পাবনা সদর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী দুবলিয়া মেলার দুবলিয়া হাজী জসিম উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের অংশ প্রশাসন বন্ধ করায় সাংবাদিকদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও সাদুল্লাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রইস উদ্দিন খান।
মেলার অবৈধ অংশ বন্ধ হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি বলেন, ‘স্কুল মাঠে জায়গা না হওয়ায় পাশের কলেজ মাঠে মেলা বসিয়ে ছিলাম, কিন্তু আপনারা সাংবাদিকরা অভিযোগ দিয়েছেন ‘ইয়ে তিয়ে অমক তমক, কলেজের শিক্ষার্থীদের অমুক অসুবিধা হচ্ছে, তমুক অসুবিধা হচ্ছে’, এজন্য প্রশাসন বন্ধ করে দিয়েছে। আপনারা জাতির বিবেক কিন্তু শত শত মানুষের কথা চিন্তু করলেন না, আপনাদের জন্য দেশে আর কিছু হবে না, মানুষের জন্য আর কিছু হবে না।’
রইস উদ্দিন খান বিভিন্ন সময়ে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে আলোচনায় এসেছিলেন। গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হয়েছেন। কয়েক বছর ধরে মেলা কমিটির সঙ্গে যুক্ত থেকে লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগও রয়েছে। তিনি মাদক ব্যবসায়ীর সঙ্গেও জড়িত। এর আগে চলতি বছরের ১৪ এপ্রিল র্যাবের হাতে বিপুল পরিমাণ ফেনসিডিলসহ গ্রেফতার হয়েছিলেন এই আওয়ামী লীগ নেতা।
রইস খানের বড় ছেলে অন্তর খান সাদুল্লাপুর ইউনিয়ন শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি। আরেক ছেলে সিয়ামও রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। চলমান মেলার কলেজ অংশের পেছনে রাতে জুয়া (হাউজি) খেলা নিয়ে সিয়াম আরেক ছাত্রলীগ কর্মী কাওছারকে মারধর করে। এনিয়েও উত্তেজনা চলছিল।
এই নিয়ে বক্তব্য জানতে চাইলেও সাংবাদিকদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন রইস খান। তিনি বলেন, ‘আপনাদের মতো এই সাংবাদিকদের জন্য দেশের আজকে এই অবস্থা। আপনারা এসে দেখে যান, আমার ছেলে জুয়া খেলে কি-না। এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, মিথ্যা তথ্য নিয়ে কিছু (সংবাদ) করা আসলে ঠিক না।’
এর আগে অনুমোদন না থাকায় মেলা উদ্বোধনের ৫ দিন পর বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) বিকেলে পাবনা সদর সহকারী ভূমি কমিশনার (এসিল্যান্ড) মো. শওকত মেহেদী সেতুর নেতৃত্বে জেলা প্রশাসনের এক টিম অভিযান চালিয়ে মেলার এই অংশ বন্ধ করে দিয়েছে।
বন্ধের পর কলেজ অংশের এই মেলা নিয়ে কলেজের অধ্যক্ষ এবং মেলা কমিটির সভাপতি স্থানীয় চেয়ারম্যানের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ পাওয়া গেছে। কলেজের অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ এই অবৈধ মেলার জন্য চরতারাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেলা কমিটির সভাপতি সিদ্দিক খানকে দায়ী করলেও সিদ্দিক খান পাল্টা কলেজের অধ্যক্ষ ও শিক্ষকদের দায়ী করেন।
এবিষয়ে পাবনা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্যাস্ট (এডিএম) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘সাংবাদিকদের অভিযোগে নয়, মেলার এই অংশের অনুমোদন না থাকায় আমরা বন্ধ করেছি। এক জায়গায় অনুমোদন নিয়ে আরেক জায়গায় মেলা চলতে পারে না। ১৬টি শর্তের প্রেক্ষিতে দুবলিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ১০দিনের মেলা করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। আর কোন ধরণের শর্ত ভঙ্গ হলে তাৎক্ষণিক ভাবে মেলা বন্ধ করে দেয়া হবে।’