পাবনার ফরিদপুর পৌরসভার মেয়র খন্দকার মো. কামরুজ্জামান মাজেদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি, বিপুল উৎকোচ নিয়ে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে চাকুরি প্রদান ও মন্দিরের জায়গা অবৈধ দখল করে এবং ভেঙে ফেলার অভিযোগ উঠেছে।
মাজেদের বিরুদ্ধে এ সব দুর্নীতির ১৬ টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তদন্তের দাবীতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়, দুর্নীতি দমন কমিশন ও জেলা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ প্রদান করা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে মানুষ ফুসে উঠেছে ও মানুষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। মেয়র মাজেদের বিরুদ্ধে এ ধরণের অভিযোগ এখন ফরিদপুরসহ গোটা পাবনাবাসীর মুখে মুখে। তবে এ সব অভিযোগকে অসত্য ও ভিত্তিহীন দাবী করেছেন মেয়র খন্দকার মো. কামরুজ্জামান মাজেদ।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, ফরিদপুর পৌরসভার মেয়র খন্দকার মো. কামরুজ্জামান মাজেদ জাল ড্রাইভিং লাইসেন্স ও জাল ভোটার আইডি কার্ড তৈরি করে বয়স গোপন করে তার চাচাতো ভাই মো. আব্দুল মমিনকে পৌরসভার ড্রাইভার পদে নিয়োগ দিয়েছেন। এ ছাড়া শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ ও ন্যাশনাল আইডি কার্ড জাল করে মেয়রের ভাতিজি শিউলি খাতুনকে পৌরসভার লাইসেন্স পরিদর্শক পদে চাকুরি প্রদান করেছেন। এ ছাড়া অন্তত ৫০ লক্ষ টাকা উৎকোচ নিয়ে ১৬ জনকে মাষ্টাররোলে চাকুরি দিয়েছেন। যারা পৌরসভার কোন কাজই করেনা অথচ মাস গেলে বেতন তুলে নেয়। পৌর এলাকার বিনোদবাড়ী ঘাটে মেয়রের আপন ছোট ভাই অবৈধ দোকানপাট তৈরি করে সেলামি নিয়ে বিক্রি করছেন। বনওয়ারীনগরে হাটের পেরিফেরিভুক্ত জায়গা জোড়পুর্বক দখলের মাধ্যমে ঘর নির্মাণ করে বিপুল টাকার বিনিময়ে সে সব বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগে আরও প্রকাশ, মেয়র নিজের পছন্দের লোক ছাড়া পৌরসভার কোন ঠিকাদারী লাইসেন্স নবায়ন করেননা। আর কৌশলে পৌরসভার সব কাজ নামকাওয়াস্তে ঠিকাদার দেখিয়ে সকল কাজ নিজেই করে থাকেন। বনওয়ারীনগর সিবিপি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে গোপালনগর ওয়াপদা বাধ পর্যন্ত ৯২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে রাস্তার সিল কার্পেটিংয়ের কাজ করা হচ্ছে। যা খুবই নি¤œমানের।
গোপালনগর গ্রামের জাফর ইকবাল সরকার বলেন, গত বছর একই রাস্তার সংস্কার করা হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে খোয়া পিচ উঠে তা চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। সেই রাস্তা আবারও ৯২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে পিচ কাপেটিং করছে। এ ভাবে সরকারের টাকা অপচয় হচ্ছে কিন্তু লাভবান হচ্ছেন মাজেদ সাহেব।
তিনি আরও জানান, মেয়র বনওয়ারীনগর সিবি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি হিসেবে বিপুল টাকা নিয়ে বেশ কয়েকজন অযোগ্য শিক্ষককে নিয়োগ দেন। হাদল মাদ্ররাসার সভাপতি হয়ে মাদ্রাসার জমি বিক্রি করে এবং অযোগ্য শিক্ষককে নিয়োগ দিয়ে বিপুল টাকা হাতিয়ে নেন। এ ছাড়া বনওয়ারীনগর খেলার মাঠে জেলা প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করে মুক্তমঞ্চ নির্মাণ করে কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন। ফরিদপুর পৌরভবনের দ্বিতল ভবন নির্মাণে ব্যাপক দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া হয়। কাজ না করেই প্রায় ৫০ লক্ষ টাকার বিল তুলে নেওয়া হয়েছে।
জাফর ইকবাল আরও বলেন, ফরিদপুর বিএম কলেজ সংলগ্ন বিশাল খাস পুকুর কাবিখার প্রকল্প দেখিয়ে ভরাট করে আবার সেখানে গরুর হাট বসিয়ে বিপুল টাকা আতœসাত করেন। এ ছাড়া নভেল করোনা ভাইরাসে পৌরসভার জন্য সরকারী সহায়তার ১৫ লক্ষ টাকা পুরোটাই মেরে দেন। ফরিদপুর পৌর হ্যাচারীর জায়গা দীর্ঘ ১২ বছর নিজে দখল করে মাছ চাষ করে বিপুল টাকা ব্যাক্তিগত তহবীলে নিয়েছেন। এ ছাড়া ফরিদপুর পৌরসভার ট্রাক ও রোলার ভাড়ার বিপুল টাকা এবং আয়কর ভ্যাট এবং আপ্যায়ন দেখিয়ে অন্তত ৮ লক্ষ আতœসাৎ করা হয়েছে।
গোপালনগর শ্রী শ্রী কালিমাতা মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক দীপক কুমার সরকার কাঞ্চন বলেন,এই মন্দিরের পুর্জা পাবনের জন্য কারো কাছ থেকে অর্থ নেওয়া হয়না। নিজের জায়গার সদ্ব্যাবহার করে সেখান থেকে যে অর্থ পাওয়া যায় তাই মন্দিরের জন্য ব্যয় করা হয়। গত ২৮ মার্চ পৌর মেয়রের নির্দেশে তার সন্ত্রাসী বাহিনী মন্দিরের জায়গা দখল করে নেয় এবং সেখানে মন্দির কমিটির বসার জন্য একটি ঘর ভেঙ্গে ফেলে। এ ছাড়া মেয়র তার বাহিনীর মাধ্যমে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে নির্যাতন, দলীয় নেতাকর্মিদের উপর অন্যায়ভাবে জুলুম নির্যাতন চালান বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এ সব অভিযোগ অস্বীকার করে মেয়র খন্দকার মো. কামরুজ্জামান মাজেদ বলেন, পৌরসভার টেন্ডার দলীয় নেতাকর্মিদের মধ্যে ভাগ করে দেইনা; যার জন্য তারা এ সব অভিযোগ করছে। তিনি আরও বলেন, এ সব অভিযোগ দেখার দায়িত্ব সাংবাদিকের নেই। সরকারি সংস্থা আছে মন্ত্রনালয় আছে তারা তদন্ত করবে। তা ছাড়া অন্য কারো জিজ্ঞাসা করার এখতিয়ার নেই।
স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক (উপ-সচিব) শাহেদ পারভেজ বলেন, এ সব অভিযোগ তাদের কাছে এখনও আসেনি। আসলে মন্ত্রনালয়ের সঙ্গে আলাপ করে পরবর্তি করনীয় করবো।
পাবনার জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে খোজ নিতে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট সাইফ উল্লাহ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। রির্পোট আসলে পরবর্তি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।