সরিষার হলুদ ফুলের গন্ধ ছড়িয়েছে চারিদিকে। হলুদ হাসিতে ভরে উঠেছে দিগন্তজুড়ে। এছাড়াও পেঁয়াজ, মরিচ, মসুরসহ নানা ফসলে ভরে উঠেছে মাঠটি। এর মাঝেই হানা দিয়েছে মাটি খেকোরা। এমন ফসলি জমি নষ্ট করে কাটা হচ্ছে লোকাল মাটি। একাধিক ভেকু দিয়ে কেটে ট্রাক ও মাহেন্দ্র করে এইসব মাটি যাচ্ছে ইটভাটায় ও বসতভিটায়। এছাড়াও ট্রাক ও মাহেন্দ্রে চলাচলে রাস্তা ভেঙে দুর্ভোগে পড়ছে এলাকাবাসী।
পাবনা সদর উপজেলার চরতারাপুরে এমনভাবে মাটি কেটে ফসলি জমি নষ্ট করার অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্তরা অত্যান্ত প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন স্থানীরা। আর প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতেও দেখা যাচ্ছে না।
স্থানীয়রা জানান, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় একটি প্রভাবশালী চক্র চরতারাপুর ইউনিয়নের নতুন টাটিপাড়ার ফসলি মাঠে লোকাল বালু ও মাটি কাটছে। কিছু জমির মালিককে লোভ ও ভয়ভীতি এইসব জমির মাটি কাটা হচ্ছে। তবে মাটি কাটার বেশির ভাগ জমিই খাস। স্থানীয় প্রশাসন নীরব থাকায় ভূমি আইনকে বৃদ্ধাঙ্গলি দেখিয়ে ফসলি জমির মাটি বিক্রির মহোৎসবে মেতেছে চক্রটি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কৃষক জানান, তারা কৃষকদের কাছ থেকে কিছু জমি কিনেছে। আর বাকিগুলো সরকারি জমি। প্রশাসন ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের যোগসাজশে প্রতিদিন ৪-৫টি ভেকু মেশিনের মাধ্যমে কেটে পুকুর বানিয়ে ফেলা হয়েছে। এতে প্রচুর ফসলি জমি নষ্ট হচ্ছে। এছাড়াও অন্যের জমির ওপর দিয়ে জোর করে রাস্তা বানিয়ে মাহেন্দ্রতে মাটি নেওয়া হচ্ছে। পাশের দুবলিয়াতেই রয়েছে পুলিশ ফাঁড়ি। প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করছে। ফলে কৃষকরা অসহায়ত্ববোধ করছে।
এবিষয়ে কথা হয় চরতারাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান খানের সঙ্গে। মাটি কাটাতে তার, তার ভাই ও সহযোগীদের নাম উঠে আসলেও তিনি তা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘ভালোভাবে যাচাই করে যদি আমার করো নাম আসে তাহলে তাদের নাম দিয়ে নিউজ করে দেন সমস্যা নাই। কিন্তু এই মাটি কাটছে ৬নং ওয়ার্ডের মেম্বার বাবু ও সুজানগর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ফিরোজ । তারা প্রতিদিন ৪০-৫০ গাড়ি মাটি কাটছে। আপনি (সাংবাদিক) খোঁজ নেন।’
তবে বিষয়টি নিয়ে ব্যক্তিগত আক্রোশ দেখছেন সুজানগর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ফেরদৌস আলম ফিরোজ। তিনি বলেন, ‘গত ১০ বছরেও আমি ওই এলাকায় যাইনি। ওই এলাকাতেই চেয়ারম্যান সিদ্দিক খানের বাড়ি। গত ইউপি নির্বাচনে নৌকার বিপক্ষে সে ভোট করে জিতেছে। আমরা নৌকার পক্ষে ভোট চেয়েছি, কিন্তু চেয়ারম্যানের এলাকা হওয়ায় আমরা ওই এলাকাতেই যায়নি। এলাকাটি তার ভাই সাহাব উদ্দিন খান ও সহযোগিরা নিয়ন্ত্রণ করে। এমনকি ওই এলাকার মাঠ-ঘাট সবই তাদের নিয়ন্ত্রণে হয়। আমাদের নাম জড়ানো সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
এবিষয়ে পাবনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিদা আক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি ইতোমধ্যেই লোক পাঠিয়েছি। এখনই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’