বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেছেন, ‘পুলিশ দেখে দৌঁড় দিলে গণআন্দোলন হবে না। আন্দোলন কখনো হুইসেল দিয়ে হয় না। আন্দোলন তৈরি করে নিয়ে আসতে হয়। বলা হয় নেতারা আন্দোলন করে না। নেতারা আন্দোলন করে না কর্মীরা নেতাদের আন্দোলন করতে বাধ্য করে। এটাই হলো মূলকথা।’
শুক্রবার (৬ মার্চ) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ১৪তম কারাবন্দি দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশ ছাত্র ফোরাম এই সভার আয়োজন করে।
একই অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেয়া বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিবুন নবী খান সোহেলের বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বিএনপির নীতিনির্ধারক বলেন, ‘সোহেল গণআন্দোলনের কথা বলেছে। পুলিশ দেখে দৌঁড় দিলে গণআন্দোলন হবে না। ষাটের দশকে আওয়ামী লীগ অফিসে হারিকেন জ্বালানোর লোক ছিল না। ছাত্র আন্দোলন হয়েছিল ষাটের দশকে। আইউব খানের পতন হয়েছিল। সুতরাং বিএনপি’র মূল আন্দোলনের জন্য হচ্ছে ছাত্রদল, অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন। তারা যদি রাজপথ প্রকম্পিত না করতে পারে। আমার মত ৬৯ বা ৭০ বছর বয়সী বা সেলিমা আপার মত বয়স্কদের দিয়ে এটা হবে না।’
টুকু আরও বলেন, আন্দোলনে আসে মানুষ তারুণ্য দেখে । তারুণ্যের প্রতিনিধিত্ব করেন তারেক রহমান। আজকে তারেক রহমান বিদেশে। আমাদের ছাত্রদল-যুবদল যারা আছেন তাদের নাম ঘোষণা করতে হয়। তাদের নাম ঘোষণা না করলে তারা রাগ করেন। আমি তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলছি , এই নামটা ঘোষণার সময় যদি আন্দোলন করলে নামটা ঘোষণা হতো তাহলে বুঝতাম এই নাম ঘোষণায় সার্থকতা আছে। আমি বিক্ষুব্ধ। আমি দেখেছি মিটিং শেষে যে এসেছে তার নামে বলা হয়েছে। এইযে নাম সর্বস্ব ব্যক্তির নাম বলতে হবে হাতে তালি দিতে হবে এ রেওয়াজ গুলো হয় না।
তিনি বলেন, ‘আন্দোলন করতে হলে নিজেদেরকে তৈরি করতে হবে। এমন অবস্থায় চলে গেছে এ অবস্থায় যদি বুকের রক্ত দেওয়া না যায় তাহলে জনগণ এগিয়ে আসবে না। সেটা করতে পারবে একমাত্র ছাত্র সংগঠন। এখন যারা ছাত্রনেতা আছেন তাদের চেয়ে অনেক কম বয়সে আমরা ঊনসত্তরের আন্দোলন করেছি। মুক্তিযুদ্ধে গেছি ২০ বছর বয়সে। তখন মৃত্যু কাকে বলে এটা মনে হতো না। এখন আমি মৃত্যুকে ভয় করি। তারুণ্যই তো মৃত্যুকে জয় করতে পারে।’
কর্মীদের উদ্দেশ্যে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘তোমাদের নাম ঘোষণা করে নিজের এলাকায় দুর্গ গড়ে তোল। তখন দেখবে যখন আন্দোলন শুরু হবে তখন এমনিতেই নাম এসে যাবে। হাততালি অনেক পাবা। কিন্তু এই হাততালিতে কোন সার্থকতা নেই বা আনন্দের কিছু নেই। নিজেদের মধ্যে আগুন জ্বালাতে হবে তাহলে তারেক রহমান দেশে ফিরবেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি পাবেন। আন্দোলন কখনো হুইসেল দিয়ে হয় না। আন্দোলন তৈরি করে নিয়ে আসতে হয়। বলা হয় নেতারা আন্দোলন করে না। নেতারা আন্দোলন করে না কর্মীরা নেতাদের আন্দোলন করতে বাধ্য করে। এটাই হলো মূলকথা।’
কাউকে ক্ষমতায় চিরস্থায়ী করতে বিএনপিকে ধ্বংসের চেষ্টা হচ্ছে বলে মন্তব্য করে টুকু বলেন, ‘কাউকে ক্ষমতায় চিরস্থায়ী করার জন্য আজকে বিএনপিকে ধ্বংস করার চেষ্টা হচ্ছে এবং এই শক্তিটি অনেক বড় শক্তি। এই শক্তিকে যদি ধ্বংস করতে হয় তাহলে একমাত্র গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে এই শক্তিকে ধ্বংস করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আজকে বিএনপি যে অবস্থায় আছি সেটা আলোচনার প্রয়োজন আছে। আজকে কেন বেগম খালেদা জিয়া জেলে বন্দি? কেন তারেক রহমানকে দেশে ফেরত আসতে পারছেন না? এটা নিয়ে আমরা যদি চিন্তা ভাবনা করি তাহলে খুব পরিষ্কার ভাবে বুঝতে পারব এর পেছনে দেশি এবং বিদেশি স্বার্থ জড়িত আছে বলেই আজকে বেগম জিয়াকে জেল থেকে বের করা যাচ্ছে না।
‘জিয়াউর রহমানের মৃত্যু হয়েছে এবং তারেক রহমান বিদেশে আছেন। জিয়াউর রহমান বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদের রাজনীতির এই কারণে দিয়েছিলেন যে, বাংলাদেশের যে স্বার্থ সে স্বার্থ রক্ষা করতে হবে এবং আমরা একটা ছোট্ট রাষ্ট্র, আমাদের আশেপাশে বড় বড় রাষ্ট্র আছে, তাদের প্রতিপত্তি প্রভাব যেন আমাদের দেশে বিস্তার না করতে পারে সেজন্য জাতীয়তাবাদের রাজনীতির সৃষ্টি হয়েছে।’
টুকু বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের মতন খাঁটি জাতীয়তাবাদী নেতা থাকলে তাদের অসুবিধা হবে এটা বুঝতে পেরেই তারা জিয়াউর রহমানকে হত্যা করেছে। উনারা মনে করেছিলেন- জিয়াউর রহমানকে হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদের রাজনীতি শেষ হয়ে যাবে। বেগম খালেদা জিয়া তার শক্ত হস্তে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী রাজনীতির পতাকা তুলে ধরেছেন এবং উনি এদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন।’
বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর হেলালের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, সাবেক ছাত্রদল নেতা নাজমুল হাসান, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস প্রমুখ বক্তৃতা করেন।