পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার করমজা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বিএনপি নেতা রইজ উদ্দিন সরদারের সমর্থকদের উপর আওয়ামী লীগের নৌকা প্রার্থী হোসেন আলী বাকচীর সমর্থকদের হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছিলেন। আহতদের মধ্যে তিনজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বুধবার (২৭ জুলাই) দুপুর আড়াইটার দিকে করমজার পুন্ডুরিয়া দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেছে।
আহতরা হলেন- চাকলা গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে সোহেল রানা (৩৫), পেচাকোলা গ্রামের আব্দুস শুকুরের ছেলে আব্দুস সালাম (৪০), চাকলা এলাকার আক্কাজ আলী ছেলে আলম হোসেন (৪০), মোজাহার মুসুল্লির ছেলে আব্দুল মতিন (৫৫), হারুনুর রশিদের ছেলে সেলিম হোসেন (৪০), মোকসেদ আলীর ছেলে
জহুরুল ইসলাম (৩২) ও মান্নান ফকিরের ছেলে সোহেল রানা (৩৬)। তাদের মধ্যে সোহেল রানা, আব্দুস সালাম ও আলমকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
রইজ উদ্দিনের ঘোড়া প্রতীকের নির্বাচনী এজেন্ট আব্দুস সালাম জানান, অনেক ভোটার ইভিএম ভোট দিতে সমস্যা হচ্ছে। এই সুযোগে নৌকা প্রার্থীর এজেন্ট ও তার লোক ভোটারদের প্রভাবিত করে ইভিএমে ভোট নিয়ে নিচ্ছে। এ সময় আমাদের কয়েকজন কর্মী বিষয়টি জানতে পেরে বাধা দিলে নৌকার বেশ কিছু নেতাকর্মী আমাদের লোকজনদের ওপর হামলা চালায়। এতে আমাদের অন্তত ৭ জন আহত হয়েছেন। আহতদের বেড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
এবিষয়ে সাঁথিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসিফ মোহাম্মদ সিদ্দিকুল ইসলাম বলেন, ওইখানে হাতাহাতির একটা ঘটনার কথা শুনেছি। ঘটনার পরপরই মোবাইল টিমসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য পাঠানো হয়েছে। তারা সেখানে কাজ করছে। এখন স্বাভাবিক আছে।
ঘটনাস্থলে থাকা পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বেড়া সার্কেল) কল্লোল কুমার দত্ত বলেন, এখানে কেন্দ্রের বাইরে অপ্রীতিকর একটা ঘটনা ঘটেছে। ২-৩ জন আহত হয়ে থাকতে পারে। আমরা বিষয়টির খোঁজখবর নিয়ে পরে জানাতে পারব।
বেড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মোজাহিদুল ইসলাম বলেন, আহতদের হাসপাতালে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। কেউ যদি গুরুতর থাকে তাহলে হাসপাতালে ভর্তি করানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
এর আগে সকাল ৮টা থেকে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন-ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট শুরু হয়েছে, বিরতিহীনভাবে চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। ভোটগ্রহণের শুরুতেই ব্যাপক ইভিএম জটিলতা দেখা দিয়েছে। অনেক ভোটার অজ্ঞতার কারণে ভোট দিতে না পেরে ফিরিয়ে যাচ্ছেন। অনেক বুথে ইভিএম মেশিনেও ত্রুটি দেখা দিয়েছে।
এছাড়াও ভোট কক্ষে দায়িত্বরত পোলিং অফিসার গোপন কক্ষে ভোটারদের সঙ্গে ঢুকতে দেখা গেছে। তবে তাদের দাবি- ‘ভোটাররা বুঝতে পারছে না। তাই তাদের দেখি দেয়ার জন্য সকল প্রার্থীর এজেন্টদের অনুমতি নিয়েই ঢোকা হচ্ছে। আমরা শুধু দেখিয়ে দিচ্ছি, ভোটাররা তাদের পছন্দমতো প্রতীকেই ভোট দিচ্ছেন।’
তবে গোপন কক্ষে তারা ঢুকতে পারেন কিনা? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে কোন সদোত্তর দিতে পারেননি তিনি। এ ঘটনায় ওই কেন্দ্রের ওই বুথে বেশ কিছুক্ষণ ভোটগ্রহণ বন্ধ হয়ে যায়। পরে প্রিজাইডিং অফিসার এসে ভোটগ্রহণ শুরু করেন। এছাড়াও কেন্দ্র ও কেন্দ্রের বাইরে বহিরাগতদের বেশ আনাগোনা দেখা গিয়েছে।
বুধবার (২৭ জুলাই) সকাল ১০টার দিকে আফড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পুন্ডুরিয়া দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্রসহ কয়েকটি কেন্দ্রে ঘুরে এ চিত্র পাওয়া গেছে।
নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে বর্তমান চেয়ারম্যান হোসেন আলী বাগচী, স্বতন্ত প্রার্থী হিসেবে বিএনপি নেতা রউজ উদ্দিন ঘোড়া, ফিরোজ উদ্দিন মোটরসাইকেল এবং শামসুর রহমান শেখ আনারস প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়াও সাধারণ ও সংরক্ষিত ১২টি ওয়ার্ডে মোট ৫৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
ইউনিয়নটিতে মোট ভোটার রয়েছে ২৯ হাজার ৬২৬টি, এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৫ হাজার ৩৭৭ এবং মহিলা ভোটার রয়েছে ১৪ হাজার ২৪৯ জন। ৯টি কেন্দ্রে ৯৯টি ভোট কক্ষে ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন।