ফেসবুকে পরিচয়ের পর প্রেমের বিয়ে, এরপর অস্বীকার। পাবনার বেড়ায় প্রেম করে বিয়ে করে স্ত্রীকে অস্বীকার করার অভিযোগ পাওয়া গেছে হাসান নামে এক ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার বিরুদ্ধে। হাসান পাবনা জেলার বেড়া থানার নতুন পেচাখোলা গ্রামের মো. আরিফ শেখের ছেলে।
এ দিকে স্বামীর অধিকার ফিরে পাওয়ার দাবিতে ও যৌতুকের জন্য নির্যাতন করায় ন্যায্য বিচারের আশায় মুন্সিগঞ্জ জজ আদালতে হাজির হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইবুনালে মামলা করেছেন ভূক্তভোগী আফসানা বেগম মিমি।
আদালতের মামলা ও বাদীনির অভিযোগে সুত্রে জানা গেছে, পাবনার বেড়া উপজেলার নতুন পেচাকোলা গ্রামের আরিফ শেখের ছেলে প্রতারক হাসানের সাথে দুই বছর পূর্বে মুন্সিগঞ্জের সহজ সরল নিরীহ গৃহিনী আফসানা বেগম মিমির সাথে ফেসবুকে পরিচয় হয়। প্রথমে প্রেম ও পরে ইসলামী শরা শরীয়ত মোতাবেক সিরাজগঞ্জে হাসানের এক বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে ২০১৮ সালে ডিসেম্বরে রেজিস্ট্রি কাবিন করে বিয়ে হয়।
বিয়ের সময় আফসানা বেগম মিমির কাছ থেকে তিনলাখ টাকা যৌতুক দাবি করলে আফসানা বেগম মিমির পরিবার দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা যৌতুক প্রদান করে। এর পরে যৌতুকের টাকা পেয়ে মো. আরিফ শেখ তার পুত্রবধু আফসানা বেগম মিমিকে তারা বাড়িতে তুলেন।
বিয়ের কিছুদিন পর যৌতুকের টাকা শেষ হলে স্বামী হাসান, শশুর মো. আরিফ শেখ ও শাশুরি হালিমা বেগম পূনরায় বাদিনীর নিকট যৌতুক দাবি করেন। পরবর্তীতে আসামীগণ নানা সময়ে যৌতুকের টাকার জন্য আফসানা বেগম মিমিকে নির্যাতন করে। এতে মিমি অসুস্থ হয়ে পড়লে বেড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা করে সুস্থ হন মিমি।
নির্যাতনের হাত হতে বাঁচার জন্য আফসানা বেগম মিমির পরিবারের লোক জন কয়েক ধাপে বিকাশের মাধ্যমে ছয় লাখ টাকা প্রদান করে। কিন্তু তাতেও আসামীদের যৌতুকের দাবি ও অত্যাচার নির্যাতন শেষ হয় নাই। বর্তমানে স্বামী হাসান ও তার পরিবার আবারও তিন লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে শারীরিক অত্যাচার নির্যাতন শুরু করেন। শেষে নিরুপায় হয়ে ন্যায় বিচারের আশায় গত ৩১ অক্টোবর ২০ইং মিমি স্বামী হাসানকে প্রধান আসামী করে ৫জনের বিরুদ্ধে মুন্সিগঞ্জ জজ আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন।
সুত্র জানায় মামলার চার মাস বিজ্ঞ আদালতের তদন্ত শেষ করে আদালত মিমির মামলা আমলে নিয়ে আসামী হাসানের বিরুদ্ধে সমন জারি করেছে। আগামী এপ্রিলে আদালতে স্ব-শরীরে হাজির হতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ভুক্তভোগী আফসানা বেগম মিমি বলেন, হাসান আমাকে রেজিস্ট্রি কাবিন করে বিয়ে করে এখন যৌতুকের জন্য নির্যাতন করায় মুন্সিগঞ্জে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে গত ৩১-১০-২০২০ইং তারিখে মামলা করেছি। মামলা নং ১৮৭/২০২০। আমি আমার স্বামীর সংসার করতে চাই। আমার পরিবারের পক্ষে আর যৌতুক দেয়া সম্ভব না। আমি স্বামীর অধিকার পাওয়ার দাবিতে ও যৌতুকের জন্য নির্যাতন বন্ধের জন্য সমাজের সুধীজন ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে এর সুষ্ঠু বিচার চাই। আমার স্বামী মো. হাসানের মামা নজরুল মিয়ার পরামর্শেই আমার স্বামীর পরিবার আমাকে আরো যৌতুকের টাকা ছাড়া গ্রহণ করতে চাইছে না। টাকা না হলে মামা নজরুল মিয়া তার ভাগিনা হাসানকে অন্যত্র বিয়ে করাবে। নজরুল আমার সংসার ভাংঙ্গতে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে চলেছে।
এ বিষয়ে মো. নজরুল মিয়া বলেন, মেয়েটি ষড়যন্ত্র করে হাসানকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। তাই তাকে কোনোভাবেই পরিবারের পক্ষ থেকে বাড়ির গৃহবধূ হিসেবে মেনে নেয়া সম্ভব না। প্রয়োজনে আমরা থানা প্রশাসনের সহায়তা নেব।
বিয়ের পর যে বাসায় ভাড়া থাকতেন হাসান ও মিমি সেই বাসার মালিক মুন্সিগঞ্জ ডেকড়া পাড়ার বাচ্চু মাঝির স্ত্রী মুক্তা বেগম বলেন, পাবনা জেলার বেড়া থানার নতুন পেচাখোলা গ্রামের মো. আরিফ শেখের ছেলে প্রতারক হাসান সাথে দ্ইু বছর পূর্বে মুন্সিগঞ্জের আব্দুল রশিদের মেয়ে আফসানা বেগম মিমির সাথে ফেসবুকে পরিচয় পরে ইসলামী শরা শরীয়ত মোতাবেক রেজিস্ট্রি কাবিন করে বিয়ে হয় জানার পরেই আমার বাসা ভাড়া দেয়া হয়। ভাড়া নেয়ার ৫/৬ মাস ভালই ছিল। তার পর থেকে আফসানা বেগম মিমির শশুর শাশুরী ও স্বমী হাসান টাকার জন্য নির্যাতন চালাত এটা এই এলাকার সবাই জানে। মিমির শমুর শাশুরী এখানেও এসেছে। হাসান একটি প্রতারক।
আফসানা বেগম মিমির বিয়ের বিষয়টি তার শশুর অস্বিকার করে নির্যাতনের বিষয়ে সমস্যা সমাধানের বিষয়টি দেখবেন বলে আশ্বাস দিয়ে ধৈর্য ধরার কথা বলে দিনের পর দিন ঘুরাতেন। একসময় তারা আফসানা বেগম মিমিকে কিছু টাকা নিয়ে সংসার থেকে চলে যেতে বলেন। আফসানা বেগম মিমি তাতে রাজি না হওয়ায় আত্মীয়স্বজন ও বিভিন্ন লোকজন দিয়েও হাসানের মামা মো. নজরুল মিয়া আফসানা বেগম মিমিকে হুমকি দিচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত হাসান বলেন, আমি কোনো যৌতুক চাইনি। তার সাথে আমার কিছুদিন আগে বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিলো এর বাইরে আর কিছু নয়। তাকে আমি বিয়ে করিনি। সে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছে। বিয়ের ছবির ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তা অস্বীকার করেন হাসান।