পাবনা পৌরসভায় ‘আউট সাইট থেকে গোল’ দিতে চায় বিএনপি

পাবনা পৌরসভা নির্বাচনে নিজেদের মধ্যে বড় ধরনের বিভেদে জড়িয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এই বিভেদ এখন টক অব দ্যা পাবনা। আওয়ামী লীগের এই ‘চরম বিভেদকে’ সুযোগ হিসেবে নিতে চায় বিএনপি। সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পাবনা পৌরসভায় নিজেদের ‌‘হঠাৎ জয়’ দেখতে শুরু করেছেন নেতাকর্মীরা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী ৩০ জানুয়ারির এই নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে বিদ্রোহী দাঁড় করিয়ে নেতৃস্থানীয়দের বড় অংশই এখন নৌকাবিরোধী। ফলে বিএনপির চেয়ে নৌকার এখন প্রধান প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে দলের নেতারা। যাদের নেতৃত্বে নৌকার বিজয় সম্ভব ছিল সেই নেতারাই এখন নৌকার পরাজয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।

তারা বলছেন, সাধারণ মানুষ যদি ভোট দিতে পারেন আর সত্যিই যদি নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়, তাহলে বর্তমানে মানুষের মনে সরকারবিরোধিতা আর প্রকৃত ভোট ব্যাংক হিসেবে ধরলে নৌকা আর বিদ্রোহী প্রার্থীর জয়ে সম্ভাবনা নিয়ে নিশ্চয়তা দেয়া কঠিন। এমনিতেই মানুষ এখন বিমুখী। তারপর নিজেদের কাঁদা ছোড়াছুড়ি ভোটারদেরকে পাবনা পৌরসভায় আরও বিমুখ করতে প্রভাবিত করতে পারে।

বিএনপির স্থানীয় নেতারা বলছেন, বর্তমান দেশের পরিস্থিতিতে নিরপেক্ষ নির্বাচনের সম্ভাবনা অনেক আগেই হারিয়েছে। এসব নির্বাচন এখন নিয়ম রক্ষার নির্বাচন হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানুষের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে আর আগ্রহ নেই। পাবনায় পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে যা হচ্ছে তা ক্ষমতাসীনদের ‘নাটক’ও হতে পারে। আর যদি সত্যিই তাদের মধ্যে বর্তমান পরিস্থিতি বিরাজ করে তাহলে পৌর নির্বাচনের ফল ভিন্ন হতে পারে। বিদ্রোহী নেতারা যেভাবে কাজ করছেন তাতে বড় ধরনের ‘বিতর্কিত নির্বাচন’ করা কঠিন হয়ে যাবে। সাধারণ মানুষ ভোট দেয়ার সুযোগ পেলে গত ১২ বছরের জমা রাখা ক্ষোপের বহিঃপ্রকাশ ঘটবে।

এমন ভাবনা থেকেই জেলার বিএনপির নেতারা এখন তাদের নির্বাচনী পরিকল্পনা নতুন করে সাজিয়েছেন। জোরদার করা হয়েছে প্রচার-প্রচারণা। এই প্রচার-প্রচারণায় যোগ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারাও। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই গত রবিবার বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপি আহবায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব হাসান জাফির তুহিনকে নিয়ে পাবনা শহরে বড় ধরনের শোডাউন দিয়েছে বিএনপি

এ বিষয়ে পাবনা জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সিদ্দিকুর রহমান সিদ্দিক পাবনা বার্তা ২৪ ডটকমকে বলেন, ‘নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে যদিও কোনও বাধা নেই, তবে আমরা তো আসলে আতঙ্কিত। আমাদের বিশ্বাস নির্বাচনের দিন হয়তো এখানে এক বড় ধরনের সহিংসতা হবে, কারণ আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপ যেভাবে ভাগ হয়ে গেছে তাতে সহিংসতার আশঙ্কা থাকছে।’

আওয়ামী লীগের বিভক্তির কারণে নতুন করে আপনাদের পরিকল্পনা আছে কি-না এমন প্রশ্নের তিনি বলেন, ‘এই ব্যাপারে আমাদের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গেও কথা হয়েছে। পরিকল্পনা একটা মাথায় মধ্যে আছে। শক্তিধররা দুই গ্রুপ হয়েছে, আর প্রশাসন কোন দিকে ভূমিকা রাখে সেটাও দেখার বিষয়। তবে দুই গ্রুপে ভাগ হওয়াতে পাবনা পৌরসভায় একটি নির্বাচনী পরিবেশ পেয়েছি। আর আমাদের একটাই এখন প্ল্যান যে, ওদের মধ্যে যতো সমস্যা সৃষ্টি হবে আমাদের জন্য ততো রাস্তা পরিষ্কার হবে।’

তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, তারা (আ.লীগ) দুই ভাবে বিভক্ত হওয়ার পর সাধারণ মানুষ এখন আমাদের দিকে ঝুকছে। সাধারণ জনগণের দ্বারে দ্বারে ঘুরতেছি। সাধারণ জনগণের সাড়াও পাচ্ছি। যদি নির্বাচনটা নিরপেক্ষ হয় তাহলে জনগণ আমাদের প্রার্থীর পক্ষে রায় দিবে। কারণ ইতোমধ্যে জনমত তৈরি হয়েছে। যদিও মানুষ সব সময়ে আতঙ্কে ভুগছে। আমরাও এই দুই গ্রুপের বিভেদের কারণে বড় ধরনের নৈরাজ্য আর সন্ত্রাসের আতঙ্কের মধ্যে আছি।

তিনি আরও বলেন, ‘এখন তো আমাদের মূল প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ নয়, এখন মূল প্রতিপক্ষ হয়ে গেছে প্রশাসন। ভোট এখন আর ছাত্রলীগ-যুবলীগ কাটে না, এখন প্রশাসনই কেটে দেয়। প্রশাসনই এখন সবকিছুর নেপথ্যে। ইতোমধ্যে ঈশ্বরদী পৌরসভাতে আমাদের প্রার্থীর সঙ্গে ওখানকার রানিং ওসির সঙ্গে হাতাহাতি পর্যায় চলে গিয়েছিল, আমাদের বিএনপির নেতাকর্মীদের দাঁড়াতেই দেয়নি। আর আমাদের ফরিদপুরে তো বিজয় ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে, শেষ মূহুর্তে তো আমরা একেবারে নিশ্চিত ছিলাম যে বিজয় আমাদের ছিল, সব কেন্দ্র আমরা গিয়ে কিন্তু একটি সেন্টারে গিয়ে দেখা গেল সেখানেই ১২শ ভোটের সমস্যা।’

error: কাজ হবি নানে ভাই। কপি-টপি বন্ধ