পাবনায় লকডাউন শুরু, কঠোর প্রশাসন

করোনা ভাইরাসের (কোভিড ১৯) সংক্রমণ আর মৃত্যুর ঊর্ধ্বগতি রুখতে সারা দেশের মতো পাবনাতেও সোমবার (২৮ জুন) সকাল থেকে লকডাউন শুরু হয়েছে।

সম্প্রতি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে গেছে। প্রায় প্রতিদিনই নতুন নতুন রেকর্ড গড়ছে করোনা। এমন ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ রোধে আগামী ১ জুলাই পর্যন্ত প্রথম সীমিত পরে সরে পরে কঠোর লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে সরকার।

সকাল ১০টার দিকে পাবনা শহর ঘুরে দেখা গেছে, প্রথম দিনেই কঠোর প্রশাসন, সমস্ত গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে। রাস্তায় চলছে কেবল রিকশা। পণ্যবাহী কিছু যানবাহনও চলতে দেখা যাচ্ছে। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারি নির্দেশনায় মার্কেট-শপিংমলও বন্ধ রয়েছে।

শহরের প্রধান সড়ক আব্দুল হামিদ রোডের প্রবেশ মুখে ব্যারিকেট বসানো হয়েছে। শহরের প্রধান সড়কে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না রিকশা-অটোবাইককে।

রিকশা-অটোবাইকের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও মানুষের প্রবেশে বাধা নেই। ফলে শহরের মধ্যে মানুষের প্রচণ্ড ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়াও নিত্যপণ্যের দোকানছাড়া অধিকাংশ দোকান বন্ধ রয়েছে। কিছু কিছু দোকানের সামান্য কিছু অংশ খোলা রেখে মালিক-শ্রমিকরা বাহিরে অবস্থান করছেন।

সরকারের সীমিত পরিসরের এই প্রজ্ঞাপনের পর কিছু নির্দেশনা জারি করেছে জেলা প্রশাসন। এই নির্দেশনা অমান্য করা হলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

নির্দেশনাগুলো হলো-
১. সকল ধরনের পরিবহন বন্ধ থাকবে।
২. সন্ধ্যা ৬টার পর জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়া নিষিদ্ধ
৩. শপিংমল সহ সকল দোকানপাট ও ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে
৪. মানুষের চলাচলে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
৫. এই নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে

এর আগে রবিবার (২৭ জুন) বিকেলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, আজ সোমবার সকাল ৬টা থেকে আগামী তিন দিনের জন্য বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) সকাল ৬টা পর্যন্ত এ সংক্রান্ত বিধিনিষেধ আরোপ থাকবে। এ সময়ে পণ্যবাহী যান ও রিকশা ছাড়া গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। সীমিত পরিসরে খোলা থাকবে সরকারি-বেসরকারি অফিস। বন্ধ থাকবে শপিংমল, মার্কেট, বিনোদনকেন্দ্র। হোটেল-রেস্তোরাঁ খোলা থাকলেও বসে খাওয়া যাবে না।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, আজ সোমবার থেকে সীমিত পরিসরে ‘লকডাউন’ শুরু। আর বৃহস্পতিবার থেকে সাত দিনের ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ শুরু হবে।

গতকালের প্রজ্ঞাপনে আরো বলা হয়, করোনা ভাইরাসজনিত রোগ (কোভিড-১৯) সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় আগের সব বিধিনিষেধ ও কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় নতুন পাঁচটি শর্ত সংযুক্ত করে এ বিধিনিষেধ আরোপ করা হলো। নতুন পাঁচ শর্ত হলো- সারা দেশে পণ্যবাহী যানবাহন ও রিকশা ছাড়া সব গণপরিবহন বন্ধ থাকবে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়মিত টহলের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে; সব শপিংমল, মার্কেট, পর্যটনকেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদনকেন্দ্র বন্ধ থাকবে; খাবারের দোকান, হোটেল-রেস্তোরাঁ সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খাবার বিক্রয় (শুধুমাত্র অনলাইন/টেকওয়ে) করতে পারবে; সরকারি-বেসরকারি অফিস/প্রতিষ্ঠানগুলো শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারীর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে নিজ নিজ অফিসের ব্যবস্থাপনায় তাদের আনা-নেয়া করতে হবে এবং জনসাধারণকে মাস্ক পরার জন্য আরো প্রচার প্রচারণা চালাতে হবে এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

দেশে করোনা ভাইরাসে মৃত্যু ও সংক্রমণ হার উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে গেছে। সর্বশেষ গত ২৪ ঘণ্টায় (গত শনিবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত) করোনা ভাইরাস সংক্রমিত হয়ে ১১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্তের পর থেকে এখন পর্যন্ত এটাই ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষের মৃত্যুর রেকর্ড।

গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে ৫ হাজার ২৬৮ জন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এর আগে গত ১৯ এপ্রিল একদিনে সর্বোচ্চ ১১২ জনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদফতর।

করোনা পরিস্থিতির অবনতি ঘটার প্রেক্ষাপটে গত বৃহস্পতিবার সারা দেশে ১৪ দিনের পূর্ণ শাটডাউন দেয়ার সুপারিশ করে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। এর পরিপ্রেক্ষিতে সারা দেশে নতুন করে বিধিনিষেধ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। যদিও এর আগে থেকে বিধিনিষেধ জারি ছিল, যার মেয়াদ রয়েছে আগামী ১৫ জুলাই পর্যন্ত। এর মধ্যে অবনতিশীল করোনা পরিস্থিতিতে সীমান্তের জেলাগুলোতে লকডাউন দেয়া হচ্ছিল।

সর্বশেষ গত ২২ জুন থেকে ঢাকার আশপাশের মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, রাজবাড়ী, মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জ এই সাত জেলায় কঠোর লকডাউন (বিধিনিষেধ) দেয়া হয়। বন্ধ করে দেয়া হয় ঢাকার সাথে বাস, লঞ্চ ও রেল যোগাযোগ।

error: কাজ হবি নানে ভাই। কপি-টপি বন্ধ