রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দিয়ে বিনা টিকেটে রেল ভ্রমণ এবং তাদেরকে জরিমানা করায় ট্রেনের টিটিইকে বরখাস্তের ঘটনায় পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) নাসির উদ্দিনকে শোকজ করা হয়েছে। রবিবার (৮ মে) বিকেলে তাকে শোকজ করেন পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) শাহিদুল ইসলাম।
রবিবার (৮ মে) সন্ধ্যায় বিষয়টি পাবনা বার্তা ২৪ ডটকমকে নিশ্চিত করেছেন পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে সংস্থাপন ও প্রধান তথ্য প্রধানকারী কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন। তিনি বলেন, কোনও কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বরখাস্ত করার ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম রয়েছে। সেগুলো তিনি (নাসির উদ্দিন) মানেননি। ফলে নিজ ক্ষমতা বলে ডিআরএম মহাদয় তাকে শোকজ করেছেন। আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তাকে শোকজের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এদিন সকাল ১০টা থেকে পাকশীর বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তার (ডিসিও) কার্যালয়ে তদন্ত কমিটির কার্যক্রম শুরু হয়। তদন্ত কমিটির তলবের ফলে এদিন ডিসিও কার্যালয়ে হাজির হোন টিটিই শফিকুল ইসলাম, গার্ড ও বিনা টিকিটধারী তিন ট্রেনযাত্রীসহ সংশ্লিষ্টরা। শুরুতেই পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) নাসির উদ্দিন ও ভুক্তভোগী টিটিই শফিকুল ইসলামের বক্তব্য নেয়া হয়। এরপরেই নিজ ক্ষমতাবলে টিটিই শফিকুল ইসলামের বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করে স্বপদে বহলা করেন পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের ব্যবস্থাপক শাহিদুল ইসলাম।
শাহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনার দিন ছুটিতে ছিলাম। আজকেই যোগদান করেছি। ওই সময় বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা ( ডিসিও) নাসির উদ্দিন ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে ছিলেন। কোনও আত্মপক্ষ সমর্থন ছাড়াই ওই ট্রেনের ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরীক্ষক (টিটিই) শফিকুল ইসলামকে বরখাস্ত করেছিলেন ডিসিও নাসির উদ্দিন, কোনও প্রকার লিখিত না দিয়ে শুধু মৌখিক ভাবে এতো দ্রুত বরখাস্ত সমর্থন যোগ্য নয়। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে টিটিই শফিকুল ইসলামে বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে।
এর আগে শনিবার (৭ মে) ঘটনার প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এতে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে সহকারী পরিবহণ কর্মকর্তা (এটিও) সাজেদুল ইসলামকে প্রধান এবং সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী (এইএন) শিপন আলী ও রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সহকারী কমান্ডেন্ট (এসিআরএনবি) আবু হেনা মোস্তফা কামালকে সদস্য করা হয়।
গত শুক্রবার (৬ মে) রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দিয়ে বিনা টিকেটে রেল ভ্রমণ করায় তিন যাত্রীকে জরিমানা করায় সাময়িক বরখাস্ত করা হয় খুলনা থেকে ঢাকাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেসের ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরীক্ষককে (টিটিই) শফিকুল ইসলামকে।
এদিকে বিনা টিকিটে ওই তিন আত্মীয় পরিচয় অস্বীকার করে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘বিনা টিকিটে ট্রেনে ভ্রমণ করা যাত্রীরা আমার আত্মীয় নয়; ওদের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। মন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে কেউ হয়তো সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করেছে। ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। ঘটনাটি শনিবার সকালেই শুনেছি। রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে শুনেছি ওই টিটিই বিনা টিকিটের যাত্রীদের সঙ্গে অত্যন্ত খারাপ আচরণ করেছেন। ফলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।’
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে খুলনা থেকে ঢাকাগামী আন্তঃনগর সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনে বিনা টিকিটে এসি রুমে উঠেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের আত্মীয় পরিচয়ে তিন যাত্রী। মাঝপথে তাদের বিনা টিকিটে রেলভ্রমণের দায়ে জরিমানা করে সাময়িক বরখাস্ত হোন ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরীক্ষক (টিটিই) শফিকুল ইসলাম। এনিয়ে গণামধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় সৃষ্টি হয়।