর বাহিরে বের হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদিনের বলেন, প্রশাসন এবং পৌরসভা যৌথভাবে ওই বাড়িতে গিয়ে লাল পতাকা টানিয়ে লকডাউন করা হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নজরদারী করা জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
পাবনা সিভিল সার্জন ডাঃ মেহেদী ইকবাল জানান, স্থানীয়দের মাধ্যমে বিষয়টি আমরা জানতে পরি তিনি করোনা পজেটিভ হয়েও রোগী দেখছেন। সিভিল সার্জন বলেন, বৃহঃ প্রতিবার ওই বাড়ি ও প্রতিষ্ঠান লকডাউন করা নির্দেশ দেয়া হয়েছে । করোনা পজেটিভ হয়েও ব্যবস্থাপত্র দিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষটি আমি শুনেছি তদন্ত চলছে। সত্য হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পাবনায় গত ২৪ ঘন্টায় জেলায় করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হয়েছে তিন জনের। স্বাস্থ্য বিভাগের হিসাব মতে মোট মৃত্যু বরণ করছে ৮জন আর বেসরকারি হিসাবে উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হয়েছে আরো ১২জন। গত চব্বিশ ঘন্টায় জেলায় আক্রান্ত হয়েছে ৮জন। জেলায় সর্বশেষ করোনা আক্রান্ত ৪১৫ জন। সবচেয়ে বেশি পাবনা সদরে ২৪৬ জন। আর পরের স্থানে সুজানগর উপজেলা ৫২জন। এপর্যন্ত করোনা পরীক্ষা হয়েছে ৪১৮৮ জনের। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে এ পর্যন্ত ৩২ জন সুস্থ হয়েছেন। আক্রান্ত সবাইকে হোম আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। হাসপাতালে আইসোলেশনে চিকিৎসা নিচ্ছেন ১২ জন। এ পর্যন্ত পাবনায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৮ জনের। জেলায় প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় গত ১৬ এপ্রিল।