ঢাকা থেকে পাবনা জেলাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক। ঈদে ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তি দূর করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হলেও বর্তমানে সড়কটিতে চলমান উন্নয়ন কাজের জন্য যান চলাচলের স্বাভাবিক গতি ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি বাড়ছে যানজট। আর তাই এবার ঈদে ঘরমুখো মানুষদের তীব্র যানজট ও ভোগান্তি পোহাতে হবে বলে আশঙ্কা করছেন যাত্রী ও যানবাহন চালকরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সিঅ্যান্ডবিতে সড়ক বিভাজন স্থাপন ও ধামরাইয়ের কালামপুর ও শ্রীরামপুরে কার্পেটিংয়ের কাজ চলমান রয়েছে। কাজের জন্য ওই এলাকায় সড়কের একাংশ বন্ধ রাখায় মহাসড়কে এখনই যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। ঈদের আগে যদি এ সমস্যার সমাধান না করা হয় তাহলে দুর্ভোগে পড়বে যাত্রী ও যানবাহন চালকরা।
এছাড়া নবীনগর থেকে চন্দ্রা সড়কের বাইপাইল ত্রিমোড়, রপ্তানি বাসস্ট্যান্ড, বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়কের জামগড়া, ইউনিক, জিরাবো বাসস্ট্যান্ড ও আশুলিয়া বাজার এলাকায় বিভিন্ন পরিবহন এবং বাস যত্রতত্র এলোমেলোভাবে পার্কিংয়ের কারণে তৈরি হচ্ছে যানজট। সড়কটির বেশ কয়েকটি স্পট খানাখন্দে ভরা এবং সড়কে পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যাবস্থা না থাকায় অল্প বৃষ্টিতেই সেখানে জমে হাটুপানি। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে পাথর ও পিচ এর পরিবর্তে এ সড়কে ব্যাবহার করা হয়েছে ইটের সলিং।
এ বিষয়ে পাটুরিয়াগামী সেলফি পরিবহণের চালক রমজান আলী বলেন, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভার ও ধামরাই অংশের সিঅ্যান্ডবি, কালামপুর, শ্রীরামপুরসহ বেশ কয়েকটা এলাকায় রাস্তার কাজ শেষ হয়নি। ঈদের বাকি আর সপ্তাহ খানেক। এর মধ্যেই যদি রাস্তাগুলো ঠিক করা না হয় তাহলে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হবে সবার।’
আফসার উদ্দিন নামের এক যাত্রী বলেন, ‘ঈদের জন্য মানুষ গন্তব্যে যাওয়া-আসা শুরু করেনি। এখনই তো গাবতলি থেকে ধামরাই আসতে আড়াই ঘণ্টা লেগে গেল। রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় এখনো অনেক কাজ বাকি। ঈদের আগে কাজ শেষ না হলে এবার সবাইকে ভুগতে হবে।’
ধামরাইয়ের রেন্ট-এ-কার চালক নুরু মিয়া বলেন, সড়কে উন্নয়ন কাজ চলার কারণে প্রায়ই এক থেকে দেড় ঘণ্টা জ্যামে পড়ে থাকতে হয়। এক ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতেই পার হয়ে যায় ২-৩ ঘণ্টা।
বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়কে নিয়মিত যাতায়াতকারী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ইমরান বলেন, ‘দীর্ঘদিন যাবত সড়কটির বিভিন্ন অংশে খানাখন্দে ভরপুর। যার কারণে যানবাহনগুলোও ধীরগতিতে চলে। আর অল্প বৃষ্টিতেই সড়কে দেখা দেয় হাঁটু সমান পানি। আর কদিন পরেই ঈদ এসময় বাড়িফেরা মানুষের চাপে এই সড়কে নিয়মিত যাতায়াত করাটা হয়ত দুষ্কর হয়ে পড়বে।’
এ ব্যাপারে ঢাকা সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ শামীম আল মামুন বলেন, ‘আসন্ন ঈদকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে সড়কে চলমান উন্নয়ন কার্যক্রম সমাপ্ত করার বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছি। যে সকল স্থানে যানজট দেখা দিচ্ছে সেগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে দ্রুত কাজ শেষ করার চেষ্টা করছি। আশা করছি সড়কে ঈদে ঘরমুখো মানুষের চাপ বাড়ার আগেই অধিকাংশ কাজ শেষ করতে সক্ষম হবো। সড়কের উপর ভাসমান দোকান উচ্ছেদ অভিযানও অব্যাহত রয়েছে।’
এদিকে বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়কটি ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্পের কাছে হস্তান্তর করেছে সওজ। এখন সড়কটি দেখভালের সম্পূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন তারা। এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক মো. সাহবুদ্দিন খান ঢাকা মেইলকে বলেন, সড়ক ও জনপদ বিভাগের কাছ থেকে আমরা দায়িত্ব নেয়ার পর যেখানেই সমস্যা দেখা দিচ্ছে গুরুত্ব বিবেচনা করে সেগুলোর সমাধান অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করা হচ্ছে।
ঢাকা জেলা ট্রাফিক পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ হিল কাফী বলেন, আমরা মূলত ২৮ এপ্রিল থেকে ১ মে পর্যন্ত সময়টিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। ইতিমধ্যেই সড়কে চলাচলরতদের দুর্ভোগ কমাতে জনবল বৃদ্ধি করা হয়েছে। ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে আরও জনবল বাড়ানোর সিদ্ধান্তসহ ২০ জনের একটি দলকে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
সংগৃহিত-ঢাকা মেইল