ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাসুম বিল্লাহকে (৩৫) পুলিশের ওপর হামলা ও মাদক বহন করার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৮ জুলাই) বিকেল পৌনে চারটার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সরাইল উপজেলা সদরের কুট্টাপাড়া উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এই সময় মাসুম বিল্লাহর এক সহযোগীকেও গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাদের ছাড়িয়ে নিতে আওয়ামী লীগের এক নেত্রীসহ ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা থানায় ছুটে আসেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্র জানায়, মঙ্গলবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে সরাইল থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আলাউদ্দিন একজন কনস্টেবল নিয়ে কুট্টাপাড়া উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে ঢাকা–সিলেট মহাসড়কে অপেক্ষা করছিলেন। বিকেল চারটার দিকে মাসুম বিল্লাহ মোটরসাইকেল নিয়ে কুট্টাপাড়া উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় তাদের থামতে বলেন আলাউদ্দিন। এ সময় মোটরসাইকেল থামিয়ে নিজের রাজনৈতিক পরিচয় দিয়ে উত্তেজিত হয়ে পড়েন মাসুম বিল্লাহ। এ নিয়ে এএসআই আলাউদ্দিন ও ছাত্রলীগের নেতা মাসুম বিল্লাহর মধ্যে কথা–কাটাকাটি হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র আরও জানায়, কথা–কাটাকাটির একপর্যায়ে মাসুম বিল্লাহ এএসআই আলাউদ্দিনকে মারধর করতে থাকেন। এ সময় সেখানে আরও মানুষ জড়ো হতে থাকে। খবর পেয়ে বিকেল চারটার দিকে সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এম এম নাজমুল আহমেদ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মাসুম বিল্লাহ ও তার সহযোগী এনাম হককে (৩৫) আটক করে থানায় নিয়ে যান। এ সময় মাসুম বিল্লাহর ট্রাউজারের পকেট থেকে ছয় বোতল ফেনসিডিল জব্দ করে পুলিশ।
মাসুম বিল্লাহকে ছাড়িয়ে নিতে কিছুক্ষণের মধ্যে থানায় হাজির হন সরাইল উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রোকেয়া বেগম। এরপর আসেন অপর ভাইস চেয়ারম্যান আবু হানিফ। কিছুক্ষণের মধ্যে থানা চত্বর ও থানার আশপাশে অর্ধশতাধিক মোটরসাইকেল নিয়ে জড়ো হন নেতা–কর্মীরা। পুলিশকে হিমশিম খেতে হয় পরিস্থিতি সামাল দিতে। পুলিশ মোতায়েন করতে হয়েছে থানা চত্বরে। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত সরাইল থানার পুলিশ এ ব্যাপারে মুখ খুলেনি। সাড়ে ছয়টার পর পুলিশ এ ব্যাপারে কথা বলে।
তবে এ বিষয়ে সরাইল উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রোকেয়া বেগম রাতে বলেন, ‘অনেকে আমাকে ফোন করে বলেছে মাসুম বিল্লাহকে আটক করা হয়েছে। তাই তাকে দেখতে গিয়েছিলাম। আমি কোনো ব্যাপারে সুপারিশ করেনি।’
উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আবু হানিফ রাতে এ বিষয়ে বলেন, ‘আমার এক আত্মীয় ফোন দিয়ে ঝামেলার কথা বলে আমাকে থানায় নিয়ে যান। পরে মাদকের বিষয় জেনে চলে এসেছি। আমি কোনো সুপারিশ করিনি।’
ঘটনা সম্পর্কে এএসআই আলাউদ্দিন বলেন, ‘আমি মোটরসাইকেল থামানোর সংকেত দেওয়ার পর মোটরসাইকেল থামিয়েই মাসুম বিল্লাহ আমাকে মারধর করতে থাকেন। পরে স্থানীয় লোকজন আমাকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে থানার এক পুলিশ কর্মকর্তার কক্ষে মাসুম বিল্লাহ বলেন, ‘আমি পরিচয় দেওয়ার পরও তিনি (আলাউদ্দিন) আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছেন। এরপর তার সঙ্গে আমার হালকা হাতাহাতি হয়েছে।’
সরাইল থানার ওসি এ এম এম নাজমুল আহমেদ বলেন, মাসুম বিল্লাহ ও তার সহযোগী এনাম হকের বিরুদ্ধে সরাইল থানায় দুটি মামলা দায়েরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। এর মধ্যে একটি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ও অন্যটি সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে করা হচ্ছে।
সহকারী পুলিশ সুপার (সরাইল সার্কেল) মো. আনিছুর রহমান বলেন, মাসুম বিল্লাহ ও এনাম হক ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের মেড্ডা এলাকার বাসিন্দা। তাদের মধ্যে মাসুম বিল্লাহর বিরুদ্ধে বিজয়নগর থানায় একটি পুলিশের ওপর হামলা ও সদর মডেল থানায় দুটি মামলা রয়েছে।