নানা শঙ্কা-আশঙ্কা কাটিয়ে অবশেষে দেশব্যাপী আলোচিত পাবনা সদর উপজেলার ভাঁড়ারা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। বুধবার (১৫ জুন) সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়েছে ভোটগ্রহণ, বিরতিহীনভাবে চলবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।
ভোট দিতে সকাল থেকেই ভোটারদের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। পুরুষ ও নারী উভয় ভোটারদের রয়েছে লম্বা লাইন। নানা শঙ্কার মধ্যেও পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে ভোটাররা লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন।
এদিকে ভোটকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রাখা হয়েছে গোটা ভাঁড়ারা ইউনিয়ন। ৫ শতাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। বিভিন্ন জায়গায় বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। সন্দেহভাজনদের করা হচ্ছে জিজ্ঞাসাবাদ। কিছুক্ষণ পরপর সাইরেন বাজিয়ে চলছেন পুলিশ, ডিবি ও র্যাবের সদস্যরা। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) তৎপরতাও চোখে পড়ার মতো।
গত ডিসেম্বরে প্রচারণাকালে এক চেয়ারম্যান প্রার্থী নিহতের ঘটনায় দেশব্যাপী আলোচনায় আসে ইউনিয়নটি। ফলে এবার ভাঁড়ারার দিকে তাকিয়ে পাবনাবাসীসহ গোটা বাংলাদেশ, তাই অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে প্রস্তুত নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন। স্মরণকালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে গোটা ভাঁড়ারা ইউনিয়ন জুড়ে।
আতঙ্কের জনপদ খ্যাত এই ইউপিতে ৩৮ হাজার ২শ ৫৭ জন ভোটারের মধ্যে নারী ভোটার ১৮ হাজার ২৯৩ জন এবং পুরুষ ভোটার ১৯ হাজার ৯৬৪ জন। চেয়ারম্যান পদে প্রতিদন্দ্বিতা করছেন ২ জন প্রার্থী। আর ৯টি সাধারণ ও ৩টি সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৫৩ জন, এর মধ্য নারী সদস্য পদে ১৩ জন এবং পুরুষ সদস্য পদে ৪০ জন প্রার্থী। এই ইউনিয়নে ভোট কেন্দ্র রয়েছে ১৬টি, বুথ রয়েছে ১০৪টি। সবগুলো কেন্দ্রকেই ঝুঁকিপূর্ণ ধরে প্রতিটি কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত থাকবেন ১৪ জন করে।
পাবনার পুলিশ সুপারের তদারকিতে শুধুমাত্র এই ইউনিয়নেই দায়িত্ব পালন করছে ৪ জন এডিশনাল এসপির নেতৃত্বে ৪টি সেক্টর টিম। ২ প্লাটুন বিজিবি, র্যাবের ২টি টিম, ফায়ার সার্ভিসের ২টি টিম, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ১১ জন, ১ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, মোবাইল টিম ১৬টি, স্ট্রাইকিং ফোর্স ৮টি, চেকপোস্ট ৪টা এবং সিটিইউটি টিম রয়েছে ২টা। এছাড়াও ১২ জনের একটি রিজার্ভ টিম রাখা হয়েছে। সবমিলিয়ে ৫ শতাধিক আইনশৃঙ্লা বাহিনীর সদস্য এই নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করবেন।
পাবনা সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং কর্মকর্তা কায়সার মোহাম্মদ পাবনা বার্তা ২৪ ডটকমকে বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। আশা করি পুরো সময়টা শান্তিপুর্ণ ও সুষ্ঠু শেষ করতে পারবো, এ জন্য ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এর আগে একটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের জন্য এতো নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়নি। বলতে গেলে ৩-৪টি ইউনিয়ন পরিষদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজানো হয়েছে শুধু এই ইউনিয়ন ঘিরে।
পাবনা পুলিশ সুপার (এসপি) মহিবুল ইসলাম খান বলেন, নির্বাচন অবাধ ও শান্তিপূর্ণ করতে আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। পুলিশের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। আশা করছি, কোনও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটবে না। কেউ বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করলে বিন্দুমাত্র ছাড় দেয়া হবে না। নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে শেষ করতে যা যা করণীয় তাই তাই করবে প্রশাসন।
উল্লেখ্য, গত বছরের ১১ ডিসেম্বর নির্বাচনী প্রচারণার সময় পাবনা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী আবু সাঈদ খান (৫২) ওরফে সাঈদ চেয়ারম্যানের সঙ্গে সংঘর্ষে আরেক চেয়ারম্যান প্রার্থী ইয়াসিন আলম (৩৫) নিহত হন। এঘটনায় ওই বছরের ২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য ভাঁড়ারা ইউনিয়ন পরিষদের সব (চেয়ারম্যান, সংরক্ষিত ওয়ার্ড সদস্য, সাধারণ ওয়ার্ড সদস্য) পদের নির্বাচন স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন। পরে গত ২৮ এপ্রিল নির্বাচন কমিশন থেকে ১৫ জুন ভোটগ্রণের তারিখ নির্ধারণ করে তফসিল ঘোষণা করা হয়।