পাবনা সদর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী দুবলিয়া মেলার দুবলিয়া হাজী জসিম উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের অংশ বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। তবে মেলার দুবলিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অংশের মেলা চলছে। বন্ধের পর কলেজ অংশের এই মেলা নিয়ে কলেজের অধ্যক্ষ এবং মেলা কমিটির সভাপতি স্থানীয় চেয়ারম্যানের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অনুমোদন না থাকায় মেলা উদ্বোধনের ৫ দিন পর বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) বিকেলে পাবনা সদর সহকারী ভূমি কমিশনার (এসিল্যান্ড) মো. শওকত মেহেদী সেতুর নেতৃত্বে জেলা প্রশাসনের এক টিম অভিযান চালিয়ে মেলার এই অংশ বন্ধ করে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে এসিল্যান্ড মো. শওকত মেহেদী সেতু বলেন, ‘মেলা নিয়ে জেলা প্রশাসক স্যারের কাছে অভিযোগ আসায় স্যারের নির্দেশে আমরা গিয়ে বিষয়টি তদন্ত করে। মেলা কর্তৃপক্ষ স্কুল অংশের অনুমোদন দেখাতে পারলেও কলেজ অংশের কোনও অনুমোদন দেখাতে পারেনি এবং এটির অনুমোদন ছিলও না। এজন্য আমরা মেলাটি বন্ধ করে দিয়েছি। এছাড়াও সেটাকে শিল্প মেলার নাম উল্লেখ্য করে ব্যবহার করা হচ্ছিল, কিন্তু শিল্প মন্ত্রণালয়ের কোনও অনুমোদন নেই। পরে সেটিও তারা সংশোধন করেছে।’
কীভাবে কলেজ অংশে মেলা বসলো এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা তাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি ছিল। স্কুল ও কলেজ কর্তৃপক্ষের পৃথক আবেদনের কথা থাকলেও স্কুল কর্তৃপক্ষ কলেজ কর্তৃপক্ষকে বলেছিল কলেজ অংশের অনুমোদন প্রয়োজন হবে না। তাদের ভুল বোঝাবুঝির কারণে এমনটা হয়েছিল।’
বিষয়টি চরতারাপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সিদ্দিক খানের দিকে ঠেলে দিয়ে দুবলিয়া হাজী জসিম উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘চরতারাপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সিদ্দিক খানের অনুরোধে কলেজ প্রাঙ্গণে মেলা বসার অনুমোদন দিয়েছিলাম, এখন অনুমোদন ছিল কিনা আমি জানতাম না। চেয়ারম্যানসহ এলাকার গণমান্য ব্যক্তিবর্গ বলায় মেলা বসতে দিয়েছিলাম।’
তবে চেয়ারম্যানের পাল্টা অভিযোগ কলেজের অধ্যক্ষের দিকে। মেলা কমিটির সভাপতি ও চরতারাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিদ্দিক খান বলেন, ‘আমি নিষেধ করেছিলাম কিন্তু কলেজের অধ্যক্ষ ও শিক্ষকরা অনুরোধ করলো যে, ‘কলেজের উন্নয়নকল্পে টাকাটা কাজে লাগাবো’। তাদের অনুরোধ সেখানে মেলা বসানো হয়েছিল।’
জানা গেছে, গত ৯ অক্টোবর রাতে ১৫দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী দুবলিয়ার উদ্বোধন করেন পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স। ১৬টি শর্তে এই মেলার অনুমোদন দেয়া হলেও কোনও শর্তই সেখানে মানা হচ্ছে না। মেলা শুরুর কয়েকদিন পর কলেজের পেছনে জুয়া খেলা নিয়ে মেলা কমিটির সেক্রেটারি রইস খানের ছেলে ছাত্রলীগ নেতা সিয়াম আরেক ছাত্রলীগ নেতা কাওছারকে মারধর করে। এনিয়েও উত্তেজনা চলছিল।
তবে মেলা কমিটির সেক্রেটারি ও সাদুল্লাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রইস খানের ক্ষোভ সাংবাদিকদের নিয়ে। তিনি বলেন, ‘আপনারা সাংবাদিকরা অভিযোগ দিয়েছেন ‘ইয়ে তিয়ে অমক তমক’, এজন্য প্রশাসন বন্ধ করে দিয়েছে। আপনারা জাতির বিবেক কিন্তু শত শত মানুষের কথা চিন্তু করলেন না, আপনাদের জন্য দেশে আর কিছু হবে না, মানুষের জন্য আর কিছু হবে না।’
ছেলের সঙ্গে কাওছারের ঝামেলা বিষয়ে রইস খান বলেন, ‘আপনাদের মতো এই সাংবাদিকদের জন্য দেশের আজকে এই অবস্থা। আপনারা এসে দেখে যান, আমার ছেলে জুয়া খেলে কি-না। এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, মিথ্যা তথ্য নিয়ে কিছু (সংবাদ) করা আসলে ঠিক না।’
এবিষয়ে আতাইকুলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান বলেন, ‘অনুমোদিত জায়গার বাহিরে হওয়ায় ওই অংশ ডিসি স্যারের নির্দেশে বন্ধ করা হয়েছে। এছাড়া মেলা সম্পূর্ণ ফ্রেস মেলা, কোনও ঝামেলা নেই, কোন ধরনের জুয়া নেই।’
এবিষয়ে পাবনা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্যাস্ট (এডিএম) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘১৬টি শর্তের প্রেক্ষিতে দুবলিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ১০দিনের মেলা করার অনুমতি দেয়া হয়েছিল, অনুমোদনহীন জায়গার মেলা বন্ধ করা হয়েছে। বারতি কোন মাঠ ব্যবহারের সুযোগ নেই। উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে মেলা মনিটরিং করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আর কোন ধরণের শর্ত ভঙ্গ হলে তাৎক্ষণিক ভাবে মেলা বন্ধ করে দেয়া হবে।’