পাবনার সুজানগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীনুজ্জামান শাহীন ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রওশন আলীর বিরুদ্ধে অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও পরিষদের কার্যকরী সদস্যদের অবজ্ঞাসহ নানা অভিযোগ উঠেছে।
এমন একগুচ্ছ অভিযোগ তুলে গত রবিবার (১৭ জুলাই) পাবনা জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও স্থানীয় সরকার বিভাগ, পাবনার উপ-পরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন উপজেলা পরিষদের এক ভাইস চেয়ারম্যান ও ৯টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।
অভিযোগকারীরা হলেন- সুজানগর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান কল্লোল, দুলাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম শাহজাহান, তাঁতিবন্দের চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন মৃধা, সাগরকান্দির চেয়ারম্যান শাহীন চৌধরী, রানীনগরের চেয়ারম্যান জি, এম, তৌফিক আলম পীযুষ, মানিকহাটের চেয়ারম্যান শফিউল ইসলাম, ভায়নার চেয়ারম্যান আমিন উদ্দিন, আহম্মদপুরের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন, সাতবাড়ীয়ার চেয়ারম্যান আবুল হোসেন ও হাটখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফিরোজ আহম্মেদ খান।
অভিযোগে তারা জানান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার রওশন আলী ও উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিনুজ্জামান শাহিনের যোগসাজসে উপজেলা পরিষদের কার্যকরী সদস্যদের অগোচরে দূরভিসন্ধিমূলক ভাবে উপজেলা পরিষদের কোনও নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে এক তরফাভাবে সমস্ত কার্যপরিচালনা করছেন।
তারা বলেন, কখন কি পরিমাণ বরাদ্দ আসে তা সদস্যদের জানানো হয় না। সদস্যরা অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরোধিতা করলে তাদের প্রকল্প বরাদ্দ থেকে বঞ্চিত করা হয়। তাছাড়া জন্মনিবন্ধন সংশোধনের ক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাধারণ মানুষকে চরমভাবে হয়রানি করছেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা (চেয়ারম্যান) উপজেলা পরিষদের সদস্য হওয়া সত্বেও উপজেলা পরিষদের কার্য বিবরণী সম্পর্কে কিছু জানতে পারে না। কৃষি পূনর্বাসন কৃষকের মাঝে সার-বীজ, দুস্থদের মাঝে ঢেউটিন, গ্রাম পুলিশের বাইসাইকেল বিতরণ, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক দুস্থদের মাঝে ঘর বরাদ্দ বিতরণ করার সময় তাদের বলা হয় নাই।
অভিযোগে তারা আরও দাবি করেন, তাছাড়া গত ইউনিয়ন পরিষদের নিবাচিত সদস্যদের শপথ অনুষ্ঠানে তাদের অবহিত করা হয় নাই। উপজেলা পরিষদের যে সকল মিটিং করা হয় তাহার কার্যবিবরণী দেওয়া হয় না। উপজেলা রাজস্ব খাতে টাকা ব্যয় করা হয় কিন্তু কোথায় কি ভাবে সে বিষয়ে তাদের সঙ্গে কোন আলোচনা করেন না , জমি হস্তান্তর কর ২% এর টাকা কিভাবে কোথায় কাজ করে সে বিষয়ে সদশ্যদের জানানো হয় না।
চেয়ারম্যানদের অভিযোগ, উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারের টাকা ১০% থেকে ১৫% টাকা স্ব-স্ব হার্টের কাজ করার কথা থাকলেও তা কোথাও করা হয় নাই। ২০২১-২০২২ অর্থবছরের উপজেলা উন্নয়ন তহবিলের আওতায় ৯৯ লক্ষ ১৯ হাজার ৭০০ টাকার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়, যা ছোট কাজগুলো টেন্ডার দিয়ে আর বড় বড় কাজগুলো পিআইসি ও কোটেশনের মাধ্যমে উপজেলা চেয়ারম্যানের যোগসাজসে বিভিন্ন অনিয়মের মধ্যে দিয়ে টাকা আত্বসাৎ করছেন বলে জানান তারা।
ভুক্তভোগীরা আরও জানান, তাছাড়া জাতীয় দিবস যেমন- ২১শে ফেব্রুয়ারি, ৭ই মার্চ, ২৬শে মার্চ, ১৫ই আগস্ট, ২১শে আগস্ট ও ১৬ ডিসেম্বরের কোনও অনুষ্ঠানে তাদের ডাকা হয় নাই। গত ১৯ মে ও ২৭ জুনে সমন্ময় কমিটির সভায় বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে ১৩ জন সদস্যের মধ্যেই ১১ জন সদস্য হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর না দিলেও আগের মতো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে একতরফাভাবে সমস্ত কার্য পরিচালনা করছেন।
তারা লিখিত অভিযোগে সুজানগর উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিনুজ্জামান শাহিন ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার রওশন আলীর বিরুদ্ধে সকল অনিয়মের সঠিক তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
এব্যাপারে সুজানগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রওশন আলী পাবনা বার্তা ২৪ ডটকমকে ষ বলেন, ‘আমিও শুনেছি তারা (চেয়ারম্যানরা) ডিসি অফিসে একটি অভিযোগ দিয়েছে, কিন্তু অভিযোগের কোনও কপি এখনও আমার কাছে আসে না। এজন্য এর বাইরে আমি কিছুই জানা নাই, বলার নেই। কপি পেলে আপনাদের পরে জানাতে পারবো।’
এ ব্যাপারে সুজানগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীনুজ্জামান শাহীন পাবনা বার্তা ২৪ ডটকমকে বলেন, ‘অভিযোগটির বিষয় আমি ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। তাদের অভিযোগগুলো মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। পরিষদের সকল কার্যক্রম তাদের সম্পৃক্ততার মাধ্যমেই করা হয়। বিভিন্ন সভা-অনুষ্ঠানে তাদের চিঠির মাধ্যমে দাওয়াত দেওয়া হয়, এখন উপস্থিত হওয়া না হওয়া তাদের নিজস্ব ব্যাপার। কিছু দুর্নীতিবাজ চেয়ারম্যান তাদের নিজস্ব স্বার্থ হাসিলের জন্য এসব করাচ্ছে।’
লিখিত অভিযোগের বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে স্থানীয় সরকার বিভাগ, পাবনার উপ-পরিচালক মো. মোখলেছুর রহমান পাবনা বার্তা ২৪ ডটকমকে বলেন, ‘অভিযোগ দিয়ে গেছে, কিন্তু আমার হাতে এখনও আসেনি। অভিযোগটি হাতে পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।’
এব্যাপারে মুঠোফোনে পাবনা জেলা প্রশাসক (ডিসি) বিশ্বাস রাসেল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের অভিযোগকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করার কথা বলে ফোন কেটে দেন।