নানা আলোচনা-সমালোচনা শেষে পাবনা পৌরসভায় নজিরবিহীন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (৩০ জানুয়ারি) সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়, বিরতিহীনভাবে চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
তবে সকালের দিকে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটারদের লাইন কমতে শুরু করে। দুপুরের পর থেকেই প্রায় অধিকাংশ কেন্দ্রই ভোটার শূন্য হয়ে পড়ে। সকালে যে সক কেন্দ্র ভোটারদের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে, দুপুরের পর সেইসব কেন্দ্রে ভোটার দেখা যায়নি। ফলে দুপুরের পর থেকে ভোটগ্রহণের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের অলস সময় পার করতে দেখা গেছে।
নির্বাচনে প্রশাসনের কড়াকড়ি ও তৎপরতা সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ার মতো। সকল কেন্দ্রের সামনেই পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির সদস্যদের গুরুতের সাথে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। প্রতিটি কেন্দ্রের সামনে অন্তত ২০-৩০ জন আইনশৃঙ্লা বাহিনীর সদস্য দায়িত্বে ছিলেন। কেন্দ্রে সামনে বা আশপাশে ভোটার ছাড়া কাউকে দেখলেও সরিয়ে দিয়েছেন।
এছাড়াও দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরাও সারাক্ষণ কেন্দ্রের সামনে দায়িত্ব পালন করেছেন। শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ও অলিগলিতে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছিল। বিপুল পরিমাণ পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির সদস্যরা পুরো শহর টহল দিচ্ছেন। প্রশাসনের এমন উদ্যোগ ও ব্যবস্থাকে সাধারণ মানুষ সাধুবাদ দিচ্ছেন।
কয়েকজন ভোটার পাবনা বার্তা ২৪ ডটকমকে বলেন, আসলে বর্তমান সময়ে আমরা এমন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোট আশা করিনি। বিশেষ করে বৃহস্পতিবারসহ গত কয়েকদিনে পাবনায় যে পরিমাণে আতঙ্ক বিরাজ করছিল, তাতে ভোট দেয়ার আগ্রহই হারিয়ে ফেলেছিলাম, কিন্তু সকালের দিকে পরিবেশ সুন্দর দেখায় ভোট দিতে এসেছি। কোন বাধা ছাড়াই যেকোনো প্রতীকে ভোট দেয়া যাচ্ছে। এতে প্রশাসনও বেশ সহযোগিতা করছেন।
শহরের বিশিষ্ট নাগরিক ও প্রবীণ ভোটার ইয়াসিন আলী মৃধা রতন বলেন, আমার দেখা স্বাধীনতার পর এই প্রথম সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট অনুষ্ঠিত হলো। এমন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট দিতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত।
এদিকে নির্বাচন নিয়ে সব প্রার্থী ও তাদের পোলিং এজেন্টরা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। সাধারণ ভোটাররাও সন্তষ্টি প্রকাশ করেছেন। ভোটাররা বলছেন, পাবনায় গত ১২ বছরে এমন নজিরবিহীন শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ হয়নি। এজন্য প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানান তারা।
ভোটগ্রহণের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সিদ্দিকুর রহমান সিদ্দিক। তিনি পাবনা বার্তা ২৪ ডটকমকে বলেন, ১২ বছর পর এমন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট দেয়ার সুযোগ পেয়েছি। আমি পাবনার নির্বাচন পরিবেশ নিয়ে অত্যন্ত খুশি।
আলোচিত এই নির্বাচনে ৫ মেয়র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন- ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জেলা যুবলীগের আহবায়ক আলী মুতর্জা সনি বিশ্বাস (নৌকা) এবং আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী (স্বতন্ত্র) জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি শরিফ উদ্দিন প্রধান (নারকেল গাছ), বিএনপির মনোনীত জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাবেক এডওয়ার্ড কলেজের ভিপি নূর মোহম্মদ মাসুম বগা (ধানের শীষ), জাতীয় পার্টি মনোনীত চৌধুরী মোহম্মদ মাহাবুবুল হক (লাঙ্গল) , ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত আবু বক্কর সিদ্দীক (হাতপাখা)।
এছাড়া জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ২০১৫ সালে নৌকার প্রার্থী মো. রকিব হাসান টিপু এবার মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে জমা দিলেও শেষ পর্যন্ত তিনি সরে গেছেন। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জমা দেয়া পাবনা পৌর জামায়াতের সেক্রেটারি রকিব উদ্দিনের মনোনয়ন বাতিল করে নির্বাচন কমিশন।
উল্লেখ্য, পাবনা পৌরসভার ১৫টি ওয়ার্ডের ৩৯টি ভোট কেন্দ্রের ৩৪৬টি বুথে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। মোট ১ লাখ ১২ হাজার ২৪৪ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। মেয়র পদে ৫ জন, সাধারণ পুরুষ কাউন্সিলর পদে ৭৪ জন ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ১৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।