পাবনায় গরুর হাটে ক্রেতা সংকট, ছাগলে জমজমাট

আর মাত্র এক সপ্তাহ বাকি পবিত্র ঈদুল আজহার। এই সময়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ব্যাপারী ও সাধারণ ক্রেতাদের ভিড়ে মুখরিত হয়ে ওঠে পাবনার কোরবানির পশুর হাটগুলো। কিন্তু এবার ঘটছে উল্টো। ঈদের সময় ঘনিয়ে এলেও পাবনার হাটগুলোতে এসব ব্যাপারী ও সাধারণ ক্রেতাদের তেমন দেখা মিলছে না। ফলে হতাশা প্রকাশ করেছেন খামারি ও সাধারণ পশু পালনকারীরা।

তবে উল্টো চিত্র দেখা গেছে ছাগলের হাটগুলোতে। কেনাবেচায় বেশ জমজমাট হয়ে উঠেছে ছাগলের হাট। গরুর হাটে যেখানে ফাঁকা সেখানে ছাগলের হাটে পা ফেলানোর জায়গা নেই। এখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ব্যাপারীদের সংখ্যাও চোখে পড়ার মতো। সাধারণ বিক্রেতাদের কাছ থেকে কিনে ছোট ছোট পিকআপ আর ট্রাকে ভর্তি করছেন তারা। রয়েছে স্থানীয় সাধারণ ক্রেতারাও।

পাবনা জেলা ঐতিহ্যবাহী হাজিরহাট, আতাইকুলার পুষ্পপাড়া হাট, ঈশ্বরদীর অরণখোলা হাট, সাঁথিয়ার করমজা হাট, ভাঙ্গুড়ার শরৎনগর হাট, চাটমোহরের অমৃতকুন্ডা ও বেড়ার চতুর হাটসহ বেশ কয়েকটি পশুর হাট ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।

শুক্রবার (১ জুলাই) দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাবনা শহরতলীর হাজিরহাট ঘুরে দেখা যায়, গরুর হাটে হাজার হাজার পশু নিয়ে বিক্রেতারা অপেক্ষা করছেন। ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকলেও ক্রেতাদের দেখা মিলছে না। মাঝে মধ্যে দুই একজন ক্রেতা গরু নাড়াচাড়া করেই চলে যাচ্ছেন। দরদাম করতেও তাদের তেমন আগ্রহ নেই। এতে হতাশা প্রকাশ করেছেন বিক্রেতারা।

গ্রাম থেকে কিনে ১০টা গরু নিয়ে আসছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আবুল কালাম। তিনি পাবনা বার্তা ২৪ ডটকমকে বলেন, প্রতিবছর ঈদের এই সময়টা গরুর হাট জমজমাট থাকে। ‌ বিশেষ করে ঢাকার ব্যবসায়ীরা এখানে গরু কিনতে আসেন কিন্তু এবার তাদের তেমন দেখা মিলছে না। বিকেল‌ ৪টা বাজে এখনো একটি গরুও বিক্রি করতে পারেনি। ‌ টাকা বাকি রেখেই কৃষকের গরু নিয়ে হাটে আসছি, বিক্রি করতে না পারলে পথে বসে যাব।

ময়েজ উদ্দিন নামের এক কৃষক দুইটা গরু নিয়ে আসছেন। আগেরদিন পুষ্পপাড়া হাটে বিক্রি করতে না পারায় আজ (শুক্রবার) নিয়ে আসছেন হাজিরহাটে। এখানেও দেখা পাচ্ছেন না ক্রেতার। ‌ হতাশা প্রকাশ করে তিনি পাবনা বার্তা ২৪ ডটকমকে বলেন, মাঝে মধ্যে দু-একজন ক্রেতা আসছেন, কিন্তু গরুর নাড়াচাড়া করে দাম না বলেই চলে যাচ্ছেন। আবার এক-দুজন দামও বলছেন। কিন্তু কেউ সঠিক দাম বলছেন না। গো-খাদ্যের দাম ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় এবার গরু পালন করতে গত বছরের তুলনায় বেশ খরচ হয়েছে। চাহিদা মতো দামে বিক্রি করতে না পারলে আগামীতে গরু পালন করতে পারব কিনা সেটাই ভাবছি।

গরুর হাটে যখন এরকম হতাশার ছাপ ঠিক পাশেই ছাগলের হাটে চলছে বিক্রেতাদের উচ্ছ্বাস। সেখানে তিল ধারনের ঠাঁই নাই। নির্ধারিত স্থান ছাপিয়ে পাশের সড়কগুলোতেও চলছে বেচাকেনা। ‌ তবে দাম নিয়ে হতাশ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা আর বিক্রেতারা বলছেন- দাম বেশি নয় ছাগলের খাদ্যের দামের তুলনায় বরং অনেক কম।

ছাগল বিক্রেতা আব্দুর রউফ পাবনা বার্তা ২৪ ডটকমকে বলেন, মোটামুটি বাজারে বেচাকেনা হচ্ছে। কিন্তু দাম তুলনামূলক কম। কারণ ছাগলের খাদ্যের যেপরিমাণ দামে তাতে ছাগলের পালন করে তেমন লাভ হচ্ছে না।

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, করোনা ভাইরাসের মহামারিতে মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা যে বেহাল অবস্থা ছিল তা এখনও কাটেনি। তার উপর দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের সংসার জীবন টালমাটাল।‌ এইসবের প্রভাবই পড়ছে কোরবানির পশুর হাটগুলোতে। যারা আগে গরু কোরবানি দিতেন তারা এখন হয়তো ছাগলের কথা ভাবছেন। আবার অনেকে কোরবানির দেয়ার সামর্থ্যটুকুও হারিয়েছেন।

জেলা প্রাণী সম্পদ অধিদফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. কৃষ্ণ মোহন হালদার পাবনা বার্তা ২৪ ডটকমকে বলেন, পাবনায় খামারি রয়েছে ২৩ হাজার ৫৯০ জন। এসব খামারি ও সাধারণ কৃষকের পালনে এবার পাবনায় মোট কোরবানির পশু প্রস্তুত করা হয়েছে ৬ লাখ ৫ হাজার। এর মধ্যে গরু ও মহিষ রয়েছে ১ লাখ ৭২ হাজার আর ছাগল ও ভেড়া প্রস্তুর রয়েছে ৩ লাখ ৩৩ হাজার। গতবার জেলায় কোরবানির চাহিদা ছিল আড়াই লাখ, এবার চাহিদা ধরা হয়েছে প্রায় ৩ লাখ। বাকি পশু রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় চলে যাবে।

error: কাজ হবি নানে ভাই। কপি-টপি বন্ধ