পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার নন্দনপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিনের বাড়িতে হামলা ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। তবে ৩দিন অতিবাহিত হলেও ঘটনার জট ঘুলছে না। পাশের সিসিটিভি ফুটেজেও কাউকে চিহ্নিত করা যায়নি।
ঘটনাটিকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের দিকে ইঙ্গিত করলেও তাদের চিহ্নিত করতে পারেননি আলাউদ্দিন। হামলার সময় ও পরে আলাউদ্দিন এবং তার পরিবারের সদস্যরা কাউকে সরাসরি দেখতেও পারেননি। আশপাশের লোকজনও কাউকে দেখতে পারেননি। এনিয়ে দেখা দিয়েছে রহস্য ও নানা গুঞ্জন।
আলাউদ্দিনের দাবি- ১৮ জানুয়ারি দিবাগত রাত ১টার মিনিটের দিকে একদল দুর্বৃত্তরা নন্দনপুরের সিদ্ধিনগর গ্রামে তার বসতবাড়িতে হামলা করে। দুর্বৃৃত্তরা তার একটি টিনের ঘরে কোপানো শুরু করে। এসময় তাকে উদ্দেশ্যে করে ‘শালা বেশি বেড়েছে, শালা রিফিউজি’ ইত্যাদি বলে গালিগালাজ করে। পরে বাড়ির ক্যাচি গেটের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যান। ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে পরিবারের লোকজন ও আশপাশে লোক এগিয়ে আসলেও কাউকে দেখতে পাওয়া যায়নি।
আলাউদ্দিনের পরিবার ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্থানীয় একটি জমির কেনার টাকা নিয়ে বাবার চাচাতো ভাই আব্দুর রহিম সঙ্গে আলাউদ্দিনের বিরোধ ছিল। এনিয়ে ঘটনার দিন ১৮ জানুয়ারি (বুধবার) বিকেলে পাশের গনেশপুর বাজারে দোকানে বসে থাকা অবস্থায় চাচা আবদুর রহিমকে মারধর করেন। পরে চাচা পুলিশকে অবহিত করলেও পুলিশ তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আইনানুগ ব্যবস্থার প্রক্রিয়া শুরু করেন। এঘটনায় থানা পুলিশ তৎপরতা শুরু করার কয়েক ঘণ্টার মাথায় অভিযুক্ত আলাউদ্দিনের বাড়িতে রহস্যজনক এঘটনা ঘটে।
এবিষয়ে ভুক্তভোগী আলাউদ্দিন বলেন, ‘আমার সাথে আমার ওই চাচার একটু ঝামেলা হয়েছিল কিন্তু সেটা আমরা মিটমাট করে নিয়েছি। এখন কে এই ঘটনা ঘটালো নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। তবে কিছুদিন আগে জামায়াত-শিবিরের পোস্টার লাগানো নিয়ে ঝামেলা হয়েছিল। তারা হয়তো এ ঘটনা ঘটাতেও পারে। এছাড়া আমার সাথে কারো বিরোধ নেই।’
চাচাকে মারধরের ঘটনা ধামাচাপা ও আইনানুগ ব্যবস্থা থেকে বাঁচতে নিজেই এঘটনা ঘটিয়েছেন কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে এই যুবলীগ নেতা বলেন, ‘না, এই অভিযোগ সত্য নয়। চাচার সঙ্গে আমার ঝামেলা সমাধান হয়ে গেছে। কেউ কি নিজের ক্ষতি নিজে করে? আমি কিভাবে আমার নিজের ক্ষতি করবো?’
এবিষয়ে আব্দুর রহিম বলেন, ‘আমাকে অন্যায়ভাবে মারধর করা হয়েছে। আমি শুধু পুলিশকে জানিয়েছিলাম। কোনও অভিযোগ বা মামলা দেয়নি। কিন্তু আমার সাথে ঝামেলার কয়েক ঘন্টার পর রাতে আলাউদ্দিনের বাড়িতে এঘটনা ঘটেছে। সকালে যখন পুলিশ আমার কাছে আসে তখন তাদের আমি জানিয়েছি যে- তার বিরুদ্ধে আমার অভিযোগ নেই কিন্তু মধ্যরাতে তার বাড়িতে কারা কিভাবে এই ঘটনা ঘটালো সেটা দ্রুত বের করতে।’
তিনি আরও বলেন, আমাদের এলাকার কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী মাদকসম্রাট শাহিনের কয়েকটি মামলার সাক্ষী হওয়ার কারণে ইতিপূর্বে থেকেই সে আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে আসছিল এবং মারার পরিকল্পনা করে পরবর্তীতে সে আলাউদ্দিনের সহযোগিতায় আমাকে এভাবে মারধর করে।
স্থানীয় কিছু লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা বলেন, এলাকাতে রাজনৈতিক কোন প্রতিহিংসা নেই। এটি কারা করেছে আমরা জানি না। তবে এ সকল দুর্বৃত্ত এবং সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করতে পারে তারা সবাই মাদকসম্রাট শাহিনের নেতৃত্বে কাজ করে থাকে। এরকম কিছু চিহ্নিত ব্যক্তি আছে প্রশাসন তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে হয়তো বিষয়টি উদঘাটন করা সম্ভব।
এ বিষয়ে এলাকার কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী শাহীনকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাইলে সে সাংবাদিকদের সাথে কোনো কথা বলতে রাজি হয়নি l
ঘটনা নিয়ে আরও তদন্তের কথা জানালেন সাঁথিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এখন পর্যন্ত এই ঘটনার কোনো রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হয়নি। আমরা পাশের সিসিটিভির ফুটেজ পর্যালোচনা করেও কাউকে পাওয়া যায়নি। তারপরও আমরা তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাবো।’