কিছু কেন্দ্রে ভোট খরা, কিছু কেন্দ্রে ‘অস্বাভাবিক ভোট’

করোনা আর বন্যা পরিস্থিতির মধ্যেই বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) আসনে উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ আজ মঙ্গলবার সকাল নয়টায় শুরু হয়েছে। বেলা ১১টা পর্যন্ত প্রথম দুই ঘণ্টায় ব্যাপক ভোট খরা চলেছে।

তবে কোনো কেন্দ্রে অস্বাভাবিক ভোট পড়েছে। মিনিটে চারটির বেশি ভোট পড়ার ঘটনা ঘটেছে। যদিও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দাবি করছেন, সবকিছু স্বাভাবিক।

চরাঞ্চলের ১০টি কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তার সঙ্গে ফোনে কথা বলে জানা যায়, সে সব কেন্দ্রে প্রথম দুই ঘণ্টায় গড়ে ১০ শতাংশ ভোট পড়েছে। নির্বাচনী কর্মকর্তারা বলছেন, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটারদের উপস্থিতি বাড়বে।

সারিয়াকান্দি পৌরসভার ধাপ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে মোট ভোটার ২ হাজার ৯৪১ জন। বেলা সাড়ে ১১টায় আড়াই ঘণ্টায় সেখানে ভোট পড়েছে ৬৭৮টি। তাতে মিনিটে সারে চারটি ভোট দাঁড়ায়। অস্বাভাবিক এই ভোট সম্পর্কে কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ওয়ারেছ হোসেন দাবি করেন, সকালে ভোটারদের লাইন ছিল। সবকিছু স্বাভাবিক চলছে। তারপরও মিনিটে চারটির বেশি ভোট কীভাবে সম্ভব, এমন প্রশ্নে তিনি নিশ্চুপ থাকেন।

কেন্দ্রটিতে নৌকার এজেন্ট ছাড়া অন্য কাউকে দেখা যায়নি। একজন সাধারণ ভোটার বলেন, দলীয় লোকজন কেন্দ্রে ঢুকে একাধিক সিল মারছেন। একই ভোটার বারবার ঢুকছেন।

বিষয়টি নজরে আনলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রাসেল মিয়া বলেন, ‘কেন্দ্রটিতে আমি গিয়েছিলাম। অনিয়ম হলে খতিয়ে দেখব। আমি বিষয়টি দেখছি।’

সারিয়াকান্দির ফুলবাড়ী কুমিরউদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে মোট ভোটারের সংখ্যা ২ হাজার ২১৯ জন। সকাল সাড়ে নয়টায় এই কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ৫২টি। কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার সরকার বলেন, দুপুরের দিকে ভোটার বাড়বে। বিশেষ করে নারীরা সংসারের কাজ সেরে দুপুরে ভোট দিতে আসবেন।

একই উপজেলার আলেয়া জাহান মেমোরিয়াল বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্র বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। এই কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ চলছে পাশের যমুনা কিন্ডার গার্টেন স্কুলে। এখানে মোট ভোটার ৩ হাজার ৫৭৯ জন। বেলা ১১টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টায় ভোট পড়েছে ১৭৫টি।

বেলা ১১টায় যমুনা কিন্ডার গার্টেন স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, কেন্দ্রে ভোটারদের কোনো লাইন নেই। বিচ্ছিন্নভাবে এক-দুজন এসে ভোট দিচ্ছেন। কেন্দ্রে নৌকার এজেন্ট ছাড়া অন্য কোনো প্রার্থীর এজেন্ট নেই। প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ফারুক আহমেদ বলেন, ভোটারের লাইন নাই ঠিকই, কিন্তু বিচ্ছিন্নভাবে ভোট পড়ছে। দুপুরে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে।

সোনাতলা ও সারিয়াকান্দি উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৩০ হাজার ৮৯৩ জন। দুই উপজেলায় মোট কেন্দ্র ১২৩টি। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা হলেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ও সাবেক সাংসদ আবদুল মান্নানের স্ত্রী সাহাদারা মান্নান (নৌকা), জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোকছেদুল আলম (লাঙল), বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের প্রার্থী নজরুল ইসলাম (বটগাছ), বাংলাদেশ প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলের (পিডিপি) মো. রনি (বাঘ) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ইয়াসির রহমতুলল্লাহ (ট্রাক)। বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এ কে এম আহসানুল তৈয়ব জাকির (ধানের শীষ) এই ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন পর্যন্ত ৩ দফায় আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সাংসদ হন দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও প্রয়াত নেতা আবদুল মান্নান। গত ১৮ জানুয়ারি তাঁর মৃত্যুর কারণে আসনটি শূন্য হয়। নির্বাচন কমিশন ২৯ মার্চ ভোট গ্রহণের দিন ধার্য করে তফসিল ঘোষণা করে। ৯ মার্চ প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে প্রচারণা শুরু করেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা।

মার্চে দেশে করোনার সংক্রমণ দেখা দেওয়ায় প্রার্থীদের প্রচারে ছেদ পড়ে। ২১ মার্চ নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। করোনা ও বন্যার মধ্যে ১৪ জুলাই নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়ায় বিএনপি নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয়।

error: কাজ হবি নানে ভাই। কপি-টপি বন্ধ