পাবনায় গরু নিয়ে চরম শঙ্কায় খামারিরা

পাবনার বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলার গরু পালনকারীরা গরু বিক্রি ও দাম নিয়ে এবার চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। করোনা পরিস্থিতির কারণে দুই উপজেলার প্রায় ছয় হাজার খামারি ও কৃষকরা এবার কোরবানির হাটে ও বাড়ি থেকে গরু বিক্রির ভরসা করতে পারছেন না।

এমন অবস্থায় এখন থেকেই অনেক যত্ন ও ধারদেনা করে বড় করা গরুগুলোকে বিক্রির চেষ্টা করছেন তাঁরা। কিন্তু অন্যান্য বছরের মতো এবার বাড়ি বাড়ি ঘুরে গরু কেনায় আগ্রহী ব্যাপারীদের দেখা নেই। এ ছাড়া ক্রেতার অভাবে হাটে নিয়েও গরু বিক্রি করা যাচ্ছে না বলে জানা যায়।

দুই উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় ও খামারিদের সূত্রে জানা যায়, বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলা দেশের অন্যতম গরু লালন-পালনকারী বিসেবে ব্যপক পরিচিত রয়েছে সারা দেশে। দুই উপজেলার প্রায় পাঁচ হাজার খামারে, প্রায় পঁচিশ-ত্রিশ হাজারেরও বেশি গরু কোরবানির হাটে বিক্রির জন্য পালন করা হয়েছে। প্রতিবছর কোরবানির হাট শুরুর মাস দেড়েক আগে থেকেই দেশের বিভিন্ন এলাকার গরুর ব্যাপারীরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে গরু কেনা শুরু করেন। এ ছাড়া দুই উপজেলার পশুর হাটগুলো থেকেও ব্যাপারীরা গরু কিনে দেশের বিভিন্ন জেলার হাটে বিক্রি করে থাকেন।  আরেকদিকে বেড়েছে গো খাদ্যের দাম আগাম বর্ষার পানি ও বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে ঘাসের খেত। জানা যায় গত তিন মাসে ভূষির বস্তা প্রতি দাম বেড়েছে তিন শত টাকা। অন্যান্য গো খাদ্যের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানা গেছে। এমন অবস্থায় গরু পালন ও বিক্রি নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছে খামারি ও সাধারন কৃষকেরা।

বেড়া উপজেলার চাকলা গ্রামের খামারি মান্নান মাষ্টার জানান, করোনার পরিস্থিতর কারণে এবার গরু কেনায় আগ্রহী  ব্যাপারীদের দেখাই নেই। এমন পরিস্থিতিতে আমার মত বহু খামারি চিন্তায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। তাঁদের আশঙ্কা এবারের কোরবানির হাটে ক্রেতার অভাবে কম দামে গরু বিক্রি করতে হতে পারে। তাই কোরবানির হাট শুরু হতে মাসখানেক দেরি থাকলেও গরু পালনকারীরা এখনই তাঁদের গরু বিক্রির চেষ্টা করে যাচ্ছেন বলে তিনি জানান।

বেড়া-সাঁথিয়ার অন্যতম গরু ব্যবসায়ী হলেন বেড়া পৌর এলাকার বৃশালিখা মহল্লার আব্দুল মোমিন। তিনি জানান, অন্যান্য বছরে গরুর ব্যাপারীরা এত দিনে ঢাকার কোরবানির হাটকে সামনে রেখে গরু খামারীদের কাছ থেকে গরু কেনা শুরু করে দেন। কিন্তু এবার বেশির ভাগ ব্যাপারী ভয়ে গরু কিনছেন না। গত বছরে তিনি এত দিনে ৬০টির মতো গরু কিনেছিলেন বলে জানান। কিন্তু এবার কেনেননি। তিনি আরও বলেন, করোনার কারনে হাটে গরুর দাম কেমন হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণেই তিনি গরু কিনছেন না।

সাঁথিয়া উপজেলার আফড়া গ্রামের খামারি শাজাহান আলী জানান, এবার কপালে যে কি আছে তা বুঝবার পারতিচিনা। এহন পর্যন্ত একজন ব্যাপারিও গরু দেখবার আসে নাই হাটেও গরুর দাম নাই। গরু বেচবার পারবোনে কি না হেই চিন্তায় ঘুম আসে না। গরু কে তো না খাইয়ে রাহা যায় না, ৩০ টি গরু পালতে কয়েক লাখ টাহা খরচ হচ্ছে। দুই মাস হইছে রাহালদের বেতনও দেই নাই। গরু বেচবার না পারলি খুব মুসকিলে পরে যাবো নে এবার।

সরেজমিনে গতকাল মঙ্গবার সাঁথিয়ার করমজা চতুর হাটে গিয়ে দেখা যায়, জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রচুর খামারি ও কৃষকরা গরু বিক্রির জন্য নিয়ে এসেছেন। কিন্তু ক্রেতা নেই বললেই চলে।

হাঁটে গরু বিক্রি করতে আসা বেড়া কুশিয়ারা গ্রামের ছাত্তার আলী, জানান, সকাল দশটায় তিনটি গরু আনছি এহন বাজে ১টা কোন ব্যাপারী দামই কয় নাই। এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে গরু কিনেছি। দোকান বাঁকি করে গরু পালন করেছি, দোকানদারদের হালখাতা করতে হবে। এহন  গরুর বিক্রি করতে না পারলি বিপদে পড়তে হবে। অন্য বছর এই সময়ে বাড়ি থেকেই গরু বিক্রি হয়ে যায়। কিন্তু এবার হাটে এনেও বিক্রি করা যাচ্ছে না। সামনের কোরবানির হাটে গরুর দাম নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তাঁরা।

ছাগলের হাঁট ঘুরে একই চিত্র দেখা যায়, ব্যাপারীর সংখ্যা নেই বললেই চলে। অনেক ছাগল বিক্রেতাকে হাঁট থেকে ছাগল ফিরিয়ে আনতে দেখা গেছে।

করমজা চতুর হাটের পশুর হাট পরিচালনাকারীদের অন্যতম মিজানুর রহমান (উকিল) বলেন, আমাদের হাটে ক্রেতা বিক্রেতাসহ সর্বসাধারনের জন্য মাস্ক ছাড়া প্রবেশ নিষেধ ঘোষনা করেছি। হাটে বেচাকেনা একেবারেই নেই বললেই চলে। অন্য বছরের মত ঢাকা, মানিকগঞ্জ, চিটাগং এর ব্যাপারীরা আসছেনা। কমবেশি যা বিক্রি হচ্ছে তা স্থানিয় ব্যাপারী ও কৃষকদের কাছে।

error: কাজ হবি নানে ভাই। কপি-টপি বন্ধ