পাবনার বেড়া উপজেলার হাটুরিয়া-নাকালিয়া ইউনিয়নের পেঁচাকোলা গ্রামের কাছে জেলা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ চুইয়ে যমুনা নদীর পানি ভেতরে ঢুকছে। এতে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে উপজেলাবাসী। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জরুরিভিত্তিতে পানি চুইয়ে পড়ার স্থানে বালুর বস্তা ফেলে বিষয়টি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলেও আতঙ্ক কাটছে না এলাকাবাসীর।
জানা যায়, এক সময় পাবনা জেলার বেশির ভাগ অংশ বন্যায় প্লাবিত হত। কিন্তু জেলার সুজানগর ও বেড়া উপজেলায় পদ্মা ও যমুনা নদীর পার বরাবর বাঁধ নির্মাণের পর থেকে জেলার ৯০ ভাগ এলাকা বন্যামুক্ত হয়েছে। ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু বেড়া উপজেলার নগরবাড়ীতে এসে নিজে মাটি কেটে বাঁধটির উদ্বোধন করেছিলেন। তখন থেকেই এলাকাবাসী জেলা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের নাম দেয় ‘মুজিব বাঁধ’। এই বাঁধটির নির্মাণ কাজ পরিপূর্ণভাবে শেষ হয় ১৯৮০ এর দশকে।
এলাকাবাসী জানান, যমুনা নদীর পানি বেড়ে চলায় বাঁধের বাইরে বেড়া উপজেলার শতাধিক গ্রাম বন্যায় ডুবে আছে। পাউবোর বেড়া কার্যালয় সূত্রে জানা যায় গতকাল (মঙ্গলবার, ২৮ জুলাই) সকালে উপজেলার নগরবাড়ী পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি বিপদ সীমার ৭৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। যমুনার পানির অত্যধিক চাপের কারণে বাঁধটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে বলে এলাকাবাসী মনে করছেন।
এদিকে বেড়া উপজেলায় ওই বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটির প্রায় ১৫ কিলোমিটার অংশের ঢালে ঘরবাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করছে কয়েক হাজার ভাঙনদুর্গত পরিবার। এর মধ্যে হাটুরিয়া-নাকালিয়া ইউনিয়নের পেঁচাকোলা এলাকায় বাঁধের ভেতরে ও বাইরের অংশে ভাঙনদুর্গতদের বসবাস সবচেয়ে বেশি।
এলাকাবাসী জানান, পেঁচাকোলা গ্রামের কাছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটি এমনিতেই দুর্বল হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এরই মধ্যে গত ছয় থেকে সাতদিন ধরে ওই স্থানে বাঁধ চুইয়ে বন্যার পানি ভেতরে ঢুকছে। এ অবস্থায় এলাকাবাসী আতঙ্কিত হয়ে নিজেরাই চুইয়ে পড়া স্থানে বালুর বস্তা ফেলেছেন। কিন্তু তাতে ভেতরে পানি ঢোকা বন্ধ না হওয়ায় পাউবো সোমবার (২৭ জুলাই) থেকে সেখানে বালুর বস্তা ফেরা শুরু হরেছে। এতে পানি চোয়ানো পুরোপুরি বন্ধ না হলেও কিছুটা কমেছে। কিন্তু এলাকাবাসীর আতঙ্ক তাতে কমছে না।
মঙ্গলবার (২৮ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মুজিব বাঁধ সংলগ্ন বাঁধের বাইরের অংশে বসবাস করা মনিরুল ইসলামের বাড়ির উঠান দিয়ে পানি ঢুকে বাঁধের ভেতরের অংশে বাঁধ সংলগ্ন মিজানুর রহমানের মুরগির খামারের মধ্য দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। সেখানে পাউবোর পক্ষ থেকে বেশ কিছু বালুর বস্তা ফেলে রাখা অবস্থায় দেখা যায়। কিন্তু তাতেও পানি চোয়ানো বন্ধ হয়নি। এলাকাবাসীর ধারণা কোন ইদুরের গর্ত দিয়ে এভাবে বন্যার পানি ভেতরে ঢুকছে।
ওই এলাকার বাসিন্দা বেগম খাতুন (৬০) বলেন, ‘পানি চুয়ানো শুরু হওয়ার পরের থ্যা ভয়ে রাইতে ঘুমাইতে পারতেছি না। মনে হয় এই বুঝি বাঁধ ভাইঙ্যা গেল।’
পেঁচাকোলা গ্রামের আরেক বাসিন্দা মোতালেব আলী বলেন, ‘পানি চোয়ানো দেইখ্যা ভয়ে দুই-তিন রাত পরিবারের সবাই মিল্যা বাড়িতে থাকতেছি না। বাঁধ ভাঙলে আমারই ভয় বেশি। কারণ আমার বাড়ি বাঁধের নিচে।’
হাঁটুরিয়া-নাকালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বাঁধ দিয়ে পানি চোয়ানোয় এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছিল। তবে পাউবো বালুর বস্তা ফেলে পানি চোয়ানো বন্ধ করার চেষ্টা করছে দেখে এলাকাবাসীর আতঙ্ক এখন কমেছে। আমি এ বিষয়টি সম্পর্কে সার্বক্ষণিক খোঁজ রাখছি।’
পাউবোর বেড়া কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল হামিদ বলেন, ‘সেখানে কোনো বিপদ যাতে না ঘটে সে ব্যাপারে আমরা সার্বক্ষণিক তৎপর আছি। ঘটনাস্থলে বালুর বস্তা ফেলায় ইতিমধ্যে পানি চোয়ানো প্রায় বন্ধ হয়েছে। এ নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই।’