ভারত থেকে উজানের পানিতে বয়ে যাওয়া বন্যার জন্য সরকারের পররাষ্ট্রনীতিকে দায়ী করেছে বিএনপি। তারা বলছে, ‘ভারতের সঙ্গে যে অভিন্ন নদী প্রায় ১৫৪টি, একমাত্র পদ্মার ফারাক্কা বাঁধ ব্যতীত কোনটারই কোনো পানি বন্টন চুক্তি ভারতের অনীহার কারণে সম্পন্ন হয়নি। তিস্তার চুক্তির কথা ফলোও করে এই সরকার প্রচার করলেও গত এক দশকে কোনো চুক্তি করতে সক্ষম হয়নি। এই সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে প্রায় প্রতি বছর বাংলাদেশের নদী অববাহিকায় বসবাসকারী মানুষেরা এই বন্যায় আক্রান্ত হয়ে সর্বশান্ত হচ্ছে। ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশন প্রায় নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে।’
দলের পক্ষে সোমবার(২৭ জুলাই) দুপুরে উত্তরায় নিজের বাসা থেকে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই অভিযোগ করেন।
বাংলাদেশ বন্যার জন্য ভারতীয় বাঁধ খুলে দেয়াকে দায়ী করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ভারতের অভিন্ন নদীগুলোর সকল বাঁধ ব্যারেজের গেট খুলে দেয়ায় উজান থেকে নেমে আসা বন্যার পানি বাংলাদেশে ব্রক্ষপুত্র, যমুনা, মেঘনা, মহানন্দা, পদ্মা, তিস্তা ও ধরলা নদীর অবাহিকায় প্রায় ৩৪টি জেলা ইতিমধ্যে প্লাবিত হয়ে গেছে। কয়েকটি জেলায় এক মাসের মধ্যে দুই-তিন বার বন্যার পানি উজান থেকে এসে ঘর-বাড়ি, ফসলের ক্ষেত ভাসিয়ে নিয়ে গেছে।’
করোনার মতোই বন্যা মোকাবিলায়ও ‘সরকার উদাসীন ও নিষ্ক্রিয়’ বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল বলেন, ‘করোনা মোকাবিলায় যেমন সরকার একেবারেই ব্যর্থ, চরম উদাসীনতা, অবহেলা ও দুর্নীতির কারণে গোটা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। ঠিক তেমনি বন্যার বিষয়েও সরকারের নিরবতা, নিষ্ক্রিয়তা মানুষকে আতঙ্কগ্রস্থ করছে। আমরা অনির্বাচিত সরকারের এই অবহেলা উদাসীনতা এবং নিষ্ক্রিয়তার নিন্দা জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে বন্যা প্রয়োজনীয় ত্রাণের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানাচ্ছি।’
দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীসহ দেশবাসীকে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর আহবানও বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘বিএনপি সব সময় যেকোনও দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়ায়-সর্বশেষ করোনা দুযোর্গে পাশে দাঁড়িয়েছে বিএনপি। বন্যা দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে বিএনপি একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে যা অবিলম্বে কাজ শুরু করবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘একজন মন্ত্রী তো বলেই ফেললেন ‘বন্যার বিষয়ে এতোটুকু চিন্তিত নই’। ভালো কথা। এই যে প্রতিদিন গণমাধ্যমে আসছে- আমরা বন্যার্ত মানুষের আহজারী ও তাদের অসহায়ত্ব কথা, সহায় সম্ভব হারিয়ে সড়কের অথবা বাঁধের ওপরে আশ্র্রয় নেওয়া শিশু সন্তান, বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে নিয়ে খোলা আকাশের নিচে অভুক্ত থাকা-এই বিষয়গুলো তাদের চিন্তিত করে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘তারা (সরকার) তো ধরা ছোঁয়ার বাইরে। জনগণের কাছে তাদের জবাবদিহিতা করতে হয় না। করোনা-বন্যা এসব দুযোর্গ এলে বরঞ্চ তারা খুশি হয় এই কারণে যে, দুর্নীতির নতুন সুযোগ সৃষ্টি হলো।’
বন্যা এলাকায় সরকার ত্রাণ দিচ্ছে, তারপরও কেনো উদাসীনতার অভিযোগ করছে প্রশ্ন করা হলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখন পর্যন্ত বন্যার জন্য কী পরিমান ত্রাণ সরকার কি দিয়েছে তা দেশবাসী জানেই না। এই ধরনের কোনো রিপোর্ট আমরা পাইনি যে, বন্যার জন্য ত্রাণ কোথাও ….। যেমন আমি জানি যে, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট জেলায় প্রথম দিকে কিছু সাহায্য দিয়েছে। তা তো …। আমরা মিডিয়া গুলোতে দেখতে পারছি যে, তারা বলছে যে তারা কেউ ত্রাণ পাচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই সরকার যতবারই ত্রাণের বিষয়ে গেছে, আপনারা দেখছেন যে, কোবিডের ব্যাপারে ত্রাণ বিতরণ করছিলো সেখানে কী ধরণের চুরি হয়েছে। কোনো কিছুই তারা বাদ রাখেনি, চাল, সোয়াবিন তেল থেকে শুরু করে সবই চুরি করেছে। এখন বন্যার যে ত্রাণ অবিলম্বে শুরু করা দরকার তার কোনো কার্য্ক্রমই আমরা দেখতে পারছি না। এখন সকল শক্তিকে এক করে ত্রাণের ব্যবস্থা করতে হবে, খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।’
এই অবস্থা থেকে উত্তরণে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নাই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জনগণের সরকার না থাকলে, জনগণের প্রতিনিধি না থাকলে, জনগণের পার্লামেন্ট যদি না থাকে তাহলে মানুষের সমস্যার সমাধান হতে পারে না। এই অনির্বাচিত সরকারের দ্বারা কখনোই জনগণের সমস্যা সমাধান সম্ভব হবে না। তারা শুধু মেগা প্রজেক্ট নিয়ে ব্যস্ত থাকবে। তারা তাদের নিজেদের পকেট ভারী করার কাজই করবে।’