কেন্দ্রে কেন্দ্রে ইভিএম ত্রুটি, গোপন কক্ষে ভোটারের সঙ্গে পোলিং অফিসার!

পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার করমজা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের শুরুতেই ব্যাপক ইভিএম জটিলতা দেখা দিয়েছে। অনেক ভোটার অজ্ঞতার কারণে ভোট দিতে না পেরে ফিরিয়ে যাচ্ছেন। অনেক বুথে ইভিএম মেশিনেও ত্রুটি দেখা দিয়েছে।

এছাড়াও ভোট কক্ষে দায়িত্বরত পোলিং অফিসার গোপন কক্ষে ভোটারদের সঙ্গে ঢুকতে দেখা গেছে। তবে তাদের দাবি- ‘ভোটাররা বুঝতে পারছে না। তাই তাদের দেখি দেয়ার জন্য সকল প্রার্থীর এজেন্টদের অনুমতি নিয়েই ঢোকা হচ্ছে। আমরা শুধু দেখিয়ে দিচ্ছি, ভোটাররা তাদের পছন্দমতো প্রতীকেই ভোট দিচ্ছেন।’

তবে গোপন কক্ষে তারা ঢুকতে পারেন কিনা? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে কোন সদোত্তর দিতে পারেননি তিনি। এ ঘটনায় ওই কেন্দ্রের ওই বুথে বেশ কিছুক্ষণ ভোটগ্রহণ বন্ধ হয়ে যায়। পরে প্রিজাইডিং অফিসার এসে ভোটগ্রহণ শুরু করেন। এছাড়াও কেন্দ্র ও কেন্দ্রের বাইরে বহিরাগতদের বেশ আনাগোনা দেখা গিয়েছে।

বুধবার (২৭ জুলাই) সকাল ১০টার দিকে আফড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পুন্ডুরিয়া দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্রসহ কয়েকটি কেন্দ্রে ঘুরে এ চিত্র পাওয়া গেছে।

ভোটগ্রহণ নিয়ে মোটামুটি সন্তুষ্টির প্রকাশ করেছেন ঘোড়া প্রতীকের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ও বিএনপি নেতা রইস উদ্দিন। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণ হচ্ছে। পুলিশ প্রশাসনও বেশ ইতিবাচকভাবে তৎপরতা চালাচ্ছেন। কিন্তু আমরা কেন্দ্রে ব্যাপক বহিরাগতদের দেখতে পাচ্ছি। আর বড় সমস্যা হচ্ছে- ইভিএমে ব্যাপক জটিলতা দেখা দিচ্ছে। অনেক ইভিএম নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অনেক ভোটার ইভিএমে ভোট দিতে পারছে না। ভোটের আগে তাদেরকে ঠিকমতো প্রশিক্ষণ দেয়া হয়নি। ফলে আজকে অনেক ভোটাররাই ভোট দিতে না পেরে ফিরে যাচ্ছেন।

এর আগে সকাল ৮টা থেকে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন-ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট শুরু হয়েছে, বিরতিহীনভাবে চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা হয়েছে গোটা ইউনিয়ন পরিষদ এলাকা। বিপুল পরিমাণ পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এক প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি মোতয়েন করা হয়েছে। এছাড়াও ইউনিয়নের পাড়া মহল্লায় টহল দিচ্ছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র‌্যাব ও ডিবি পুলিশ।

নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে বর্তমান চেয়ারম্যান হোসেন আলী বাগচী, স্বতন্ত প্রার্থী হিসেবে বিএনপি নেতা রউজ উদ্দিন ঘোড়া, ফিরোজ উদ্দিন মোটরসাইকেল এবং শামসুর রহমান শেখ আনারস প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়াও সাধারণ ও সংরক্ষিত ১২টি ওয়ার্ডে মোট ৫৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

ইউনিয়নটিতে মোট ভোটার রয়েছে ২৯ হাজার ৬২৬টি, এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৫ হাজার ৩৭৭ এবং মহিলা ভোটার রয়েছে ১৪ হাজার ২৪৯ জন। ৯টি কেন্দ্রে ৯৯টি ভোট কক্ষে ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন।

চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এটি পাবনা জেলার শেষ ইউপিতে ভোটগ্রহণ চলছে। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর থেকেই ভোটারদের মাঝে নানা শঙ্কা দেখা দিয়েছিল। প্রচার-প্রচারণাকে কেন্দ্র করে নৌকা প্রার্থীর পক্ষে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের আনাগোনা বেড়ে গিয়েছিল।  ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে স্বতন্ত্র চেয়াম্যান প্রার্থী ও তার এজেন্টদের হুমকি-ধামকি দেয়ারও অভিযোগ উঠেছে।

নির্বাচন নিয়ে  দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাচন অফিসার মোঃ মোজাম্মেল হক বলেন, নির্বাচনী পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রয়েছে। সহিংসতা বা প্রভাববিস্তারের চেষ্টা করা হলে কোনও প্রকারের ছাড় দেয়া হবে না। পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে।  নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠ করতে র‌্যাব,পুলিশের পাশাপাশি এক প্লাটুন বিজিবি টহলে অব্যাহত রয়েছে।

error: কাজ হবি নানে ভাই। কপি-টপি বন্ধ