নিহত চেয়ারম্যান প্রার্থীর লাশ নিয়ে পাবনা শহরে বিক্ষোভ, নির্বাচন স্থগিত

পাবনা সদর উপজেলার ভাঁড়ারা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রচারণার সময় সংঘর্ষে নিহত চেয়ারম্যান প্রার্থী ইয়াসিন আলমের (৪০) মরদেহ নিয়ে শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে তার কর্মী-সমর্থকরা।

শনিবার (১১ ডিসেম্বর) বিকেলে ময়নাতদন্তের পর হস্তান্তর করা হলে মরদেহ নিয়ে শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করে তার ও অপর চেয়ারম্যান প্রার্থী তার চাচাতো ভাইয়ের সমর্থকরা।

এদিকে চেয়ারম্যান প্রার্থী নিহতের ঘটনায় ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে নির্বাচন স্থগিত করা হয়নি।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার সকালে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী (ঘোড়া মার্কা) সুলতান মাহমুদের সমর্থকরা নির্বাচনী প্রচারণায় বের হন। এ সময় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আবু সাঈদ খানের লোকজন বাধা দিলে সংঘর্ষ ও গোলাগুলি শুরু হয়। এ সময় সুলতান মাহমুদের চাচাতো ভাই স্বতন্ত্র আনারস প্রতিকের চেয়ারম্যান পদপার্থী ইয়াসিন আলমকে কুপিয়ে গুরুত্বর জখম করে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। এ সময় উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন গুরুতর আহত হন। আহতদের উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অবস্থার অবনতি হলে তাঁদের মধ্যে ছয়জনকে রাজশাহী মেডিকেলে স্থানান্তর করা হয়। রাজশাহী নেওয়ার পথে নাটোরের বনপাড়া গুরুদাসপুর পৌছালে মারা যান ইয়াসিন আলম।

স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী সুলতান মাহমুদ খান বলেন, গতকাল শুক্রবার রাত ১০টার পরে আমার হয়ে যারা প্রচারণা করেছেন তাঁদের মধ্যে চার-পাঁচজনের বাড়িতে গিয়ে সাঈদ চেয়ারম্যানসহ ১০-১৫ জন মিলে গুলি চালিয়েছে। আমার হয়ে ভোট না করার হুমকিও দেয় হয়। তখন থেকেই এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। পরে আজ শনিবার সকালে ওই এলাকাতে আমরা ভোট চাইতে যাই ও আহত সমর্থকদের দেখতে গেলে সাঈদ চেয়ারম্যানের লোকজন আমার সমর্থকদের ওপর অতর্কিতভাবে হামলা চালায় এবং গুলি বর্ষন করে।

আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী আবু সাঈদ খান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘গতকাল রাতে আমার লোকজন নৌকার ভোট চাইতে গেলে কালাম মেম্বরকে সুলতানের লোকজন হাতুড়িপেটা করেন। সকালে আমি তাঁকে দেখতে যাই। ফিরে আসার পথে কোলাদী ইন্দ্রারা মোড়ে এলে জয় বাংলা শ্লোগান দিয়ে সুলতানের লোকজন আমাদের ওপর গুলি করে। এ সময় আমাকে চতুরদিক থেকে ঘিরে ধরলে আমার ছোট ভাইয়ের পায়ে গুলি বিদ্ধ হয়। এ সময় আমি পাশের ড্রেনে লাফিয়ে না পড়লে আমাকে তারা হত্যা করত। এ ঘটনায় আমার কয়েকজন সমর্থক গুলিবিদ্ধসহ আহত বেশ কয়েক জন আহত হয়েছেন। যাদের পাবনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়েছে। সুলতার এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েক করতে যাচ্ছে। জাসদ নেতা সর্বহারা নকসালদের এলাকায় এনে আমাকে হত্যার জন্য আর নির্বাচনকে নষ্ট করা জন্য এই হামলা করেছে। ভয় দেখিয়ে তার পক্ষে সমর্থন নেয়ার চেষ্টা করছে।

সুলতান মাহমুদ অভিযোগ করে বলেন, ‘নির্বাচনে হেরে যাওয়ার আশঙ্কায় প্রতীক পাওয়ার পর থেকে নৌকার লোকজন আমাদের ভোট চাইতে দিচ্ছে না। আমি আর ভোট চাই না, স্বজনদের প্রাণ ফেরত চাই।’

দুপুরে নিহত ই্য়াসিনের মরদেহ কোলাদী গ্রামে পৌঁছলে ইয়াসিন ও সুলতানের সমর্থকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। আওরঙ্গবাদ এলাকায় আবু সাইদের সমর্থকদের বেশ কয়েকটি বাড়িতেও হামলা চালায় তারা। হোসেনের দোতলা বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষুব্ধরা। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। বিকেলে ইয়াসিনের মরদেহ নিয়ে পাবনা শহরে বিক্ষোভ মিছিল করে দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকরা।

পাবনা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রোকনউজজামান ‘ভাড়ারা ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। অন্তত ৮-১০ জন গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। কয়েকজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’

হামলায় জড়িত সন্দেহে একটি বিদেশী রিভলবার ও দেশীয় অস্ত্রসহ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। পরিস্থিতি বর্তমানে স্বাভাবিক রয়েছে বলেও তিনি জানান।

পাবনা সদর ইউনিয়ন পরিষদের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা কায়সার আহম্মেদ বলেন, চেয়ারম্যান প্রার্থী নিহত হওয়ায় ‘২০১০ সালের ইউপি নির্বাচনী বিধিমালা’ অনুসারে ভাড়ারা ইউনিয়নে ঐ পদে নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। আইনশৃংখলা পরিস্থিতি বিবেচনা করে সাধারন ও সংরক্ষিত সদস্য পদে নির্বাচন করা হবে কিনা সে বিষয়ে সিদ্ধান্তের পরে জানানো হবে।

error: কাজ হবি নানে ভাই। কপি-টপি বন্ধ