আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি বিএনপি নেতা জাকারিয়া পিন্টুকে নিয়ে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও চরমপন্থি নেতা হিসেবে আখ্যায়িত করে র্যাবের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছেন পাবনার ঈশ্বরদীর বিএনপির ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
শনিবার (২ জুলাই) দুপুরে উপজেলার পশ্চিমটেংরী ব্রাদাস ইউনিয়ন কাব চত্বরে ঈশ্বরদী উপজেলা এবং পৌর বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ব্যানারে এক সংবাদ সংবাদ সম্মেলনে নেতারা এ প্রতিবাদ জানান।
উপজেলা বিএনপির আহব্বায়ক আহসান হাবিবের সভাপত্বিতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পৌর বিএনপি’র যুগ্ম আহব্বায়ক এস এম ফজলুর রহমান। তিনি বলেন, পিন্টুকে গ্রেফতারের পর র্যাবের মিডিয়া উইং আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তাকে সন্ত্রাসী বাহিনীর পৌষ্যকারী, চরমপন্থী, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, খুনি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। র্যাবের ভিত্তিহীন ও মিথ্যা বক্তব্যে আমরা হতবাক, বাকরুদ্ধ ও হতভম্ব হয়েছি।
পিন্টুকে সন্ত্রাসী, চরমপন্থী, সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ হিসেবে আখ্যায়িত করার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে ফজলুর রহমান বলেন, জাকারিয়া পিন্টু বিএনপি’র সম্মানিত জনপ্রিয় জননেতা। তিনি একজন বিচক্ষণ ও ত্যাগী বিএনপি নেতা। তিনি সন্ত্রাসী বা চাঁদাবাজ নন। সে ৮০ দশক থেকেই ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তিনি ঈশ্বরদী সরকারি কলেজ ছাত্রসংসদের এজিএস, উপজেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক, উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক, পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব পদে রয়েছেন। পিন্টু ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদ ও পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাঁর মতো জননন্দিত নেতাকে র্যাব সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ বলায় আমরা মর্মাহত ও ব্যথিত।
আহসান হাবিব বলেন, পিন্টুর মতো একজন জননন্দিত নেতাকে যেভাবে সন্ত্রাসী বাহিনীর নেতা, চরমপন্থী ও সন্ত্রাসী হিসেবে উপস্থাপন করা হয় তা আমাদের বোধগম্য নয়। তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তার কোন ভিত্তি নেই। যে মামলায় তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে, এটি সরকারের একটি ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা। ফরমায়েসী রায়ে ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামী জাকারিয়া পিন্টুসহ ৪৭ নেতাকর্মীর মুক্তি দাবি করছি।
সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি জামিল আক্তার এলাহী বলেন, জাকারিয়া পিন্টুসহ এ মামলার সকল আসামী রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার। আইনী লড়াইয়ের মাধ্যমে এদের মুক্ত করা হবে। পিন্টু একজন দক্ষ ও জনবান্ধব বিএনপি নেতা। সে সন্ত্রাসী বা চাঁদাবাজ নয়।
সংবাদ সম্মেলনে ঈশ্বরদী পৌর বিএনপি’র যুগ্ম আহব্বায়ক আতাউর রহমান পাতা, আমিনুর রহমান স্বপন, সদস্য সচিব বিষ্ট সরকার, সদস্য সুমার খান, যুবদল নেতা জুয়েল জাকিরসহ ঈশ্বরদী উপজেলা এবং পৌর বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, ১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার ট্রেনবহরে হামলা ও গুলিবর্ষণ করা হয়। দীর্ঘ আইনিপ্রক্রিয়া শেষে ২০১৯ সালের ৩ জুলাই জাকারিয়া পিন্টুসহ ৯ জনকে মৃত্যুদন্ড, ২৫ জনকে যাবজ্জীবন এবং ১৩ জনকে ১০ বছর কারাদন্ড দেন আদালত। এরপর থেকেই পিন্টু পলাতক ছিলেন। দীর্ঘ সময় আত্মগোপনে থাকার পর গত ২৫ জুন কক্সবাজারের টেকনাফ এলাকা থেকে র্যাবের হাতে ধরা পরে পিন্টু। পরদিন ২৬ জুন রবিবার ঢাকায় র্যাবের মিডিয়া উইং সংবাদ সম্মেলন করে। গত ২৭ জুন আদালতের মাধ্যমে জেলে প্রেরণ করা হয়।