পাবনায় শহরের দিলালপুরের স্ত্রী কন্যাসহ অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তার হত্যার রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ। আলোড়িত ৩ হত্যাকান্ডের হোতা পাবনা ফায়ার সার্ভিস মসজিদের ইমাম তানভীর ইমামকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তার নওগার মহাদেবপু উপজেলার হরিপুরের বাড়ি থেকে হত্যার ব্যবহ্যত ধারালো অস্ত্র ও লুটে নেয়া টাকা স্বর্ণালংকার উদ্ধার করেছে।
রবিবার পুলিশ লাইনস অডিটরিয়ামে পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
গত ৫ জুন শহরের ফায়ার সার্ভিসের পাশের গলির ভারাটিয়া বাসা থেকে স্ত্রী জুম্মা খাতুন, পালিত কন্যা সানজিদা খাতুন জয়াসহ রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল জব্বারের অর্ধগলিত মৃতদেহ উদ্ধার করে।
নিসন্তান ব্যাংক কর্মকর্তার স্ত্রী ছুম্মা খাতুনের সাথে তানভীর হোসেনের পরিচয় হয়। বাড়ির পাশে ফায়ার সার্ভিস মোড়েই দোকান ছিল তানভীর হোসেনের। দেড় বছর পূর্বে চাল কেনার সুত্র ধরে তার সাথে পরিচয় ছুম্মা খাতুনের। ঘাতক তানভীর ফায়ার সার্ভিস মসজিদে ইমামতি করতেন। দিনে দিনে বাড়তে থাকে এ পরিবারের সখ্যতা। সবাই তাকে আপন করে নিলেও ঘাতক তানভীরের ছিলো আলাদা পরিকল্পনা। সেই মোতাবেক সে আইনের চোখকে ফাকি দিতে গত ২৯ মে ছুটি নিয়ে বাড়ি চলে যায়।
ছুটি শেষ ৩১ মে রাত সাড়ে ১০ টায় আব্দুল জব্বারের বাড়িতে আসেন। আব্দুল জব্বার একই বিছানায় নিজের পাশেই তর শোবার ব্যবস্থা করেন। সবাই ঘুমিয়ে গেলেও তানভীর থাকে সুযোগের অপেক্ষায়। রাত ৪ টার দিকে আব্দুল জব্বার বাথরুমে যাওয়ার জন্য উঠতে গেলে পেছন থেকে গলায় গামছা পেচিয়ে শ্বাসরোধ করে তানভীর। সে বাঁচার জন্য তানভীরের হাতে কামড় দেয়। এতে তানভীরের আঙ্গুল কেটে যায়।এরপর আব্দুল জব্বারের বুকে চাকু ঢুকিয়ে দিলে সে নিস্তেজ হয়ে পড়লে পাশের ঘরে যায় ঘাতক তানভীর।
পাশের কক্ষে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিলেন ছুম্মা খাতুন আর তার পালিত মেয়ে সানজিদা। মশারীর দড়ি কেটে দিয়েই তাদের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে তানভীর ছুম্মা বেগমের গলায় চাকু টালায়। শব্দে সানজিদার ঘুম ভাঙ্গার পর চিৎকার করলে তাকেও চাকু দিয়ে আঘাত করার পর কাঠের বাটামের আঘাতে মৃত্যু নিশ্চিত করে। এরপর বাড়ির আলমারি, ড্রয়ার খুলে লুটে নেয় ১ লাখ ভারতীয় রুপিসহ ২ লক্ষ টাকা ও সোনার গহনা।
লুটপাট শেষে জব্বারের ঘরে গেলে তখনও তার শ্বাস প্রশ্বাস চলায় বাটাম দিয়ে আঘাত করে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরে রক্ত মাখা কাপড়ে বাথরুমে গোসল করে বাড়ির সমস্ত গেটে তালা দিয়ে পালায় তানভীর। যখন সে বাহিরে যাচ্ছিল তখন মসজিদে ধ্বনিত হচ্ছিল আযান। সে যে মসজিদে ইমামতি করতো সেই মসজিদের আযানেই সে নামাজ না পড়ে নওগা বাড়ির পথে রওয়ানা দেয়। বাড়ি যাওয়ার পথিমধ্যে নাটোরে এক ডাক্তারের দোকান থেকে চিকিৎসা নেয় কাটা আঙুলের। নিস্তান দম্পত্তির সম্পদ লুটের জন্যই এ হত্যাকান্ড ঘটেছে বলে সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়।