রাজশাহীর কাটাখালী থানার সামনে শুক্রবারের দুর্ঘটনায় একজন বেঁচে থাকার খবর পাওয়া গেছে। তিনি দুর্ঘটনাকবলিত মাইক্রোবাসের যাত্রী ছিলেন। তাঁর নাম মো. পাভেল (১৮)। তাঁর বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার রামনাথপুর ইউনিয়নের দাড়িকাপাড়া গ্রামে। তিনি স্থানীয় একটি কলেজের একাদশ শ্রেণিতে পড়েন। গতকালের দুর্ঘটনায় তাঁর বাবা মোখলেসুর রহমান (৪০) ও মা পারভীন বেগম (৩৫) মারা গেছেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছিল, ওই মাইক্রোবাসে ১৭ জন আরোহী ছিলেন। দুর্ঘটনায় সবাই মারা গেছেন। পরে আত্মীয়স্বজন পাভেলকে জীবিত অবস্থায় শনাক্ত করেন। তখন জানা যায়, ওই মাইক্রোবাসে ১৮ জন আরোহী ছিলেন। তাঁদের মধ্যে শুধু পাভেলই বেঁচে আছেন।
পাভেল এখন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন আছেন। শনিবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের ইনচার্জ আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, ‘পাভেলকে দেখে মনে হচ্ছে তিনি বেঁচে যাবেন। তাঁর সিটি স্ক্যান করা হচ্ছে। এই প্রতিবেদন পেলে তাঁর পরিস্থিতি বলা যাবে।’
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গতকাল দুর্ঘটনার পরপরই প্রথমে সাতজনকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। এর মধ্যে পাভেল ছিলেন। ধারণা করা হচ্ছিল, তিনি বাসের যাত্রী ছিলেন। তাঁকে অচেতন অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয়। তাঁর কোনো আত্মীয়স্বজন ছিলেন না। তাঁকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাসপাতালের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। পরে জাহিদ নামের এক ব্যক্তি পাভেলকে হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করানোর ব্যবস্থা করেন।
জাহিদ নিজেকে আহলে হাদিস বাংলাদেশের কর্মী পরিচয় দিয়ে বলেন, তাঁর বাড়ি রাজশাহী নগরের নওদাপাড়া আমচত্বর এলাকায়। কাটাখালীতে দুর্ঘটনার পর জানতে পারেন, তাঁর পরিচিতজন ওই মাইক্রোবাসে ছিলেন। তাই দুর্ঘটনার পর বিকেলে তিনি হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে গিয়ে তাঁদের খোঁজ করছিলেন। তাঁর পরিচিতজনদের সবাই মারা গেছেন বলে জানতে পারেন। কিন্তু পাভেলকে কেউ তখন চিনছিলেন না। পরে তাঁকে আইসিইউতে ভর্তির ব্যবস্থা করেন তিনি। রাত ১১টার দিকে পাভেলের স্বজন লিটনকে ছবি দেখালে তিনি তাঁকে শনাক্ত করেন।
আজ সকালে পাভেলের চাচা ও দাদি এসেছেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। চাচা মো. লিটন মিয়া বলেন, তিনি রাত ১১টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছান। এসে শোনেন এখানে দুর্ঘটনায় আহত একজন আছেন। আইসিইউতে গিয়ে তিনি জাহিদের কাছে ছবি দেখে এবং পরে ভেতরে গিয়ে পাভেলকে চিনতে পারেন।
মো. লিটন মিয়া বলেন, পাভেলের দুই ভাই ও দুই বোন আছেন। ভাইদের মধ্যে পাভেল সবার ছোট। পাভেলের বাবা মোখলেসুর রহমান পীরগঞ্জ উপজেলা সদরে লেদ মেশিনের মেকানিক ছিলেন।
গতকাল দুপুরে রাজশাহীর কাটাখালী থানার সামনে রাজশাহী-নাটোর মহাসড়কে বাসের সঙ্গে সংঘর্ষে মাইক্রোবাসে আগুন ধরে যায়। আগুনে পুড়ে মারা যান মাইক্রোবাসে থাকা ১৭ জন। তাঁরা সবাই রংপুর থেকে রাজশাহীতে বেড়াতে যাচ্ছিলেন।
রাজশাহীতে থাকা নিহত ব্যক্তিদের স্বজনেরা জানান, নিহত ১৭ জনের বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে। এর মধ্যে চৈত্রকোল ইউনিয়নের বড়রাজাপুর গ্রামের একই পরিবারের পাঁচজন, রামনাথপুর ইউনিয়নের বড় মহাজিদপুর গ্রামের একই পরিবারের পাঁচজন, রায়পুর ইউনিয়নের দাড়িকাপাড়া গ্রামের একই পরিবারের তিনজন, পৌর এলাকার প্রজাপাড়ার একই পরিবারের তিনজন ও দুরামিঠিপুর গ্রামের একজন।
-প্রথম আলো