স্বর্ণ চুরি চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার খুলনা মহানগর মহিলা শ্রমিক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাদিয়া আক্তার মুক্তার (৩২) পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিল বলে গুঞ্জন উঠেছে। স্বর্ণ চুরি চক্রসহ অবৈধ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গত সোমবার খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ সাদিয়াকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারকালে তার বাসা থেকে ১২ ভরি চোরাই সোনা ও সোনা বিক্রির ৮২ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। এরপরই সামনে আসে আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতাদের সঙ্গে সাদিয়ার সখ্যতা ও খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের একজন ঊধ্বর্তন কর্মকর্তার সঙ্গে সুসম্পর্কের বিষয়টি।
এই স্বর্ণ চোরাই সিন্ডিকেটের সঙ্গে পুলিশ কিংবা রাজনৈতিক অঙ্গনের কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবহার নেয়ার আগাম হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি (সাউথ) মোহাম্মদ এহসান শাহ।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সাদিয়া ওই স্বর্ণ চোরাই সিন্ডিকেটের মূল হোতা। সোমবার গ্রেফতারের পর মঙ্গলবার পুলিশ সাদিয়ার ১০ দিন রিমান্ড আবেদন করেন। আজ বৃহস্পতিবার রিমান্ড শুনানির কথা রয়েছে।
শুধুমাত্র বড় বড় নেতাদের সঙ্গে সখ্যতা ও পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে সুসম্পর্কের কারণে স্থানীয় আওয়ামী লীগকে পাত্তা না দিয়েই কেন্দ্র থেকে খুলনা মহানগর মহিলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদটি হাতের মুঠোয় নিয়েছিলেন সাদিয়া। তবে নানা অভিযোগের মুখে গত বছরের ৩১ জুলাই তাকে বহিষ্কার করে যুগ্ম সম্পাদক জাহানারা বেগমকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করা হয়।
বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জের নিশানবাড়িয়া এলাকার মৃত আলতাফ সরদার ও মৃত ফরিদা বেগমের দ্বিতীয় কন্যা সাদিয়া। আলতাফ সরকার সোনাডাঙ্গা থানার পাশে মুদি দোকানি ছিলেন। প্রায় দেড় যুগ আগে ঢাকার জুরাইন এলাকার ছেলে শুকুর আলীর সঙ্গে সাদিয়ার বিয়ে হয়। তখন প্লট ও জমির ব্যবসা করতেন শুকুর।
তবে রাজনীতিতে যাত্রার শুরুর থেকেই স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে সাদিয়ার বনিবনা ছিল না। তবে বিভিন্ন সময় খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে দেখা যায় তাকে।
নগরীর সোনাডাঙ্গা মজিদ সরণিতে ‘গুহা ইন খুলনা’ রেস্টুরেন্টের ব্যবসা রয়েছে সাদিয়া-শুকুর দম্পতির। এটি খুলনার একমাত্র পাতাল রেস্টুরেন্ট। চলতি মাসের শুরুর দিকেই একবার হোটেলে এসেছিলেন সাদিয়া-শুকুর দম্পতি। তবে রেস্টুরেন্টটির ম্যানেজার জিহাদ আল মামুনের দাবি, ম্যাডাম (সাদিয়া) আটকের কিছু দিন আগে থেকেই তার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ নেই। জানা যায়, মামুন কাগজ-কলমে ম্যানেজার হলেও হোটেলটি চালাতেন শুকুরের ভাই লিটন। সম্প্রতি হোটেলটির মালিক সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে এসেছিলেন র্যাব কর্মকর্তারাও।
সরেজমিনে দেখা যায়, নগরীর হরিণটানা থানার রাসেল সড়কে এ দম্পতির বহুতল ভবন রয়েছে। বাড়ির সামনে ১টি ও গ্যারেজে ৪টি মোটরসাইকেল দেখা যায়। যেগুলোর বেশিরভাগই রেজিস্ট্রেশন ছাড়া। ভবনের নিচতলার একটি ফ্ল্যাটে সাদিয়ার বড় ভাই মানিক সরদার ও অপরটিতে ভাড়াটিয়া রয়েছেন। পুরো বাড়িটি সিসি ক্যামেরার আওতায়।
মানিক সরদার নিজের বোন সম্পর্কে বলেন, ‘আমার বোন ষড়যন্ত্রের শিকার। সে কোনও ধরনের চোরাই স্বর্ণের সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত নয়। রাজনীতি করায় তার অনেক শত্রু তৈরি হয়েছে। শুকুর জমির ব্যবসা করায় তারও শত্রু তৈরি হয়েছে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পেছনে শুকুরের ৪ কাঠা জমি আছে। এ জমিটা নিয়ে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে তার ঝামেলা চলছে।’
এদিকে সাদিয়াকে গ্রেফতারের পর থেকেই আত্মগোপনে আছেন শুকুর। তার ফোনে একাধিকবার কল করে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনও সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।
এ ব্যাপারে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি (সাউথ) মোহাম্মদ এহসান শাহ বলেন, ‘আমরা তথ্য নিয়েই সাদিয়াকে গ্রেফতার করেছি। তিনি সোনা চোরাই সিন্ডিকেটের মূল হোতা। তার বিরুদ্ধে রাজধানীর খিলগাঁও থানায় স্বর্ণ চুরির মামলা আছে। পুলিশ অনেকদিন ধরেই চক্রটিকে ধরার চেষ্টা করছিল। পলাতক শুকুরের ব্যাপারে খোঁজ লাগানো হয়েছে।’