বৃটেনের লেবার পার্টির সংসদীয় দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে বাংলাদেশী তথা পাবনার বংশোদ্ভূত এমপি রূপা হককে। লেবার পার্টির দলীয় কনফারেন্সে দেশটির অর্থমন্ত্রীকে নিয়ে বর্ণবাদী মন্তব্য করার অভিযোগে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
রূপা হকের বাবা মুহম্মাদ হক এবং মা রোশান আরা হক। তারা ১৯৬০ সালে সন্তানদের জন্য আরো বেশি উন্নত সুযোগ-সুবিধা এবং শিক্ষার জন্যততকালীন পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমানে বাংলাদেশ) থেকে অভিবাসি হয়ে ব্রিটেনে যান। পাবনা শহরের মকসেদপুরে ছিল তার বাবার বাড়ি। তার মায়ের বাড়ি কুঠিপাড়া।
সোমবার লিভারপুলে লেবার পার্টির দলীয় কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। এই অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী কোয়াসি কোয়ার্টেংকে ‘লোক দেখানো কৃষ্ণাঙ্গ’ বলে মন্তব্য করেন রূপা হক। তাঁর এমন মন্তব্যের পর নিজ দলের ভেতর থেকেই প্রতিবাদ উঠে। প্রতিবাদ জানায় সরকার দলীয় অনেকে। প্রতিবাদ উঠার একদিনের মধ্যেই রুপা হকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে লেবার পার্টি।
লিভারপুলে লেবার পার্টির কনফারেন্সে দলের প্রধান ও পার্লামেন্টে বিরোধী দলের নেতা কিয়ার স্টারমারের বক্তব্য শুরুর আগে রূপা হকের ওই মন্তব্যের অডিও ক্লিপ প্রকাশ করে গুইডো ফকস ওয়েবসাইট। তার ওই মন্তব্যের অডিও প্রকাশ হলে বৃটেনের রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয় তুমুল সমালোচনা। কনজারভেটিভ নেতারা দাবি তোলেন, ওই মন্তব্যের জন্য লেবার এমপিকে ক্ষমা চাইতে হবে। এমনকি রূপা হকের নিজের দলের নেতারাও তার মন্তব্যকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলেন।
বৃটেনের গণমাধ্যম গুলোতে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, সোমবার লিভারপুলের অনুষ্ঠানে প্রশ্ন-উত্তর পর্বে অর্থমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে রূপা হক বলেন, তিনি লোক দেখানো কৃষ্ণাঙ্গ। রুপা হক তাঁকে উদ্দেশ্য করে আরো বলেন, অন্যান্যদের মতই ব্যয়বহুল স্কুলে পড়েছেন, ইটনে পড়াশুনা করেছেন অর্থমন্ত্রী। বরাবর দেশের সেরা স্কুলগুলোতে ছিলেন তিনি। বিবিসির টুডে প্রোগ্রামে তার কথা শুনলে, আপনি বুঝতেই পারবেন না যে তিনি কৃষ্ণাঙ্গ।
রূপা হকের এমন মন্তব্যের পরই দলের ভেতরে-বাইরে প্রতিবাদ উঠে। প্রকাশ্যে বর্ণবাদী আক্রমণ করার অভিযোগে রুপা হককে বহিষ্কারের দাবি উঠে।
বৃটেনের রাজনৈতিক রীতি এবং আইন অনুযায়ী রুপা হক বহিষ্কারের পর থেকে আর লেবার পার্টির সংসদ সদস্য হিসাবে বিবেচিত হবেন না। স্বতন্ত্র সদস্যদের সাথে সংসদে বসতে হবে তাঁকে।
লেবার এমপি রূপার ওই মন্তব্যকে ‘বর্ণবাদী ও জঘন্য’ বলে আখ্যায়িত করেছেন ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দলের চেয়ার জেইক ব্যারি। লেবার পার্টির ডেপুটি লিডার অ্যাঞ্জেলো রেনার ওই মন্তব্যকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলেছেন।
ইলিং সেন্ট্রাল অ্যান্ড অ্যাকটন আসনের এমপি রূপা হক দাবি করেছেন, এই মন্তব্যের জন্য তিনি অর্থমন্ত্রী কোয়াসি কোয়ার্টেংয়ের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন।
লেবার পার্টির ডেপুটি লিডার অ্যাঞ্জেলো রেনার বিবিসিকে বলেন, রূপা হকের ক্ষমা চাওয়া উচিত। আর পার্টির পররাষ্ট্র বিষয়ক মুখপাত্র ডেভিড লামি বলেন, ওই মন্তব্য দুর্ভাগ্যজনক। এরপরই লেবার পার্টির সংসদীয় দল থেকে রূপা হককে বরখাস্তের খবর আসে।
পরে এক টুইটে রূপ হক বলেন, আমি কোয়াসি কোয়ার্টেংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি এবং আগের দিনের মন্তব্যের জন্য ‘আন্তরিকভাবে’ ক্ষমা প্রার্থনা করেছি। আমার মন্তব্য সুবিবেচনাপ্রসূত ছিল না। ওই মন্তব্যে যারাই আঘাত পেয়েছেন, আমি হৃদয় থেকে তাদের কাছে ক্ষমা চাইছি।
উল্লেখ্য, সেপ্টেম্বরে বৃটেনে নতুন সরকার গঠনের সময় অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পান কোয়াসি কোয়ার্টেং। তিনি পূর্ব লন্ডনে জন্মগ্রহণ করলেও তার পূর্বপুরুষের বসবাস ছিল আফ্রিকার দেশ ঘানায়। ইলিংয়ে জন্ম নেওয়া রূপা হকের বাবা-মা বৃটেন আসেন বাংলাদেশের পাবনা থেকে। তিনি একাধারে লেখক, মিউজিক ডিজে, কলামিস্ট হিসাবে পরিচিত। রূপা হক কেমব্রিজে পড়েছেন রাজনীতি, সামাজিক বিজ্ঞান ও আইন নিয়ে। আর কিংস্টন ইউনিভার্সিটিতে এতদিন সমাজ বিজ্ঞান, অপরাধ বিজ্ঞান, গণমাধ্যম ও সংস্কৃতি পড়িয়েছেন।