পাবনার ইউনিভার্সালের ২৭০ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি, উদঘাটনকারী কর্মকর্তাই বিপাকে!

অবিশ্বাস্য হলেও সত্য কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট রাজশাহী অঞ্চলে দুষ্টের দমন শিষ্টের পালনের পরিবর্তে দুষ্টের পালন শিষ্টের দমন নীতি চলছে! পাবনার ইউনিভার্সাল গ্রুপের ২৭০ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির চাঞ্চল্যকর ঘটনা উদঘাটনকারী ভ্যাট কর্মকতার্কে নানাভাবে হয়রানী করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এতে করে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। ফলে সরকারেরর রাজস্ব আদায়ে ধীরগতি সৃষ্টি হতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহলে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

সুত্র জানায়, সরকারের আয় বাড়াতে ইউনিভার্সাল গ্রুপের ২৭০ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির ঘটনা উদঘাটন করে পুরুস্কারের বদলে হয়রানীর কবলে পড়েছেন পাবনা কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগের একটি প্রিভেন্টিভ টিমের উপ-কমিশনার মো: জাহিদুল ইসলাম।

বিপুল অংকের উৎকোচ ও অনৈতিক সুবিধা নিয়ে রাজশাহী ভ্যাট অফিসের এক যুগ্ম কমিশনার ইউনিভার্সাল গ্রুপের পক্ষ নিয়ে চাঞ্চল্যকর ২৭০ কোটি টাকার রাজস্ব ফাকির বিষয়টি ধামাচাপা দিতে নানা ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই কর্মকর্তার বাড়ি পাবনায় এবং ইউনিভার্সাল গ্রুপের এমডি সোহানী হোসেনের ঘনিষ্ট হিসেবে পরিচিত।

সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে গত বছরের ৯ জুলাই পাবনা কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগের একটি প্রিভেন্টিভ টিমের উপ-কমিশনার মো: জাহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে পাবনার ইউনিভার্সাল গ্রুপের চারটি প্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সাল ফুড লিমিটেড, তরঙ্গ প্যাকেজিং, তরঙ্গ ট্রেডার্স ও রত্নদ্বীপ রিসোর্টে একযোগে অভিযান পরিচালনা করেন। উক্ত অভিযানে প্রতিষ্ঠানের রাজস্ব সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়িক তথ্য উদ্ঘাটনের স্বার্থে বেশ কিছু বাণিজ্যিক দলিলাদি এবং কম্পিউটারের সিপিইউ জব্দ করা হয়। পরে মাসিক রিটার্ন ও জব্দকৃত কম্পিউটার যাচাই করে ২,৬৯,১৭,৩১,২৪৬/-(দুইশত উনসত্তর কোটি সতের লক্ষ একত্রিশ হাজার দুইশত ছেচল্লিশ) টাকা রাজস্ব ফাঁকির সুনির্দিষ্ট তথ্য বেরিয়ে আসে।

সূত্র আরও জানায়, জব্দকৃত দলিলাদি যাচাই বাছাই করে এবং সিপিইউ থেকে প্রাপ্ত তথ্যাদি বিশ্লেষণ করে প্রতিষ্ঠানগুলোর বিপুল পরিমান ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ পাওয়া যায়। ইউনিভার্সাল গ্রুপের ৪ টি প্রতিষ্ঠানের বিগত ২০১৫-২০১৬ অর্থবছর থেকে ২০১৯-২০২০ অর্থবছর পর্যন্ত বিগত ৫ বছরে মোট ২,৬৯,১৭,৩১,২৪৬/-(দুইশত উনসত্তর কোটি সতের লক্ষ একত্রিশ হাজার দুইশত ছেচল্লিশ) টাকা রাজস্ব ফাঁকি উদ্ঘাটিত করা হয়। সরকারের এত বিপুল পরিমান রাজস্ব ফাঁকির বিপরীতে কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগ পাবনা এর প্রিভেন্টিভ টিম কর্তৃক ভ্যাট আইনে প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে মোট ১২টি মূসক ফাঁকির মামলা দায়ের করে।

মামলাগুলো রাজশাহী ভ্যাট কমিশনারেটে ন্যয় নির্ণয়ন পর্যায়ে রয়েছে বলে জানা যায়। সবচেয়ে আশ্চর্য্যরে বিষয় দীর্ঘ প্রায় ৮ মাস অতিবাহিত হলেও এই মামলার কোন অগ্রগতি নেই বরং রাজশাহী ভ্যাট কমিশনারেট অফিসের একটি দুষ্টচক্র মোটা টাকা উৎকোচ নিয়ে মামলাটিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছে।

রাজশাহী অঞ্চলের কর কমিশনার লুৎফর রহমান বিষয়টি প্রতিহিংসামূলক এবং মিথ্যা মর্মে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানকে অভিহিত করে পত্র প্রেরণ করেছেন বলে জানা গেছে। সরকারের বিশাল কর ফাঁকির মামলাটি নিয়ে চলছে লুকোচুরি।

এদিকে উল্টো পাবনা ভ্যাটের উপ-কমিশনার মোঃ জাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ করেছে ইউনিভার্সাল গ্রুপ। আর সেই অভিযোগ আমলে নিয়ে মামলাটির বিষয় তদন্ত এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ না করে উল্টো কর কর্মকর্তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে মোটা টাকা উৎকোচ নিয়ে কর বিভাগেরই একটি চক্র আসামী পক্ষের সঙ্গে যোগসাজসে মামলাটিকে মিথ্যা প্রমাণের অপচেষ্টা করছে।

সুত্র আরও জানায়, রাজশাহী ভ্যাট কমিশনারেটের প্রাক্তন সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন ২০১৫ সালের ১ জুলাই থেকে ২০১৮ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত তিন বছরে ইউনিভার্সাল ফুড লিমিটেডে অডিট করে মাত্র ৯৬,১৬,৬০০,৫৫/- (ছিয়ানব্বই লক্ষ ষোল হাজার ছয়শত টাকা পঞ্চান্ন পয়সা) রাজস্ব ফাঁকি উদ্ঘাটন করে। পরবর্তি অডিটে ঐ একই সময়ে ১২১,৩৩,৬২,১৬০/-(একশত একুশ কোটি তেত্রিশ বাষট্রি হাজার একশত ষাট টাকা) টাকা রাজস্ব ফাঁকি উদ্ঘাটিত হয়। প্রাপ্ত রাজস্ব ফাঁকির বিপরীতে ভ্যাট আইনে রাজশাহী ভ্যাট কমিশনারেটে মামলা দায়ের করা হয়। পূর্ববর্তী কর্মকর্তা মোয়াজ্জেম হোসেনকে অনৈতিক ভাবে ম্যানেজ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠে।

ফলে তৎকালীন কমিশনার মোয়াজ্জেম হোসেন প্রতিষ্ঠানটি থেকে অনৈতিকভাবে ব্যাপক আর্থিক সুবিধা নিয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে এই বিপুল রাজস্ব ফাঁকির সুযোগ করে দিয়েছেন এবং সরকারকে বিপুল রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করেছেন মর্মে প্রতীয়মান হয়।

এ ব্যাপারে পাবনা কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট এর উপ কমিশনার মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা উপযুক্ত তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে মামলা করেছি। তবে একটি সুবিধাবাদী মহল এই ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে। আমি সরকারের রাজস্ব ফাঁকি উদঘাটন করে নিজেই বিপদে আছি।

ইউনিভার্সাল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহানী হোসেনের সঙ্গে বারবার যোগাযাগে করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তৎকালীন রাজশাহী ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার মোয়াজ্জেম হোসেনের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলেও তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কোন কথা বলেননি।

বর্তমান রাজশাহীস্থ কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট মো. লুৎফর রহমানের সাথে মোবাইলে এবং ল্যান্ড ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনিও ফোন রিসিভ করেননি।

error: কাজ হবি নানে ভাই। কপি-টপি বন্ধ