পাবনায় নৌকার প্রধান এজেন্টকে হাসপাতালে পাঠালেন বিদ্রোহীর সমর্থকরা

পাবনার বেড়া উপজেলার রূপপুর ইউনিয়নের নির্বাচন নিয়ে ওই ইউনিয়নের নৌকার প্রার্থী আবুল হাশেম উজ্জলের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট ইমরান হোসেন সাদ্দামকে (৩২) পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠিয়েছেন প্রতিপক্ষ আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র (বিদ্রোহী) প্রার্থী মাজহারুল ইসলাম মোহনের সমর্থকরা।

রবিবার (২ জানুয়ারি) রবিবার দুপুরে সতের মাসের শিশু সন্তানকে নিয়ে বাড়ির পাশের মাঠে ঘুরতে গিয়ে হামলার শিকার হোন তিনি। সাদ্দামের কোলের সন্তানকে কেড়ে নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দেয় তারা। এরপর রড ও হাতুড়ি দিয়ে নৃশংসভাবে পিটিয়ে গুরুত্বর জখম করে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।

পঞ্চম ধাপের ইউপি নির্বাচন ঘিরে পাবনায় সংঘাত সহিংসতা থামছেই না। বেড়া উপজেলার ঢালারচর, চাকলা ইউনিয়নে ঘটেছে সংঘাত। বহিরাগত সন্ত্রাসীদের সশস্ত্র মহড়া আতঙ্ক ছড়াচ্ছে সাধারণের মনে। গত কয়েকদিনে নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা দেয়ার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে এসব ইউনিয়নে। সর্বশেষ রূপপুর ইউনিয়নে নৌকার এজেন্টের উপর হামলার ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

রূপপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আসন্ন নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী আবুল হাশেম উজ্জল জানান, নির্বাচনে জনগণের সমর্থন না পেয়ে আনারসের প্রার্থী মোহন ও তার সমর্থক আমার কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিচ্ছে। আমি এলাকায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ধরে রাখতে তাদের উস্কানিকে তেমন গুরুত্ব দেয়নি।

রবিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আনারসের সমর্থক সুজন, শফিক, শিহাব, তিতাসের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা আমার ভাগ্নে ও প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট সাদ্দামকে হত্যার উদ্দেশ্যে নৃশংস আক্রমণ করেছে। সতের মাসের শিশু সন্তানকে কোল থেকে কেড়ে নিয়ে তাকেও মেরেছে। পরে, রড, হাতুড়ি দিয়ে সাদ্দামের মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ পিটিয়ে থেঁতলে দিয়েছে। আমি প্রশাসনের নিকট এর বিচার চাই। সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিতের দাবী জানাই।

হামলার ঘটনার পর গুরুত্বর আহত সাদ্দামকে স্বজনরা উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। সাদ্দামের সাথে হাসপাতালে আসা তার স্ত্রী তিশা বলেন, নির্বাচনে নৌকার পক্ষে কাজ করায় আমার স্বামীকে হত্যা চেষ্টা করা হয়েছে। আমার শিশুপুত্র তাসিনকেও তারা মেরেছে। পাবনা সদর হাসপাতালের অর্থপেডিক বিভাগের কনসালট্যান্ট ডা. জাহেদী হাসান রুমী জানান, সাদ্দামের মাথা ও পুরো শরীর থেঁতলে দেয়া হয়েছে। তার আঘাত গুরুত্বর। সিটি স্ক্যানের পর প্রকৃত অবস্থা বোঝা যাবে।

আমিনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রওশন আলম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। জড়িতদের আটকে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। মামলা প্রক্রিয়াধীন।

তবে, ঘটনায় নিজের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছেন আনারস প্রতীকের প্রার্থী মাজহারুল ইসলাম মোহন। তিনি বলেন, সাদ্দামের উপর কারা হামলা করেছে আমার জানা নেই। তার উপর হামলার সাথে নির্বাচনের সম্পর্ক নেই বলেও দাবী করেন তিনি।

এদিকে, পঞ্চম দফা ইউপি নির্বাচন ঘিরে অশান্ত হয়ে উঠছে একসময়ের চরমপন্থিদের অভয়ারণ্য আমিনপুর থানার ঢালারচর ইউনিয়নও। দূরবর্তী ও গহীন চরে রাজবাড়ী জেলার সীমান্তবর্তী এই ইউনিয়নে অতীতে প্রায় প্রতিটি ইউপি নির্বাচনেই এখানে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। আসন্ন নির্বাচন সামনে রেখে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের মহড়ায় সাধারণের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

অন্যদিকে, নৌকার চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীদের প্রচারণায় নামতে বাধা দেয়া ও হামলার অভিযোগ উঠেছে। শনিবার কাজীপাড়া ও রামনারায়নপুরে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মোমিনুর রহমানের ভোট চাওয়ার সময় হাতুড়ি, লোহার রড, পাইপ দিয়ে পিটিয়ে আহত করে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী কোরবান আলী সরদারের ছেলে নাসিমের নেতৃত্বে রাসেদ, আকরাম, শুকুর, তোরাপসহ ৮/১০ জনের একদল বহিরাগত সন্ত্রাসী বাহিনী।

এছাড়াও ঢালারচর ইউপির ঢালারচর কাজীপাড়ায় দেশীয় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী বাহিনীরা আসমা খাতুন ও দৌলতি বেগমকে পিটিয়ে আহত করে। অপরদিকে রামনারায়নপুরে শাহীন ও রিপনকে হাতুড়ি লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করে। আহত অবস্থায় তাদের তাদের উদ্ধার করে পাবনা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মমিন আরও বলেন, ঢালারচরের মানুষ নৌকার প্রার্থীকে প্রত্যাখ্যান করেছে। নির্বাচনে জনগণের সাড়া না পেয়ে চরমপন্থি সন্ত্রাসীদের দিয়ে ভোট ডাকাতির পরিকল্পনা করেছেন। তারা নৌকা ছাড়া কোন প্রতীকে ভোট দিতে দেয়া হবে না বলে প্রকাশ্যে হুমকি দিচ্ছে। এসব কেন্দ্রে নিরাপত্তার জন্য আমি জেলা পুলিশ ও নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছি।

তবে, প্রচারণায় বাধা দেয়ার অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবী করেছেন নৌকার চেয়ারম্যান প্রার্থী কোরবান আলী সরদার। তিনি বলেন, মমিন নির্বাচনে জনসমর্থন না পেয়ে বিতর্ক সৃষ্টির চেষ্টা করছে। ষড়যন্ত্র করে নৌকার বিজয় আটকে রাখা যাবে না।

আমিনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রওশন আলী জানিয়েছেন, বহিরাগত সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে পুলিশী অভিযান বাড়ানো হয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে সব ধরণের ব্যবস্থা নেয়া হবে।

error: কাজ হবি নানে ভাই। কপি-টপি বন্ধ