লাদাখ সীমান্তে দুই দেশের সেনাবাহিনীর ব্যাপক সংঘর্ষের ফলে নতুন করে যু্দ্ধ উত্তেজনা দেখা দিয়েছে ভারত ও চীনের মধ্যে। এজন্য বন্ধুরাষ্ট্রের খোঁজে চীন ও ভারত। বিশেষ করে প্রতিবেশি রাষ্ট্রগুলোর সাথে সম্পর্কে জোরদারে মনোযোগী হতে দেখা যাচ্ছে দুইদেশকে।
পরিস্থিতি বিবেচনায় সম্প্রতি চীন বাংলাদেশি পণ্যের জন্য শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়েছে। বাণিজ্যিক ক্ষেত্রেও চীনের অগ্রাধিকার পাচ্ছে বাংলাদেশ। এছাড়াও বাংলাদেশকে মোটা অংঙ্কের ঋণ সৃবিধাও দিচ্ছে শি জিনপিংয়ের সরকার।
চীনের এমন কর্মকাণ্ডের উদ্বিগ্ন প্রতিবেশি ভারত। পরিস্থিতি বিবেচনা করে বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক ও ব্যবসায়িক অংশীদারিত্ব বৃদ্ধির জন্য ভারত বহুস্তরের কৌশল গ্রহণ করতে যাচ্ছে।
দেশটির সংবাদমাধ্যম ইকোনমিক টাইমস-এর এক প্রতিবেদনে একথা জানা গেছে।
খবরে বলা হয়েছে, ইকোনমিক টাইমস জানতে পেরেছে, চীনের বাণিজ্যিক সুবিধার ফলে ‘বাজেট ও আমদানি-রফতানিতে ঘাটতি ও ঋণের ফাঁদে পড়তে পারে’ বাংলাদেশ। ভারত বেশ কয়েকটি কানেক্টিভিটি উদ্যোগ সক্রিয় করতে যাচ্ছে, যাতে বাংলাদেশি পণ্যের অবাধ প্রবেশ হবে স্থলসীমান্তঘেরা উত্তর-পূর্বের রাজ্য ও অন্যান্য অংশে।
আন্তসীমান্ত বাণিজ্য ও কানেক্টিভিটি পর্যালোচনাকারী বিশেষজ্ঞদের মতে, সমুদ্রবন্দর, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন, রেল ও মহাসড়কে কানেক্টিভিটি উদ্যোগ জোরদার করা হবে। যা ভারতের পাশাপাশি নেপাল ও ভুটানের বাজারের সঙ্গে বাংলাদেশকে সংযুক্ত করবে। ভারত ও বাংলাদেশ উভয় দেশই ১৯৬৫ সালের আগে রেলসহ যেসব কানেক্টিভিটি সংযোগ ছিল সেগুলো পুনরায় সচল করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে।
ভারতের প্রভাবশালীদের সূত্রের বরাতও উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। বলা হয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজ্য সরকারের বিরোধিতার পরও গত সপ্তাহে পশ্চিমবঙ্গ সীমান্ত দিয়ে পণ্য পরিবহন পুনরায় চালু হওয়ায় ভারতে বাংলাদেশি রফতানি বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করবে।
এছাড়াও সম্প্রতি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনকে চিঠি লিখেছে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংক। বিশেষ সম্পর্ক জোরদার করার বিষয়ে লেখা ওই চিঠির বিষয়টিও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
ভারতের গণমাধ্যমটির দাবি, চীনের সিদ্ধান্তের এক দশক আগেই বাংলাদেশি বেশ কয়েকটি পণ্যে শুল্কমুক্ত প্রবেশের সুবিধা দিয়েছে ভারত। যা ঢাকার সঙ্গে নয়াদিল্লির বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে ভূমিকা রেখেছে। এছাড়া বাণিজ্যে ছাড় থেকে ঋণের ক্ষেত্রে ভারতীয় শর্তাবলি বাংলাদেশের জন্য সুবিধাজনক।
দেশটির কর্তৃপক্ষের মতে, ঢাকাকে বাণিজ্যে ছাড় দেওয়ার আগে দীর্ঘদিন ঝুলিয়ে রেখেছে বেইজিং। এই পদক্ষেপ ঢাকাকে ঋণের ফাঁদে ফেলতে পারে। বাংলাদেশ স্বাভাবিকভাবেই দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাজারে প্রবেশের সুবিধা নিতে চাইবে।
ইকোনমিক টাইমের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার বাংলাদেশ। গত দশকে উভয় দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য স্থিতিশীলভাবে বাড়ছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশে ভারতের রফতানি ও আমদানি ছিল যথাক্রমে ৯২১ কোটি ও ১০৪ কোটি ডলার। এর তুলনায় চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি বেইজিংয়ের স্বার্থের অনুকূলে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশে চীনের রফতানির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৩৬৩ কোটি ডলার। বিপরীতে ঢাকা রফতানি করেছে ৫৬ কোটি ৮০ লাখ ডলার। বাংলাদেশের মোট আমদানির এক-চতুর্থাংশ চীন থেকে আসা। গত দুই দশকে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে ১৬ গুণ হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের সম্পূর্ণ বিপরীত পদ্ধতি রয়েছে। বাংলাদেশকে গত আট বছরে ৮০০ কোটি ডলার লাইনস অব ক্রেডিটস (এলওসি) দিয়েছে সড়ক, রেলপথ, নৌপরিবহন ও বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য। ভারতীয় রেয়াতি ঋণের সবচেয়ে বড় গ্রহীতা বাংলাদেশ। আখাউড়া-আগরতলা রেললাইন, অভ্যন্তরীণ নৌপথের জন্য ড্রেজিং এবং ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইন নির্মাণে সহযোগিতা করছে।
ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ঢাকাকে সহযোগিতার ক্ষেত্রে সক্রিয় ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে ক্ষুদ্র উন্নয়ন প্রকল্পসমূহ (এসডিপিএস)। ছাত্রদের আবাসিক হল, শিক্ষা ভবন, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও এতিমখানাসহ বাংলাদেশে ৫৫টি এসডিপিএস প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে ভারত। এছাড়াও ২৬টি প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে।