পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় মিঠুন আলী (২৫) নামের এক শারীরিক প্রতিবন্ধী যুবক হত্যার ঘটনায় জবা খাতুন (২৭) নামের এক তরুণীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
রবিবার (২৩ মে) দুপুরে পাবনার বিশেষ জেলা ও দায়রাজজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আহসান তারেক এ রায় ঘোষণা করেন।
নিহত মিঠুন ঈশ্বরদী পৌরসভার শৈলপাড়া মহল্লার আব্দুল মজিদ প্রামানিকের ছেলে। যাবজ্জীবন সাজপ্রাপ্ত নারী নাটোরের লালপুর উপজেলার পুরাতন ঈশ্বরদীর বিসিক মোড় এলাকার মৃত সাগর শেখের স্ত্রী। আদেশের সময় আসামি জবা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। মামলার অপর আসামী সাগর শেখ ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে পাবনা জেলা কারাগারে মৃত্যুবরণ করেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ৪ আগস্ট ঈশ্বরদী উপজেলার দাশুড়িয়া এলাকা থেকে অটোরিকশাচালক মিঠুন আলী (২৮) কে দেখা করার কথা বলে মোবাইল ফোনে বাড়ি থেকে ডেকে নেয় জবা ও তার স্বামী সাগর। ঈশ্বরদীর বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাঘুরির পর রাতে সুগারক্রপ গবেষণা কেন্দ্রের পাশে নির্জন এলাকায় জবার সহযোগিতায় দা দিয়ে মিঠুন কে কুপিয়ে হত্যা করে সাগর। পরে তারা মরদেহ ফেলে অটোরিকশা নিয়ে পালিয়ে যায়।
ঘটনার আটদিন পরে মিঠুনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। লাশ উদ্ধারের পরেরদিন( ১৪ আগস্ট) রাতে নিহতের পিতা আব্দুল মজিদ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের নামে থানায় এজাহার দায়ের করেন। পরে কললিষ্টের সূত্র ধরে দীর্ঘ তদন্তের পরে হত্যাকারী হিসেবে এই দম্পতিকে শনাক্ত করা হয়। পুলিশের তদন্তে জবা ও সাগরের হত্যায় সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হয়। পরে ১৬৪ ধারায় স্বীকোরোক্তিমূলক জবানবন্দিতে সাগর ও জবা জানান, মিঠুন জবাকে বিভিন্ন সময়ে উত্যক্ত ও প্রেমের প্রস্তাব দেওয়ায় পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করেছে তারা।
এরপর ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ১৯ তারিখে এই দুই স্বামী স্ত্রীর নামে চার্জশিট দাখিল করা হয়। ১৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যদানের ভিত্তিতে হত্যার সাথে সরাসরি জড়িত থাকা প্রমাণ হওয়ায় আদালত আজ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এই আদেশ দেন।
আসামীপক্ষের আইনজীবী ছিলেন এডভোকেট আব্দুল আহাদ বাবু ও এডভোকেট সাইদুল চৌধুরী। তারা জানান, পরিবারের পক্ষ থেকে আপিল করার কথা জানানো হলে আমরা উচ্চ আদালতে খালাসের জন্য আপিল করব। সেখানে নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে বেকসুর খালাস পাবে বলে মন্তব্য করেন তারা।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এডভোকেট দেওয়ান মজনুল হক জানান, প্রতিবন্ধী যুবকের কোন গুরুতর অপরাধ না থাকলেও তুচ্ছ কারণে তাকে হত্যা করা হয়। শুধু তাই নয় তার ব্যবহৃত অটোবাইকটিও রং পরিবর্তন করে বাজারে বিক্রি করে দেয়। ভুক্তভোগী পরিবারটি অসহায় ছিল। ছেলের অটোবাইকের আয় রোজগার দিয়েই তাদের সংসার পরিচালনা করা হতো। ছেল হত্যার পর পরিবারটি নিঃশ হয়ে যায়। এই মামলার যিনি তদারকি কর্মকর্তা ছিলেন তিনি সঠিকভাবে মামলা তদন্ত করায় দ্রুত সময়ের মধ্যে মামলার রায় ঘোষণা করা সম্ভব হয়েছে। অভিযুক্ত দুজন হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছিলেন। এই রায়ে উচ্চ আদালতে আপিল করলেও সাজা কমে আসার কোন সম্ভাবনা নেই।