সারাদেশের মতো পাবনাতেও হঠাৎ করে বেড়ে গেছে করোনাভাইরাস সংক্রমণ। মহামারির প্রথম থেকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও বর্তমানে জেলায় দৈনিক সংক্রমণ প্রায় ১৫ শতাংশের কাছাকাছি পৌছেছে।
জেলার নয় উপজেলার মধ্যে ঈশ্বরদী উপজেলায় করোনা সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি হলেও কেপিআই জোন হওয়ায় ঈশ্বরদী নিয়ে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ এখনই কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। করোনা সংক্রমণ আকস্মিকভাবে বেড়ে গেলেও জেলার করোনা চিকিৎসা সেবার এখনো কোনো অগ্রগতি হয়নি।
পাবনা জেলার সিভিল সার্জন ডা. মনিসর চৌধুরী জানান, করোনা সংক্রমণ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ায় এবং বিভিন্ন এলাকায় মানুষের নির্বিঘ্নে চলাচলের ফলে পাবনাতেও করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাচ্ছে।
পাবনায় বুধবার (২৩ জূন) আরও ৮৮ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এ নিয়ে গত ৭ দিনে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৫৫ জন। সংক্রমনের হার ১২.৫৯ শতাংশ। তবে পাবনা সদর ও ঈশ্বরদীতে সংক্রমনের হার ১৫ শতাংশের উপরে!
পাবনা জেলা সিভিল সার্জন অফিসের পরিসংখ্যান বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত পাবনা জেলায় তিন হাজার ৭শ ৮৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। সর্বমোট শনাক্তের হার ৩ দশমিক ৯৯ শতাংশ হলেও, গত সাত দিনের শনাক্তের হার ১২ দশমিক শূন্য ৫৯ শতাংশ বলে জানায় স্বাস্থ্য বিভাগ।
হঠাৎ করে পাবনায় যে পরিমাণে শনাক্তের হার বেড়েছে, তাতে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, চাপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীতে যে পরিস্থিতি হয়েছে পাবনার করোনা পরিস্থিতি একই ভাবে অবনতি হতে পারে।। ইতোমধ্যে পাবনার আরেক প্রতিবেশী জেলা কুষ্টিয়া করোনা পরিস্থিতি ব্যাপক আকার ধারণ করেছে।
পাবনায় শনাক্ত বেশীরভাগই ঈশ্বরদী উপজেলার রোগী বলে জানান সিভিল সার্জন। তিনি বলেন, ‘ঈশ্বরদীতে রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের কারণে বিভিন্ন এলাকা থেকে বিপুল পরিমাণ শ্রমিকের অবাধ চলাচলের ফলে ঈশ্বরদীতে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে, যার প্রভাব পড়েছে জেলার সার্বিক করোনা সংক্রমণে।’
জেলার মোট করোনা আক্রান্ত রোগীর প্রায় এক তৃতীয়াংশই পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলাতে বলেও জানান তিনি।
ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আসমা খান বলেন, ‘এ পর্যন্ত ঈশ্বরদী উপজেলায় প্রায় ১২ শতাধিক করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন।’ গত দুই সপ্তাহে করোনা সংক্রমণ বেড়েছে। আক্রান্তদের বেশীরভাগই রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মচারী বলে জানান তিনি।
ডা. আসমা খান বলেন, ‘পারমাণবিক প্রকল্প, ঈশ্বরদী ইপিজেডসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ এ অঞ্চলে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে বিপুল পরিমাণ লোকের সমাগম হয়, ফলে সংক্রমণের ঝুঁকি এমনিতেই বেশি, উপরন্তু কুষ্টিয়া ও নাটোরের সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় ঈশ্বরদীতে করোনা সংক্রমণ প্রতিদিনই বাড়ছে।’
পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলা করোনা সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হলেও, দেশের গুরুত্বপূর্ণ এবং মেগা প্রকল্প হওয়ার কারণে এবং কেপিআই জোন হওয়ায় ঈশ্বরদীতে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারছে না বলে জানান ডা. আসমা।
তিনি বলেন, ‘জনসাধারণকে সচেতন করার চেষ্টা করা হলেও, জনগণের অসেচতনতার কারণে কোনো উদ্যোগই সফল হচ্ছে না’
করোনা সংক্রমণের হার বাড়তে থাকলেও পাবনাতে এখনো করোনা চিকিৎসা সেবায় কোনো অগ্রগতি হয়নি। পিসিআর ল্যাবের অনুমোদন হলেও এখনো তা স্থাপন করা হয়নি। এ ছাড়া, করোনা চিকিৎসায় নিবেদিত পাবনা জেনারেল হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ দেওয়ার কাজ এখনো শেষ হয়নি। এ অবস্থায় করোনা সংক্রমণ দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়লে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হবে স্বাস্থ্য বিভাগকে। এমনটাই মনে করছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।
সিভিল সার্জন ডা. মনিসর চৌধুরী বলেন, ‘জনসাধারণকে বার বার সচেতন করার চেষ্টা করা হলেও, অনেকেই এখনো সচেতন হতে চাইছেন না।’
করোনা সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করলে একটি-দুটি হাসপাতাল দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না, সেহেতু পরিস্থিতি যেন ভয়াবহ আকার ধারণ না করে, সেজন্য সবাইকে এখনই সচেতন হয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান তিনি।