রূপপুর পারমানবিক প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক পরিচালক ড. শৌকত আকবর ফোনে জানান, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প দেশের অগ্রাধিকারভুক্ত একটি প্রকল্প। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতেও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের কাজ আগের মতো পুর্ণোদ্যমে চলমান রয়েছে। করোনা ভাইরাস যাতে এই প্রকল্পের কাজে কোন বাধা হতে না পারে সে জন্য সরকারি নির্দেশনা মেনে প্রকল্পের পক্ষ হতে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, প্রকল্প সাইটের সকল প্রবেশ পয়েন্টসহ অফিস বিল্ডিং এবং ক্যান্টিনে প্রবেশকালে কর্মীদের তাপমাত্রায় স্ক্যান করা হচ্ছে। সাইটের সকল স্থানে প্রতিদিনই পরিচালিত হচ্ছে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম। দেশী-বিদেশী সকল কর্মীকে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজেশন সরবরাহ করে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় সকল স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা হচ্ছে। চুক্তি অনুয়ায়ী নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে সকল ধরণের স্বাস্থ্য নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে।
প্রকল্পের সাইট ইনচার্জ রুহুল কুদ্দুস বলেন, প্রকল্পের প্রবেশ পথে একটি মেডিকেল ক্যাম্প বসানো হয়েছে। সেখানে প্রকল্পের নিজ্স্ব চিকিৎসক এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের লোকজন প্রকল্পে কর্মরত সকলের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছেন। প্রকল্প পরিচালকের নির্দেশে আমরা বিদেশীদের হোম কোয়ারেনটাইনের পূরণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, রাশিয়ার আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তায় দেশে প্রথম নির্মিত এই প্রকল্প ২০২৩ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা রয়েছে। ফলে করোনা শতর্কতা অবলম্বন করেই প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নেয়া হচ্ছে।
এদিকে রুশ রাষ্ট্রীয় পারমানবিক শক্তি কর্পোরেশন রসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচোভ এক বিবৃতিতে বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসজনিত পরিস্থিতিতে কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সাধারণ জনগনের জীবন ও স্বাস্থ্যকে সর্বাধিক প্রাধান্য দিয়ে জরুরী নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন। বিবৃতিতে বলা হয়, রাশিয়ার পারমানবিক বিদ্যুৎ স্থাপনাগুলোতে অতিরিক্ত যে সকল পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে তার মধ্যে রয়েছেঃ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, যথাসম্ভব বেশি সংখ্যক লোককে দূর থেকে কাজ করার সুযোগ প্রদান, প্রচুর পরিমানে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী ও হাইজিন পন্য সংগ্রহ, কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর বাতিল। এ ছাড়াও সকল স্থাপনা ও যানবাহনগুলোতে অব্যাহতভাবে জীবাণুমুক্ত কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। লিখাচোভ বলেন, করোনা সংকটকালেও বিদেশে নির্মানাধীন প্রকল্পগুলোর কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশের রোগ নিয়ন্ত্রন কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ঠ দেশের সরকারের নির্দেশনা বিশেষভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে।
রসাটমের বিবৃতিতে বলা হয়, রূপপুর প্রকল্পে সম্প্রতি যারা বিদেশ থেকে এসেছেন তাদেরকে প্রকল্প সাইডে প্রবেশের ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। এ ধরনের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন পালনের ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থাসহ জনসমাগম এড়িয়ে চলতে এবং গ্রীনসিটি থেকে বের না হবার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে রুশ কর্মকর্তা কর্মচারীদের।
সম্প্রতি যারা বিদেশ থেকে প্রকল্প এলাকায় আসছেন- তাদেরকে বিশেষ বাসে করে কর্মক্ষেত্রে যাতাযাতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অত্যাবশ্যক কাজের সাথে জড়িতনয়, এমন বাংাদেশীদের বাড়ীতে অবস্থান করতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, প্রকল্প এলাকায় ১শত৭৭ জন বিদেশী নাগরিককে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছিল। তাদের ভেতর বেলারসের এক নাগরিকের গলাব্যাথা ও জ্বরের উপসর্গ দেখা দেয়। প্রকল্পের কর্মরত চিকিৎসক ডা. সের্গেই মারজভস জানান, তিনি ওই ব্যাক্তির সাথে কথা বলেছেন। এর আগে ওই ব্যাক্তির গলায় অস্ত্রপাচারের ইতিহাস রয়েছে। এ কারনে তার গলা ব্যাথা হতে পারে ধারনা ছিল তার। তারপরেও স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের নজরদারীতে তাকে করোনা পরীক্ষার জন্য গত ২৬ মার্চ ঢাকাতে পাঠানো হয়েছিল। ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আ.ফ.ম আসমা খাতুন জানান, পরীক্ষায় বেলারুসের ওই ব্যাক্তির দেহে করোনা ভাইরাসের কোন লক্ষন পাওয়া যায় নাই।
রূপপুর পারমানবিক প্রকল্পে রাশিয়া, চীন, ইরান, ভারত বেলারুস সহ আটটি দেশের প্রায় দুই হাজার বিদেশী নাগরিক কর্মরত রয়েছেন। তাদের সাথে যূক্ত আছেন বাংলাদেশী শ্রমিকরাও।