করোনা ও লকডাউনের ধাক্কা পড়েছে পাবনার গবাদিপ্রাণির হাটগুলোতে। হাটে আমদানি, চাহিদা ও দাম কম হওয়ায় লোকসানের আশঙ্কায় খামারি, চাষি ও ব্যবসায়ীরা দিশেহারা।
এ ছাড়া এ বছর দেশে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ লাখ প্রাণী অবিক্রীত থাকার আশঙ্কা রয়েছে বলে বাংলাদেশ ডেইরি ডেভলপমেন্ট ফোরামের (বিডিডিএফ) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী, এবার ঈদুল আজহায় কোরবানির জন্য এক কোটি ১০ লাখ গবাদিপশু দরকার হবে। কিন্তু সারা দেশে এক কোটি ১৯ লাখ গরু-মহিষ, ছাগল, ভেড়া প্রস্তুত রয়েছে। অর্থাৎ সরকারি হিসাবেই চাহিদার তুলনায় ৯ লাখ প্রাণী বেশি।
সংশ্লিষ্ট দফতরের একটি সূত্র জানিয়েছে, সরকার এবার কোরবানিতে যে পরিমাণ প্রাণীর চাহিদা নিরূপণ করেছে, তা থেকে ২০-২৫ শতাংশের বেশি প্রাণী অবিক্রীত থাকবে। কারণ, ক্রেতাদের হাতে টাকা নেই।
বিশেষ করে গরু ব্যবসার সাথে জড়িত কয়েকজন ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, এবারের কঠোর লকডাউনে পাবনা সদরের হাজির হাট, আতাইকুলার পুষ্পপাড়াহাট, দাসুড়িয়াহাট, সাঁথিয়ার ধুলাউড়িহাট, বেড়ার সিঅ্যান্ডবি চতুরহাট, নাকালিয়া, নগরবাড়িহাট, চাটমোহরের অমৃতকুণ্ডা, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের তালগাছি, উল্লাপাড়ার গোয়ালিয়াহাট, গ্যাসেরহাট, তাড়াশ চলনবিল এলাকার নওগাঁহাট, চৌহালীর এনায়েতপুর হাট ও বেলকুচির সমেশপুর পশুরহাটগুলোতে কমসংখ্যক গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া আমদানি হচ্ছে। হাটে ক্রেতার সংখ্যা খুবই কম।
প্রতি বছরই পাবনা থেকে দেশের বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা গরু-মহিষ কিনে থাকে। এ বছর পাবনা অঞ্চলে দেশের বিভিন্ন জেলার সরবরাহের জন্য প্রস্তÍত রয়েছে প্রায় সাড়ে তিন লাখ গরু-মহিষ। লকডাউন উপেক্ষা করে হাটে গরু-ছাগল নিয়ে আসছেন অনেকে। কারণ কোরবানিতে বিক্রি করতে না পারলে তাদের বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি হবে। কিন্তু বিক্রি হচ্ছে খুবই কম।
বেড়া সিঅ্যান্ডবি চতুরহাট সরেজমিন দেখা যায়, হাটে গবাদিপশুর আমদানি কম। নসিমন, করিমন বন্ধ থাকায় দূর-দূরান্ত থেকে পায়ে হেঁটে গরু নিয়ে হাটে আসছেন অনেকে। বাস চলাচল বন্ধ থাকায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যাপারী ও পাইকাররা আসছে না।
সেলন্দা গ্রামের খামারি আজম খান তার খামারের সবচেয়ে বড় ষাঁড় গরুটি বিক্রি করতে হাটে নিয়ে এসেছেন। সাইফুল বলেন, দাম হাঁকিয়েছি তিন লাখ টাকা। স্থানীয় কিছু ক্রেতা ও ব্যাপারী দাম বলছে এক লাখ ২০ হাজার টাকা।
বেড়া উপজেলার পায়না গ্রামের আসাদুল্লা নামের গরু ব্যবসায়ী বললেন, গরু বিক্রি করতে না পারায় সংসার চালানো নিয়ে সমস্যায় পড়তে হবে।
এদিকে হাটগুলোয় সামাজিক দূরত্ব এবং স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। কয়েকটি হাটের ইজারাদার বলেছেন, সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে মাইকিং করা হচ্ছে। হাটে মাস্ক ব্যবহার করতে ক্রেতা-বিক্রেতাকে অনুরোধ করা হচ্ছে। কিন্তু কেউ কথা শুনছে না। হাটগুলো থেকেই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে বলে সচেতন মহল আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
বাংলাদেশ ডেইরি ডেভলপমেন্ট ফোরামের (বিডিডিএফ) সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন বলেন, আর্থিক সঙ্কটে দেশের ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ মানুষ এবার কোরবানি দিতে পারবে না। সব মিলিয়ে বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের দেশে যে গবাদিপশু আছে সেখান থেকেই প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ লাখ পশু এবার অবিক্রীত থাকার আশঙ্কা রয়েছে।