পাবনার ভাঁড়ারা ইউনিয়নে নির্বাচনী সহিংসতায় স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী নিহতের ঘটনায় মামলা ও গ্রেফতার আতঙ্কে বেশ কয়েকটি গ্রাম পুরুষশূন্য হয়ে পরেছে। ভাঁড়ারা ইউনিয়ন এখন আতঙ্কের জনপদে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের বসতবাড়িতে হামলা ও লুটপাটের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ পাওয়া গেছে।
লুটপাটের ভয় ও অতঙ্কে বাড়ি থেকে মালামাল সরিয়ে নিতে দেখা গেছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন থাকতলেও মানুষের মধ্যে আতঙ্ক কাটছেনা। পুরুষশূন্য বাড়ি ঘরে নারী ও শিশুরা মানবেতর জীবন যাপন করছে।
জানা গেছে, পাবনা সদর উপজেলার ভাঁড়ারা ইউনিয়নের আসন্ন ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি সহিংসতায় স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রতিপেক্ষর হামলায় খুন হন।
এই খুনের ঘটনায় বর্তমান চেয়ারম্যান ও আওয়ামলীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী আবু সাঈদ খানকে প্রধান আসামী করে ৩৪ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনাম দিয়ে একটি হত্যা মামলা হয়েছে। সহিংসতা প্রতিরোধে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনসহ আসামীদের গ্রেফতারের জন্য চলছে অভিযান।
এদিকে আসামীদের আতী্ময়স্বজন, সমর্থক ও গ্রামের সাধারন মানুষদের বাড়িতে পরিকল্পিত ভাবে বাদী পক্ষের লোকজন হামলা করে বাড়ি থেকে গবাদিপশুসহ মামলামাল লুট করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে ভাঁড়ারা ইউনিয়নের আওরঙ্গবাদ, কোলাদী, নলদাহ, শ্রীপুরসহ আশেপাশের বেশ কয়েকটি গ্রাম পুরুষশূন্য হয়ে পরেছে। এইসব গ্রামের নারী ও শিশুরা আতঙ্কের মধ্যে দিনযাপন করছে। আবার এদের মধ্যে অনেকেই চেয়ারম্যান সাঈদ খানের সমর্থক ও এই মামলার আসামী হওয়ার কারনে তাদের পরিবারের সদস্যরা বাড়ি ঘড় ছেড়ে অন্যত্র রয়েছেন। এলাকায় পুলিশ প্রশাসনের নজরদারির মধ্যেই রাতের আধারে পুরুষশূন্য বাড়িতে ঘটছে লুটপাটের ঘটনা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ক্ষতিগ্রস্থ গ্রামবাসী জানান, ঘটনার পর থেকে চেয়ারম্যান সাঈদ সমর্থকদের প্রায় শতাধিক বসত বাড়িতে হামলা করেছে প্রতিপক্ষের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী সুলতান মামুদ খানের লোকজন। হামলার সময় বাড়িতে থাকা নারী ও শিশুদরে মারপিট করে প্রতিটি বাড়ি ভাঙচুর লুটতারাজ ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এলাকার সাধারন মানুষ রাজনৈতিক হানাহানি ক্ষমতার দখলদারিত্ব আর হত্যার রাজনীতে থেকে মুক্তিপেতে প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছেন।
কান্না জড়িত কন্ঠে চেয়ারম্যান আবু সাঈদ খানের স্ত্রী নারগীস আক্তার বলেন, আমাদের বাঁচান এমন ভয়াবহ পরিস্থির মধ্যে আগে কখনো পরিনি। আওয়ামীলীগ করেও আজ আমরা অসহায়ত্ব দিন যাপণ করছি। বাড়িতে একটি পুরুষ মানুষ নেই। শুধু বাড়ি বল্লে ভুল হবে আমাদের আশে পাশের কয়েকটি গ্রাম এখন পুরুষশূন্য। প্রশাসন আমাদেরকে ন্যায় সঙ্গত ভাবে সহযোগিতা করছেনা। মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদের পুরো পরিবারের সদস্যদের হয়রানী করছে। কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারছিনা। প্রতিদিন রাতে সুলতানের লোকজন আমাদের গ্রামে চেয়ারম্যান সমর্থকদের বাড়িতে হামলা ও লুটপাট করছে। প্রশাসান নিরব রয়েছে। আইনের সাহায্য সহযোগিতা সকলের জন্য হওয়া উচিৎ। সাধারন মানুষসহ আমারা নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছি। আমার স্বামীকে ওরা হত্যা করতে এসেছিলো। নিজেরা নিজেদের লোকদের হত্যা করে আমাদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। আমরা আইনের সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।
পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, নির্বাচনী সহিংসতায় ভাড়ারা ইউনিয়নে নির্বাচন স্থগিত করেছেন নির্বাচন কমিশন। হত্যাকান্ডের ঘটনায় নিহতের পিতা বাদী হয়ে চেয়ারম্যান আবু সাঈদ খানকে প্রধান করে একটি মামলা দায়ের করেছেন। এজহার নামীয় ৬ জনকে অস্ত্রসহ আটক হয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন এবং চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। রাতে টহল পুলিশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। ঘটনার পরে কিছু বাড়িতে হামলা অগ্নি সংযোগের ঘটনা হয়েছে। তবে বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। এর পরে যদি কেউ সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বা হামলা ভাঙচুর করে অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রসঙ্গগত, গত ১১ ডিসেম্বর সকালে ভাঁড়ারা ইউনিয়নের কোলাদী গ্রামে নৌকার প্রার্থী আবু সাঈদ খাঁন ও স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী সুলতান মাহামুদ খানের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা হয়। এসময় ইয়াসিন আলম নামে এক সতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রাথর্ী সুলতান মাহামুদ খানের ভাই গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।