সিলেট বিভাগে বন্যার পাশাপাশি উত্তরাঞ্চলেও বন্যার তীব্রতা বাড়তে শুরু করেছে। আগামী দুই দিনের মধ্যে উত্তরাঞ্চলের ১৪টি জেলায়ও বন্যা হতে পারে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের দীর্ঘমেয়াদি বন্যার পূর্বাভাস।
পূর্বাভাস অনুযায়ী, ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার কুড়িগ্রাম দিয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করে তা আরও সামনে এগিয়ে আসছে। ফলে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জ ও পাবনায় বন্যার পানি প্রবেশ করতে পারে। আর তিস্তা অববাহিকার কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও রংপুরে বন্যা শুরু হতে পারে।
এছাড়া পদ্মা নদীর পানি বেড়ে একই সময়ে দেশের মধ্যাঞ্চলের চারটি জেলায় বন্যা শুরু হতে পারে। পদ্মার মূল নদী গঙ্গার উজানে ভারি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ফলে শরীয়তপুর, মাদারীপুর, চাঁদপুর ও ফরিদপুরে নিম্নাঞ্চলে বন্যা শুরু হতে পারে।
বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, আগামী দুই দিনের মধ্যে দেশের উজানে ভারতের মেঘালয়, আসাম ও পশ্চিমবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ভারি বৃষ্টি আরও বাড়তে পারে। এরই মধ্যে শুরু হওয়া বৃষ্টির কারণে উজানের নদ–নদীগুলোর পানি বাড়ছে। নতুন করে বৃষ্টি বেড়ে বন্যা পরিস্থিতি মারাত্মক রূপ ধারণ করতে পারে।
এদিকে ভয়াবহ বন্যায় ভাসছে সিলেটসহ হাওড়াঞ্চল। ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আবারও থইথই পানিতে পুরো জনপদ। পানিবন্দি লাখ লাখ মানুষকে উদ্ধারে প্রশাসনের সঙ্গে মাঠে নেমেছেন সেনা ও নৌবাহিনীর সদস্যরাও। বন্ধ হয়ে গেছে বিমান চলাচল।
পানির তীব্র স্রোতে তলিয়ে যাচ্ছে বসতবাড়ি, প্রধান সড়কসহ গ্রামীণ রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ অবস্থায় আশ্রয়ের খোঁজে শেষ সম্বল হাতে নিয়ে নিজ ঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছেন বানভাসিরা।
এদিকে সুনামগঞ্জ পৌর এলাকাসহ ১২ উপজেলার হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। দু’দিন থেকে বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় রয়েছেন সুনামগঞ্জবাসী। এদিকে জেলার সঙ্গে সিলেটের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
এছাড়া তিস্তা, ব্রহ্মপুত্রসহ উত্তরের নদ-নদীর পানি বাড়ায় লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।
সীমান্তের ওপারে ভারি বর্ষণের সঙ্গে পাহাড়ি ঢলে তিস্তা ছাড়াও ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, ঘাঘটসহ ১৬ নদ-নদীর পানি বাড়ছে। ফলে নীলফামারীর ডিমলা, জলঢাকা, লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা, কালীগঞ্জের নিম্নাঞ্চলের অন্তত ১০ হাজার পরিবার বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে।
এদিকে, রৌমারী ও রাজিবপুর ছাড়াও কুড়িগ্রাম জেলার আরও তিনটি উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। জেলার ৫০টি গ্রাম তলিয়ে গেছে। ঘরবাড়িতে পানি ওঠায় মাচা বা নৌকায় আশ্রয় নিয়েছেন অনেকে।