ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে পাবনার কলা চাষিদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পাবনা সদরের হেমায়েতপুর ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি কলা ক্ষেতে গিয়ে দেখে যায়, প্রায় সব গাছই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাগানে দুমড়েমুচড়ে রয়েছে কলা গাছ। ফলন্ত এসব গাছের কলা আর মাসখানেক পরই পরিপক্ব হওয়ার কথা। সারা বছর খরচ করার পর ফসল ঘরে তোলার সময় এই ক্ষতি কলা চাষিদের সর্বস্বান্ত করে ফেলেছে।
সরেজমিনে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হেমায়েতপুর এলাকায় প্রায় তিন হাজার হেক্টর জমিতে কলা চাষ করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে এসব কলা বাগানের অধিকাংশ গাছই নষ্ট হয়ে গেছে। অপরিপক্ব কলা কেটে নিতে বাধ্য হচ্ছেন চাষিরা। অনেকেই কলা চাষ করেই জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু এত বড় ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার সামর্থ্য নেই অধিকাংশ কৃষকের। তাই তারা সরকারের কাছে সহযোগিতা কামনা করেছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানান, ইতোমধ্যে কলা চাষের সব ব্যয় শেষ করেছেন তারা। কেউ একশ’ বিঘা, কেউ দেড়শ’ বিঘা, আবার কেউ কয়েকশ’ বিঘা জমিতে কলার আবাদ করেছেন। অপেক্ষায় ছিলেন ঘরে তোলার। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় আম্পান সেই স্বপ্ন নিমিষেই নষ্ট করে গেছে।
ক্ষতিগ্রস্থ কলাচাষি বজলুর রহমান বগা জানান, এবারে ১শ বিঘা জমিতে প্রায় পঁয়ত্রিশ হাজার কলার গাছ লাগাইছি। সার, বিষ, লেবার দিয়ে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকার মতো খরচ করছি। আমি এগারো মাস ধরে পরিচর্যা করিছি। আর এক মাস পরেই এটার ফল পাবো। কিন্তু হঠাৎ এই ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে আমার অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। আমি এখন দিশেহারা হয়ে গেছি।
ক্ষতিগ্রস্থ কলাচাষি আলম সরদার বলেন, আমার চার বিঘা জমির উপর কলা বাগান। করোনার কারণে এতো দিন কেউ কলা কিনতে আসে নাই। রোজার মাসে কলা বিক্রি শুরু করেছি কিছুদিন আর এর মধ্যেই এ ঘূর্ণিঝড়ে আমার কলার বাগানের গাছ ভাঙ্গে চূড়মার করে দিলে। এখন আমি কি খাবো, আর কি পড়বো, আর কে আমাক সাহায্য করবি। আমার এই কলা বিক্রি করে সংসার চৈলতে।
ক্ষতিগ্রস্থ কলাচাষি তোফাজ্জল হোসেন জানান, আমি ১৬০ বিঘা জমিতে কলা চাষ করি। এই করোনার কারণে আমি কোন কলা কাটি নাই। আমার অনেক পরিমান কলা ছিলো। রোজার মাসে কিছু কলা কাটতে শুরু করি। কিন্তু আম্পান ঘূর্ণিঝড়ের কারণে আমার অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। আমি জমি বর্গা নিয়ে এবং প্রায় দেড় কোটি টাকা ঋণ করে এই কলা চাষ শুরু করেছিলাম। আমি এখন শেষ হয়ে গেছি, নিঃস্ব হয়ে গেছি, পথে বসে গেছি। এই কলা চাষা ছাড়া আমার আর কোন উপায় নাই। আমাকে যদি সরকার অল্প কিছু সহযোগিতা করে। তাহলে আমি আবার এই কলা চাষ শুরু করতে পারবো।
হেমায়াতেপুর ইউনিয়ন কলাচাষি সমিতির যুগ্ম-আহবায়ক জায়েদুল সরদার বলেন, আমাদের এই অঞ্চলের কলাচাষ প্রধান এলাকা। এবার আমাদের সমিতির কলাচাষি ৭৭ জন সদস্য প্রায় তিন হাজার হেক্টর জমিতে কলা চাষ করেছে। হঠাৎ এই ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে আমাদের কলা বাগানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কোটি কোটি টাকা লোকসানের সম্মুখিন হতে হবে আমাদের। সরকারের কাছে আমাদের সহায়তা দাবি করছি।
এদিকে পাবনা জেলা কলা বাজার মালিক ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোঃ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমাদের কলার ব্যবসা মূলত তিন মাস। শীতকাল ডাল সিজেন। এ সময় কলা ব্যবসায়ী ও কলাচাষীদের কোন ব্যবসা হয় না। এদিকে করোনার কারণে কলার ব্যবসা মন্দা চলছে। রোজার মাসে কিছু ব্যবসা শুরু হয়েছিল। এর মধ্যেই প্রাকৃতিক দূর্যোগ আম্পান ঘুর্ণিঝড়ে কৃষক ও কলাচাষিদের অপূরর্ণীয় ক্ষতি হয়েছে। গাছ ভেঙ্গে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সরকারি ভাবে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার জোর দাবী জানাই।
এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামারবাড়ি, পাবনা উপপরিচালক ডা. আজহার আলী বলেন, পাবনা জেলায় এ মৌসুমে ২৯০০ হেক্টর জমিতে কলার চাষ হয়েছে। ইতোমধ্যে ৭০ শতাংশ কলা কর্তন করা হয়েছে। বাকি কলাগুলো পরিপক্ক অবস্থায় বিক্রি করার মতো ছিল। ঘুর্ণিঝড় আম্পানে প্রায় ৭০০ হেক্টর জমির কলা নষ্ট হয়ে গেছে। উর্ধ্বতন দপ্তরে রিপোর্ট করা হয়েছে। এটা আমাদের অপূরণীয় ক্ষতি। সরকার কলার উপর কোন সহায়তা দিলে ক্ষতিগ্রস্থদের মধ্যে সহায়তা হিসেবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই বিতরণ করা হবে।