পাবনা পৌরসভা নির্বাচন ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজনীতির মাঠ। বৃহস্পতিবার রাতে আওয়ামী লীগের দলীয় ও বিদ্রোহী প্রার্থীর ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার পর এখনও থমথমে বিরাজ করছে পাবনা শহর।
শুক্রবার বন্ধের দিনও চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছে শহরবাসীর মধ্যে। সকাল ১০টার দিকে সরেজিমন পরিদর্শন করে শহরের আতঙ্কিত পরিস্থিতি পাওয়া গেছে।
ব্যবসায়ী ও দোকানদার বলেন, শুক্রবার বন্ধের দিন হলেও শহরের প্রধান সড়কের ফুটপাতে কিছু ভ্রামমাণ দোন বসে। গত রাতের পরিস্থিতির পর আজ সেগুলো বসেনি। এছাড়াও আব্দুল হামিদ রোডের প্রায় সকল দোকানই শুক্রবার খোলা থাকে। সেগুলোও বন্ধ রয়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণার শেষদিনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী আলী মুর্তজা বিশ্বাস সনির সমর্থক ও বিদ্রোহী প্রার্থী শরীফ উদ্দিন প্রধানের সমর্থকদের মধ্যে একাধিক স্থানে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ঘটনা ঘটেছে। শরীফ উদ্দিন প্রধানের কয়েকটি নির্বাচনী কার্যালয় ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে।
শেষ দিনে দুই প্রার্থীই বিশাল বিশাল মিছিল নিয়ে শহরে শোডাউন দেন। পাল্টাপাল্টি মিছিল-মিটিংয়ের পর হঠাৎ করে পাল্টে গেল পাবনা শহরের পরিস্থিতি। সন্ধ্যায় রফিকুল ইসলাম বকুল স্বাধীনতা চত্বরে সনি বিশ্বাসের পথসভা শেষে ফেরার পথে হাসপাতাল রোডে প্রধানের একটি কার্যালয় ভাংচুর করে একদল যুবক।
কার্যালয় ভাংচুরের খবর পৌছালেই শহরে শরিফ উদ্দিন প্রধানের সমর্থকরা মিছিল বের করে। এরপর শহরের বিভিন্ন স্থানেও দুই গ্রুপের মিছিল বের হয়। শুরু হয় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। আব্দুল হামিদ রোড, শালগাড়িয়ার গোডাউন মোড়, মেরিল বাইপাস, সরদার পাড়াসহ শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে দুই মেয়র প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
বিভিন্ন স্থানে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া খবর এবং শহরের ভেতরের দুই গ্রুপের মুখোমুখি শোডাউনের কারণে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে শহরের দোকানপাট বন্ধ হতে শুরু করে। যানবাহনগুলো শহর ত্যাগ করে।
বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বিশাল বিশাল মিছিল নিয়ে শহরে প্রবেশ করে নৌকার সমর্থকরা। পরে মিছিলগুলো প্রধান সড়ক আব্দুল হামিদ রোডশহ পাবনা শহরের বিভিন্ন সড়ক ও অলিগলি প্রদক্ষিণ করে।
শোডাউন শেষে শহরের বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুল স্বাধীনতা চত্বরে নির্বাচনী অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ সেলিমের ছেলে শেখ ফাহিম ও স্কয়ার গ্রুপের পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী পিন্টুসহ দলের নেতারা।
এর আগে দুপুরে শহরে বড় ধরনের শোডাউন করেছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) নারিকেল গাছ প্রতিকের প্রার্থী শরিফ উদ্দিন প্রধান। দুপুর ১২টার বিশাল মিছিল সহকারে আব্দুল হামিদ রোডে প্রবেশ করেন শরিফ উদ্দিন প্রধান। কয়েক হাজার নেতাকর্মী নিয়ে শহরে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে বানাবাণী হলের সামনে তার নির্বাচনী প্রধান কার্যালয়ের সামনে পথসভার মাধ্যমে শেষ হয়।
৩০ জানুয়ারির আলোচিত এই নির্বাচনে ৫ মেয়র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন- ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জেলা যুবলীগের আহবায়ক আলী মুতর্জা সনি বিশ্বাস (নৌকা) এবং আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী (স্বতন্ত্র) জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি শরিফ উদ্দিন প্রধান (নারকেল গাছ), বিএনপির মনোনীত জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাবেক এডওয়ার্ড কলেজের ভিপি নূর মোহম্মদ মাসুম বগা (ধানের শীষ), জাতীয় পার্টি মনোনীত চৌধুরী মোহম্মদ মাহাবুবুল হক (লাঙ্গল) , ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত আবু বক্কর সিদ্দীক (হাতপাখা)।
এছাড়া জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ২০১৫ সালে নৌকার প্রার্থী মো. রকিব হাসান টিপু এবার মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে জমা দিলেও শেষ পর্যন্ত তিনি সরে গেছেন। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জমা দেয়া পাবনা পৌর জামায়াতের সেক্রেটারি রকিব উদ্দিনের মনোনয়ন বাতিল করে নির্বাচন কমিশন।
পাবনা পৌরসভা ১৫টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। মোট ভোটার রয়েছে ১ লাখ ১২ হাজার ২৪৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫৮ হাজার ৪০ জন আর নারী ভোটার ৫৪ ২০৪ জন। সাধারণ কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ৭৪ জন আর সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ১৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।